চল্লিশোর্ধ্ব জনগোষ্ঠীর সাড়ে ১২% ভুগছেন সিওপিডিতে

বাংলাদেশে মোট মৃত্যুর ৬৭ শতাংশ হয়ে থাকে অসংক্রামক রোগে। সংখ্যার হিসাবে বছরে ৫ লাখ ৭২ হাজার ৬০০। এর মধ্যে হৃদরোগে মৃত্যুর হার ৩০ শতাংশ, ক্যান্সারে ১২ শতাংশ, শ্বাসতন্ত্রের রোগে ১০ শতাংশ, ডায়াবেটিসে ৩ শতাংশ এবং অন্য অসংক্রামক রোগে ১২ শতাংশ। অসংক্রামক রোগের মৃত্যুর মধ্যে তৃতীয় অবস্থানে শ্বাসতন্ত্রের রোগ। প্রথম ও দ্বিতীয় অবস্থানে রয়েছে কার্ডিওভাস্কুলার ডিজিজ ও ক্যান্সার।

দেশে দিন দিন বেড়ে চলেছে শ্বাসতন্ত্রের ক্রনিক অবস্ট্রাক্টিভ পালমোনারি ডিজিজে (সিওপিডি) আক্রান্তের সংখ্যা। জরিপ বলছে, দেশের চল্লিশোর্ধ্ব জনগোষ্ঠীর ১২ দশমিক ৫০ শতাংশ শ্বাসতন্ত্রের জটিল এ রোগে ভুগছেন। আর বিশ্বের মোট জনগোষ্ঠীর ১৫ শতাংশ ধূমপায়ী এ রোগে আক্রান্ত। শুধু তাই নয়, দেশে অসংক্রামক রোগে মৃত্যুর মধ্যে তৃতীয় অবস্থানে রয়েছে সিওপিডি। সেইসঙ্গে বিশ্বব্যাপী মৃত্যুর ১০ প্রধান রোগের মধ্যেও এর অবস্থান ৩-এ।

আজ বুধবার বিশ্ব সিওপিডি দিবস। সারাবিশ্বে সিওপিডি সম্পর্কে জনসচেতনতা বাড়াতে ২০০২ সাল থেকে প্রতিবছর নভেম্বর মাসে তৃতীয় বুধবার বিশ্ব সিওপিডি দিবস পালন করা হয়। এ রোগ সম্পর্কে বিশেষজ্ঞ চিকিৎসকরা বলছেন, সিওপিডি দীর্ঘস্থায়ী রোগ। ধূমপায়ীদের মধ্যে এই রোগে আক্রান্তের হার প্রায় ২৫ শতাংশ এবং অধূমপায়ীদের মধ্যে এই সংখ্যা ৩ শতাংশের নিচে।

চলতি বছর প্রকাশিত স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের হেলথ বুলেটিনে বলা হয়, বাংলাদেশে মোট মৃত্যুর ৬৭ শতাংশ হয়ে থাকে অসংক্রামক রোগে। সংখ্যার হিসাবে সেটি বছরে ৫ লাখ ৭২ হাজার ৬০০। এর মধ্যে হৃদরোগে মৃত্যুর হার ৩০ শতাংশ, ক্যান্সারে ১২ শতাংশ, শ্বাসতন্ত্রের রোগে ১০ শতাংশ, ডায়াবেটিসে ৩ শতাংশ এবং অন্য অসংক্রামক রোগে ১২ শতাংশ মারা গেছে। অসংক্রামক রোগের মৃত্যুর মধ্যে তৃতীয় অবস্থানে রয়েছে শ্বাসতন্ত্রের রোগ। আর মৃত্যুর প্রথম ও দ্বিতীয় অবস্থানে রয়েছে কার্ডিওভাস্কুলার ডিজিজ ও ক্যান্সার।

বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয়ের (বিএসএমএমইউ) রেসপেরিটরি মেডিসিন বিভাগের চেয়ারম্যান অধ্যাপক ডা. মোহাম্মদ আতিকুর রহমান কালবেলাকে বলেন, শ্বাসতন্ত্রের জটিল রোগ সিওপিডি। এটা শ্বাসতন্ত্রের একটা অসুখ, যাতে নিঃশ্বাস নিতে অসুবিধা হয়। সময়ের সঙ্গে তা ধীরে ধীরে বাড়তে থাকে। এর ফলে কাশি, কফ, নিঃশ্বাসে শাঁ-শাঁ শব্দসহ নানা উপসর্গ দেখা দেয়।

