সাধারণ স্কিন প্যাচে সক্রিয় নতুন জিন সুইচ, ডায়াবেটিস চিকিৎসায় সহায়ক হতে পারে

FacebookTwitterEmailShare

ETH-এর গবেষকরা এমন একটি নতুন জিন সুইচ তৈরি করেছেন যা বাজারে সহজলভ্য নাইট্রোগ্লিসারিন প্যাচ ব্যবহার করে সক্রিয় করা যায়। ভবিষ্যতে, গবেষকরা এই ধরনের সুইচ ব্যবহার করে বিভিন্ন বিপাকীয় রোগের জন্য কোষ থেরাপি সক্রিয় করতে চান।

মানবদেহের বিপাকীয় প্রক্রিয়া অত্যন্ত সূক্ষ্মভাবে নিয়ন্ত্রিত হয়। উদাহরণস্বরূপ, অগ্ন্যাশয়ের বিশেষায়িত কোষ রক্তে শর্করার মাত্রা পর্যবেক্ষণ করে। খাবার গ্রহণের পর রক্তে শর্করার পরিমাণ বেড়ে গেলে শরীর এটি নিয়ন্ত্রণে আনতে প্রয়োজনীয় সংকেত পাঠায়।

তবে ডায়াবেটিস আক্রান্ত ব্যক্তিদের ক্ষেত্রে এই স্বাভাবিক নিয়ন্ত্রণ প্রক্রিয়াটি সঠিকভাবে কাজ করে না। ফলে তাদের রক্তে অতিরিক্ত শর্করা জমে যায় এবং এটি নিয়ন্ত্রণে আনতে তাদের নিজ উদ্যোগে রক্তে শর্করার মাত্রা মাপতে হয় ও ইনসুলিন গ্রহণ করতে হয়। তবে এই পদ্ধতি শরীরের স্বাভাবিক নিয়ন্ত্রণ ব্যবস্থার তুলনায় অনেক কম কার্যকর।

কোষকে বিশেষ ক্ষমতা প্রদান
ETH জুরিখের বায়োটেকনোলজি ও বায়োইঞ্জিনিয়ারিং বিভাগের অধ্যাপক মার্টিন ফুসেনেগার এবং তার দল দীর্ঘদিন ধরে কোষ থেরাপি নিয়ে কাজ করছেন। তাদের লক্ষ্য হলো ডায়াবেটিসসহ অন্যান্য বিপাকীয় রোগের জন্য স্বতন্ত্র ও নির্ভুল চিকিৎসা পদ্ধতি তৈরি করা।

এই কোষ থেরাপির মূল প্রক্রিয়া হলো—গবেষকরা মানব কোষে বিশেষ জিন নেটওয়ার্ক স্থাপন করেন, যা কোষকে নির্দিষ্ট ক্ষমতা প্রদান করে। এরপর এসব কোষ শরীরে প্রতিস্থাপন করা হয় এবং নির্দিষ্ট বাহ্যিক সংকেতের মাধ্যমে সক্রিয় করা হয়।

উপযুক্ত সুইচের সন্ধান
গবেষকরা গত কয়েক বছরে বিভিন্ন ধরনের সুইচ তৈরি করেছেন। এর মধ্যে কিছু সুইচ বিদ্যুৎ, আলো, এমনকি ব্রিটিশ রক ব্যান্ড কুইনের সংগীত দ্বারা নিয়ন্ত্রিত হয়।

সম্প্রতি, তাদের গবেষণা Nature Biomedical Engineering সাময়িকীতে প্রকাশিত হয়েছে, যেখানে তারা নতুন ধরনের সুইচের বিবরণ দিয়েছেন। অধ্যাপক ফুসেনেগার বলেন, “এটি আমাদের তৈরি করা সবচেয়ে কার্যকর জিন সুইচ। কারণ এটি দীর্ঘদিন ধরে ব্যবহৃত নাইট্রোগ্লিসারিনের মাধ্যমে সক্রিয় হয়, যা একটি সাধারণ স্কিন প্যাচ ব্যবহার করে প্রয়োগ করা যায়।”

