একটি শিশুর কৃমির সমস্যা হলে স্বাভাবিকভাবেই সে তা মুখে বা অঙ্গভঙ্গিতে প্রকাশ করতে পারবে না এবং ভুগতে থাকবে। এক্ষেত্রে বাবা মা অথবা অন্য কোনো অভিভাবক হিসেবে আপনার ই দায়িত্ব আপনার আদরের শিশুটি ঠিক কি সমস্যায় ভুগছে তা খুঁজে বের করা এবং সে অনুযায়ী ব্যবস্থা নেয়া। যেকোনো সমস্যা বুঝতে পারার জন্য অবশ্যই প্রথমে আপনাকে এই সমস্যার কারনে প্রকাশিত লক্ষণ গুলোকে চিনতে হবে। এই ফিচারে সেরকম ই কিছু সাধারণ লক্ষণ বর্ননা করা হলো যা কৃমি দ্বারা আক্রান্ত শিশুদের মধ্যে বেশি দেখা যায়। এর দ্বারা সহজেই শিশুটি কৃমিতে ভুগছে কিনা বুঝতে পারবেন এবং দ্রুতই সঠিক চিকিৎসার ব্যবস্থা করতে পারবেন।
শিশুর কৃমির সমস্যা : যেসব লক্ষণ দেখা যায়
- পেটে ব্যাথা
- ওজন কমে যাওয়া
- বিরক্তি বা অস্বস্তি প্রকাশ
- বমি বমি ভাব
- মলের সাথে রক্ত যাওয়া
- বমি বা কাশি
- মলদ্বারের চারপাশে চুলকানি বা ব্যথা, এটি বিশেষ করে পিন ওয়ার্মের কারণে হয়ে থাকে
- ঘুমের সমস্যা
- মূত্রনালীর সংক্রমণ (ইউটিআই) এর কারণে বেদনাদায়ক এবং ঘন ঘন প্রস্রাব। এটি সাধারণত মেয়েদের মধ্যে বেশি দেখা যায়।
- অভ্যন্তরীণ রক্তপাত
- ডায়রিয়া এবং ক্ষুধামন্দা
- গুরুতর টেপওয়ার্ম সংক্রমণের কারণে খিঁচুনি হতে পারে।
- PICA বা অখাদ্য, অপুষ্টিকর জিনিস যেমন মাটি, চক, কাগজ ইত্যাদি খাওয়া কৃমির উপসর্গের আরেকটি লক্ষণ।
যে কারণে শিশুর কৃমি হয়
- সংক্রমিত মাটি : বাচ্চারা হুকওয়ার্ম, রাউন্ডওয়ার্ম, টেপওয়ার্ম এবং হুইপওয়ার্মের মতো কৃমি দ্বারা আক্রান্ত হওয়ার সবচেয়ে সাধারণ উপায় হচ্ছে মাটিতে খালি পায়ে হাটাহাটি করা। যদি কোনও সংক্রামিত ব্যক্তি মাটিতে মল ত্যাগ করে তবে তারা কৃমির ডিম জমা করে, যা পরে লার্ভাতে পরিনত হয়। লার্ভা ধীরে ধীরে পরিপক্ক হয়। শিশুরা খালি পায়ে হাঁটা বা সংক্রামিত মাটিতে হামাগুড়ি দেয়ার ফলে এই লার্ভা পায়ের ত্বকে প্রবেশ করতে পারে এবং শিশুটি কৃমি দ্বারা আক্রান্ত হয়।
- সংক্রমিত পানি : কিছু ধরনের কৃমি জলাশয়ে বংশবৃদ্ধি করে। এগুলো সাধারণত হ্রদ, বাঁধ এবং জলাশয়ে পাওয়া যায়। এই অঞ্চলে খেলা, গোসল বা সাঁতার কাটা এবং পানি পান করার মাধ্যমে শিশুদেহে কৃমির সংক্রমণ হতে পারে।
- কম রান্না করা বা সংক্রামিত খাবার : হুকওয়ার্ম, হুইপওয়ার্ম এবং রাউন্ডওয়ার্মের ডিমগুলো সাধারনত এমন গাছপালা এবং শাকসবজিতে থাকে যা মল দ্বারা দূষিত। তাই, এগুলো রান্নার আগে ভালভাবে ধোয়া হলে এই সবজি খেয়ে শিশুরা সহজেই সংক্রমিত হতে পারে। মাছ, গবাদি পশু, ভেড়া এবং ছাগলের মতো জল অঞ্চলে বসবাসকারী প্রাণীগুলিও টেপওয়ার্মের মতো কৃমির সংক্রমণে অসুস্থ হতে পারে। তাই মাংস এবং মাছ ভালভাবে রান্না করা না হলে সেগুলো কৃমি বহন করতে পারে।
শিশুর কৃমির সমস্যা হলে করণীয়
প্রায় সব ধরনের কৃমি সংক্রমণেই মৌখিক ওষুধ দিয়ে চিকিৎসা করা যেতে পারে। আপনার শিশুর কী ধরনের কৃমি সংক্রমণ হয়েছে তার উপর ভিত্তি করে ডাক্তার ওষুধ বা কৃমিনাশক চিকিৎসার পরামর্শ দেবেন। এছাড়াও শিশুটির রক্তশূন্যতা দেখা দিলে তার আয়রন সাপ্লিমেন্টেরও প্রয়োজন হতে পারে। সবসময়ই চেষ্টা করবেন শিশুকে পরিষ্কার পরিচ্ছন্ন স্থানে রাখা এবং নিজেরাও স্বাস্থ্যবিধি বজায় রেখে চলায়। শিশুর খাবার এবং পানি যেন সবসময়ই দূষণমুক্ত হয় সেদিকে বিশেষ খেয়াল রাখতে হবে।