ডা. মোহাম্মদ আতিকুর রহমান আরও বলেন, ধূমপানের সঙ্গে এই অসুখটি যুক্ত। যাদের এটা হয়, তাদের অনেকেই ধূমপান করেন বা এককালে করতেন। এ ছাড়া বাতাসের দূষণ, ধুলো, ধোঁয়া ইত্যাদি যা আমাদের ফুসফুসে প্রদাহের সৃষ্টি করে তাদের জন্যও এ রোগটি দেখা দিতে পারে।

২০১৮ সালে বিএসএমএমইউ রেসপিরেটরি মেডিসিন বিভাগ ঢাকাভিত্তিক একটি জরিপ চালায়। ২০১৯ সালের ২৮ নভেম্বর প্রকাশিত ওই জরিপের ফলাফল বলছে, ঢাকার ৩৫ বছরের বেশি বয়সীর মধ্যে প্রায় ১১ দশমিক ৪ শতাংশ মানুষ সিওপিডি রোগে আক্রান্ত। প্রতিবেদনের সুপারিশে বলা হয়, ধূমপান পরিহার ও পরিবেশ দূষণ রোধের মাধ্যমে সিওপিডি রোগ প্রতিরোধ করা সম্ভব। বর্তমানে মহিলা ধূমপায়ীদের সংখ্যা বৃদ্ধি পাচ্ছে—এটাও প্রতিরোধ করতে হবে। সিওপিডি রোগীদের সুচিকিৎসা নিশ্চিত করতে ধূপমান নিরাময় কেন্দ্র, এনসিডি (নন কমিউনিকেবল ডিজিজেস) কর্নার, পালমোনারি রিহ্যাবিলেটশন সেন্টার (ফুসফুসের রোগীদের পুনর্বাসন কেন্দ্র), রেসপিরেটরি আইসিইউ, রেসপিরেটরি ইমার্জেন্সি প্রতিষ্ঠা জরুরি। এ ছাড়া সিওপিডি প্রতিরোধে তামাকের চাষ ও উৎপাদন বন্ধ করতে হবে। সিগারেট ও তামাক কোম্পানিগুলো বন্ধ হলে সিওপিডিতে আক্রান্ত রোগীর সংখ্যা হ্রাস পাবে এবং একই সঙ্গে স্বাস্থ্য খাতের ব্যয়ও অনেকটা কমে আসবে।

বিশেষজ্ঞরা বলেছেন, সিওপিডি বড় ও ছোট উভয়ের হয়। শিশু বয়স থেকে অ্যাজমা হয়। প্রাপ্ত বয়সে এটা দীর্ঘমেয়াদি শ্বাসকষ্টে পরিণত হয়। শিশুদের শ্বাসকষ্টের প্রধান কারণ হলো সর্দিকাশি, নিউমোনিয়া, শিশু অ্যাজমা ও শিশু যক্ষ্মা। এগুলো শিশুদের শ্বাসনালির প্রধান রোগ। হাসপাতালে যাওয়া শিশু রোগীর ৫০ থেকে ৬০ শতাংশের মধ্যে শ্বাসনালির সমস্যা দেখা যাচ্ছে। আর ঢাকা মহানগরের ২৫ শতাংশ শিশু ভুগছে শ্বাসকষ্টের রোগে।

জানা গেছে, শ্বাসতন্ত্রের চিকিৎসা একটি চ্যালেঞ্জ। এ রোগের চিকিৎসার জন্য দেশে ৪০০ বক্ষব্যাধি বিশেষজ্ঞ আছেন, যা প্রয়োজনের তুলনায় কম। এ রোগের চিকিৎসাসেবা নিশ্চিতে রাজধানীসহ জেলা-উপজেলা পর্যায়ে বক্ষব্যাধির চিকিৎসকের সংখ্যা বাড়ানো এবং প্রয়োজনীয় ওষুধ ও যন্ত্রপাতি সরবরাহ বাড়াতে হবে।

 

health