ফার্মেসিতে সহজলভ্য নাইট্রোগ্লিসারিন প্যাচটি ত্বকের মাধ্যমে দ্রুত শোষিত হয় এবং এটি ত্বকের নিচে স্থাপিত বিশেষ মানব কিডনি কোষসমৃদ্ধ একটি ইমপ্লান্টের সাথে ক্রিয়া করে।

নাইট্রিক অক্সাইড দ্বারা সুইচ সক্রিয়করণ
এই কোষগুলি নাইট্রোগ্লিসারিন গ্রহণ করে এবং একটি নির্দিষ্ট এনজাইমের মাধ্যমে এটিকে নাইট্রিক অক্সাইড (NO)-এ রূপান্তরিত করে। NO হলো শরীরে স্বাভাবিকভাবে বিদ্যমান একটি সংকেত প্রদানকারী অণু, যা রক্তনালী প্রসারণ ঘটিয়ে রক্তপ্রবাহ বৃদ্ধি করে। এটি দ্রুত ভেঙে যায়, ফলে কেবল নির্দিষ্ট স্থানে কার্যকর হয়।

সংশোধিত কোষগুলো NO-এর সংকেত গ্রহণ করে GLP-1 নামক রাসায়নিক মেসেঞ্জার উৎপন্ন ও মুক্ত করে। এটি ইনসুলিন নিঃসরণ বাড়িয়ে রক্তে শর্করার মাত্রা নিয়ন্ত্রণ করে এবং ক্ষুধা কমিয়ে খাদ্য গ্রহণ হ্রাস করে।

নতুন এই সুইচ সম্পূর্ণ মানব উপাদানে তৈরি, যা এটিকে অনন্য করেছে। অধ্যাপক ফুসেনেগার বলেন, “এর ফলে শরীরের স্বাভাবিক প্রক্রিয়ার সাথে কোনো ধরনের অসঙ্গতি বা অনাকাঙ্ক্ষিত প্রতিক্রিয়ার সম্ভাবনা নেই।”

নতুন যুগের চিকিৎসা সম্ভাবনা
ETH গবেষকেরা গত ২০ বছরে বিভিন্ন ধরনের জিন সুইচ তৈরি করেছেন, যার মধ্যে বিদ্যুৎ, শব্দতরঙ্গ এবং আলো দ্বারা নিয়ন্ত্রিত সুইচও রয়েছে। ভবিষ্যতে কোন ধরনের সুইচ সবচেয়ে কার্যকর হতে পারে?

ফুসেনেগার মনে করেন, বৈদ্যুতিক সংকেত ভিত্তিক সুইচ সবচেয়ে সম্ভাবনাময়, কারণ এগুলো স্মার্টফোন বা স্মার্টওয়াচের মাধ্যমে নিয়ন্ত্রণ করা যায় এবং কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তাও সংযুক্ত করা সম্ভব। তবে রাসায়নিক সুইচগুলোর মধ্যে নতুন এই নাইট্রোগ্লিসারিন ভিত্তিক সুইচকেই তিনি সবচেয়ে কার্যকর বলে মনে করেন।

কোষ থেরাপির উন্নয়ন দীর্ঘমেয়াদি ও ব্যয়বহুল একটি প্রক্রিয়া, যা বাজারে আনতে কয়েক দশক সময় লাগতে পারে। তবে গবেষকরা আশাবাদী যে, এটি কেবল ডায়াবেটিস নয়, বরং অন্যান্য বিপাকীয়, অটোইমিউন বা স্নায়বিক রোগের চিকিৎসার জন্যও ব্যবহার করা সম্ভব হবে।

ফুসেনেগারের ভাষায়, “অনেক ওষুধ সমস্যা সমাধানের জন্য অন্ধভাবে আঘাত হানে, কিন্তু কোষ থেরাপি শরীরের নিজস্ব পদ্ধতির মতোই সমস্যা সমাধান করে।”

Diabeteshealthhealth news