মারাত্মক প্যাশন ছাড়া এই পেশায় নাম করা সম্ভব নয় কোনওমতেই। খুঁটিনাটি খোঁজ দিচ্ছে ১৯ ২০
গণমাধ্যম সংক্রান্ত যা-যা কেরিয়ার অপশন হতে পারে, তার মধ্যে সবচেয়ে বৈচিত্রপূর্ণ এবং সৃজনশীল অপশন বোধহয় এই ফিল্মমেকিং। সিনেমা মানে কিন্তু শুধুমাত্র বিনোদন নয়, সেইসঙ্গে জুড়ে থাকে আরও হাজারটা টেকনিক্যাল খুঁটিনাটি দিক। দেশ-বিদেশের সাংস্কৃতিক গণ্ডি মুছে দিতে পারে সিনেমাই। ফিল্ম মেকিং কেরিয়ারে ফিচার ফিল্ম বানানোর পাশাপাশি, ডকুমেন্টারি, নিউজ় রিল, প্রোমোশনাল ফিল্মস, টিভি কমার্শিয়াল্স, মিউজ়িক ভিডিয়োজ় ইত্যাদি হাজারও জিনিস শেখার এবং পরবর্তী জীবনে সেই নিয়ে কাজ করার অপশন থাকে। এই পেশায় নানা বিষয়ে স্কিল্ড মানুষজনের সঙ্গে দল বেঁধে কাজ করার ব্যাপার থাকে। ছবি যে ধরনেরই হোক, এই দলগত প্রচেষ্টাটা কিন্তু ফিল্মমেকিংয়ের ক্ষেত্রে মস্ত প্রয়োজনীয় একটা ফ্যাক্টর। মনে রাখতে হবে, ফিল্মমেকিং মানে কিন্তু প্রথম কাজ থেকেই নাম-যশ-খ্যাতির হাতছানি নয়, বরং এই পেশায় সবচেয়ে বেশি করে প্রয়োজন তীব্র প্যাশনের। এইধরনের কাজে সবার সঙ্গে মিলেমিশে কাজ করার ক্যাপা কি আছে তোমার? আছে, ফিল্মমেকিংয়ের খুঁটিনাটির প্রতি ফাটাফাটি প্যাশন? তাহলে জেনে নাও কীভাবে এগোবে এই পথে…
আরও একটু গৌরচন্দ্রিকা
ফিল্ম মেকিং কেরিয়ারের বিভিন্ন শাখার মধ্যে আছে অভিনয়, পরিচালনা, প্রযোজনা, চিত্রনাট্য লেখা, সিনেমাটোগ্রাফি, সাউন্ড রেকর্ডিং, ভিজ়ুয়াল মিক্সিং, এডিটিং ইত্যাদি আরও অনেককিছু। একজন চলচ্চিত্রনির্মাতাকে ছবি বানানোর সময় এই সমস্ত দিকগুলোর উপর নজর রাখতে হয়, ঠিক যেমনভাবে জাহাজের ক্যাপ্টেন নজরে রাখেন জাহাজচালনার কাজে তাঁর অধীনস্থ সমস্ত দপ্তর।
ভারতের মতো দেশ, যেখানে প্রতিবছর বিভিন্ন আঞ্চলিক ভাষায় প্রচুর সিনেমা মুক্তি পাচ্ছে, সেখানে দাঁড়িয়ে ফিল্মমেকিংয়ের পেশায় কাজের সুযোগ কিন্তু প্রচুর। গোড়াতেই সঞ্জয় লীলা বনশালির সিনেমার মতো সেট বানিয়ে এনে কোনও প্রযোজক তোমার পায়ে পড়ে ‘একটা সিনেমা পরিচালনা করে দিন দাদা!’ বলে হাউমাউ কাঁদবেন না, সেটা নিশ্চয়ই আমার বলার অপেক্ষা রাখে না? যে কোনও পেশার মতোই এখানেও এক্কেবারে তলা থেকে শুরু করে উপরে ওঠার মানসিকতা রাখতে হবে তোমাকে। এদেশে প্রতিবছর প্রচুর ছবি বানানো হচ্ছে যে বললাম, এই কথাটা অবিশ্বাস করার আগে মনে রাখতে হবে, ‘ছবি’ বলতে কিন্তু স্রেফ সিনেমাহলে মুক্তি পাচ্ছে এরকম সিনেমাগুলোর কথাই বলছি না। বরং এক্কেবারে গোড়ায় যে নানারকমের ছবির কথা বলেছিলাম, বলছি তার সবগুলোর কথাই।
ফিল্ম প্রোডাকশন
এই শাখায় থাকতে হলে একটা ছবির ম্যানেজমেন্টের খুঁটিনাটি সামলাতে হয়। কীরকম? যেমন ধরো, অর্থনৈতিক দিকগুলো, ফান্ডিং, বিভিন্ন কনট্র্যাক্ট সাইন করা, লোকজন, যন্ত্রপাতি কিংবা লোকলস্কর ভাড়া করে আনা, আর্টিস্টদের সঙ্গে দরদাম করা, টেকনিশিয়ান থেকে শুরু করে ফ্রিল্যান্সারদের সামলানোর পাশাপাশি বিভিন্ন আইনি দিক, যেমন কপিরাইট কিংবা লিগাল রাইটের ব্যবস্থা করা, ইনশিয়োরেন্সের ব্যবস্থা, বাজেট নির্ধারণ করা, পাবলিক রিলেশন এবং পাবলিসিটির দেখভাল করা, বিভিন্ন এজেন্সির সঙ্গে যোগাযোগ, ম্যানেজমেন্ট সামলানো, লোকেশন দেখা, কাজের দিনক্ষণ ঠিক করে ফেলা, মিটিং প্ল্যান করা, ডিস্ট্রিবিউটরদের সঙ্গে আলাপ-আলোচনা করা ইত্যাদি এরকম হাজারটা কাজ!
ফিল্ম ডিরেকশন
ফিল্মমেকিংয়ের সমস্ত সৃজনশীল দিকগুলোর সুতোই পরিচালকের হাতে। তিনি যেমন-যেমন সুতো ছাড়বেন, টানবেন, প্যাঁচ কষবেন, বাদবাকি টিম সেইমতো তালে তাল মিলিয়ে কাজ করবে, তবেই না তৈরি হবে ভাল ছবি! ছবির স্ক্রিপ্ট, চরিত্রায়ণ, লোকেশন, ক্যামেরা, সাউন্ড, শুটিং শিডিউল নির্ধারণ, কলাকুশলীদের নিয়ে রিহার্স করা ও তাঁদের পরিচালনা, মেকআপের সাতসতেরো, সবটাই প্রাথমিকভাবে পরিচালক ও তাঁর নিজস্ব টিম ঠিক করেন। স্ক্রিপ্টের দায়িত্বে যিনি বা যাঁরা থাকেন, চিত্রনাট্য লিখে ফেলার পাশাপাশি তাঁদের কাজ থাকে খুঁটিনাটি হাজারটা এটা-সেটা দিয়ে চিত্রনাট্য সাজানোর জন্য প্রয়োজনীয় গবেষণা সেরে রাখার। ক্যামেরার টিমের দায়িত্বে থাকে একটা ছবির সমস্তটার ভিজ়ুয়ালাইজ়েশন, ফিল্মিং, লাইটিং, কোন ‘টেক’-এর পর কোন ‘টেক’ নেওয়া হচ্ছে, তার ট্র্যাক রাখা, লগ শিডিউল মেইনটেন করার মতো কাজগুলো। সাউন্ড ডিপার্টমেন্টের কাঁধে থাকে সমস্তরকম সাউন্ড এফেক্ট, মিউজ়িক, মিক্সিং, রেকর্ডিং, ডাবিংয়ের মতো কাজগুলো।
কী বুঝলাম?
একটা ছবি তৈরি করা যে নিছক মুখের কথা নয়, বরং তার পিছনে থাকে প্রযোজক, পরিচালক, লেখক, চিত্রনাট্যকার, অভিনেতা-অভিনেত্রী, সিনেমাটোগ্রাফার, ক্যামেরাম্যান, সাউন্ড রেকর্ডিস্ট, সাউন্ড মিক্সার, কাস্টিং ডিরেক্টর, আর্ট ডিরেক্টর, মিউজ়িক ডিরেক্টর, লিরিসিস্ট, কোরিয়োগ্রাফার, স্টান্ট ডিরেক্টর, স্পেশ্যাল ম্যানেজার, কস্টিউম ডিজ়াইনার, চিফ হেয়ার স্টাইল ডিজ়াইনার, মেকআপ ডিরেক্টর, এডিটরের মতো প্রায় শ’দেড়েক-দু’য়েক মানুষের ঘাম-রক্ত-পরিশ্রম, সেকথাটা নিশ্চয়ই বোঝা গিয়েছে এতক্ষণে? যে কারণেই শুরুতে বারবার টিমওয়র্কের কথাটা বলছিলাম। একটা ছবি তৈরির সময় পছন্দমতো যে ডিপার্টমেন্টেই তুমি থাকো না কেন, ‘দশে মিলি করি কাজ’-এর বিশ্বাসে তুমি বিশ্বাসী না হলে এ লাইনে ভাই… হেঁ হেঁ… মুশকিলই আছে!
শিক্ষাগত যোগ্যতা
টেকনিক্যাল বিভিন্ন কোর্সের জন্য এই যোগ্যতা হল উচ্চমাধ্যমিক স্তর অবধি লেখাপড়া। অন্যান্য কোর্সে ভর্তির পরীক্ষায় বসার জন্য সবার প্রথমেই গ্র্যাজুয়েশন চাই। তারপর ভর্তির পরীক্ষায় অ্যাপটিটিউড টেস্ট ও ইন্টারভিউয়ের মাধ্যমে যাচাই করা হবে তোমার প্রতিভা। তোমার পছন্দের ইনস্টিটিউশন ও পছন্দের কোর্সের উপর নির্ভর করবে তোমার কোর্সের সময়সীমা কতটা হবে। স্পেশ্যালাইজ়েশন করতে পার প্রোডাকশন, ডিরেকশন, এডিটিং, সিনেমাটোগ্রাফি, ফিল্ম প্রসেসিং, অ্যানিমেশন, অ্যাক্টিং, সাউন্ড ইঞ্জিনিয়ারিং, মেকআপ, ফোটোগ্রাফি ইত্যাদি নানা শাখার যে কোনওটায়। স্পেশ্যালাইজ়েশনের প্রায় প্রতি শাখাতেই ডিপ্লোমা, পোস্ট ডিপ্লোমা এবং সার্টিফিকেট কোর্সও করার সুযোগ আছে।