শনিবার (৭ আগস্ট) ঢামেকের মর্গ চত্বরে দেখা গেছে, তার বাবা সেলিম তাকে বারবার বোঝাচ্ছেন- সে যেন তার নানী-খালার সঙ্গে না যায়। মাকে পরে বাড়িতে নিয়ে যাবে। মাঝে মধ্যে মেয়েকে ধমকও দিচ্ছেন। এদিকে উর্মিতার মরদেহ নিতে নিহতের মা ও বোন এসেছেন কিশোরগঞ্জ থেকে।
এরমধ্যেই উর্মিতার লাশ নিয়ে কিশোরগঞ্জ চলে যায় মা ও বোন। সিমুকে শেষপর্যন্ত মায়ের লাশের সঙ্গে যেতেই দেয়নি সেলিম।
উর্মিতার লাশ নিয়ে যাওয়ার ছোট্ট সিমু শুরু করে কান্না। গণমাধ্যম, পুলিশ কর্মীদের ভিড় বেড়ে যায়।
নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক সিআইডির এক কর্মকর্তা বলেন, সেলিমের দুই সংসার। বিয়ে করে কখনও সে উর্মিতাকে নিজের বাড়িতে নেয়নি। বাড়িতে বড় স্ত্রী।
উর্মিতা মারা যাওয়ার পর মেয়ে সিমু ছিল তার নানী ও খালার কাছে। ক্ষতিপূরণের টাকা পেতেই সেলিম মেয়েকে জোর করে তার কাছে নিয়ে আসে। সিমুর ভবিষ্যতের জন্য তার নানা-নানী ও খালাই ছিল নিরাপদ আশ্রয়। কারণ সেলিম আগেও তার মেয়ের দেখভাল করতো না। তার আয় রোজগারেরও ঠিক নেই। উর্মিতাই চাকরি করে সংসার চালাচ্ছিল।
লাশ নিয়ে যাওয়ার আগে উর্মিতার বোন রোজিনা বাংলা ট্রিবিউনকে বলেন, ‘আমরা বলছি, মেয়ে (সিমু) আমাদের কাছে থাকুক। কিন্তু সেলিম মেয়ে দিলো না। টাকার লোভে সে মেয়েকে আটকে রাখছে। এই ছোট মেয়ে সে কীভাবে রাখবে? আমরা তার দেখাশোনা করতাম। কিন্তু সে আমাদের প্রস্তাবে রাজি হয় না।’
লাশ কোন পক্ষ নেবে, এ নিয়ে আরও একটি পরিবারের কথা কাটাকাটি করতে দেখা গেছে। আমেনা খাতুন (৩০) নামের এক নিহত শ্রমিকের লাশ স্বামী রাজীবও নিতে চান, আবার আমেনার বাবা মোর্শেদও নিতে চান। পরে পুলিশ এসে স্বামীকেই লাশ দিয়েছে। তবে লাশ দাফনের জন্য জেলা প্রশাসনের দেওয়া ২৫ হাজার টাকা দিয়েছে বাবাকে।
রাজীব বাংলা ট্রিবিউনকে বলেন, ‘আমি চাই আমার স্ত্রীর কবর আমার বাড়িতে হোক। পাঁচবছরের একটা ছেলে আছে। সেও তার মায়ের কবর দেখতে পাবে। মাকে তো আর চেনা যাচ্ছে না, কবর চিনবে।’
পরে রাজীব তার স্ত্রীর লাশ নিয়ে যান কিশোরগঞ্জে। কোম্পানি থেকে দেওয়া দুই লাখ টাকা ছেলের নামে ফিক্সড ডিপোজিট করে রাখবেন বলেও জানান তিনি।
প্রসঙ্গত, রূপগঞ্জে সজীব গ্রুপের অঙ্গপ্রতিষ্ঠান হাসেম ফুড অ্যান্ড বেভারেজের সেজান জুস কারখানায় গত ৮ জুলাই বিকাল সাড়ে ৫টায় আগুনের সূত্রপাত হয়। কারখানার ছয়তলা ভবনটিতে তখন প্রায় ৪০০-এর বেশি কর্মী কাজ করছিলেন। কারখানায় প্লাস্টিক, কাগজসহ মোড়ক বানানোর প্রচুর সরঞ্জাম থাকায় আগুন মুহূর্তে ছড়িয়ে পড়ে সব ফ্লোরে।
প্রচুর দাহ্য পদার্থ থাকায় কয়েকটি ফ্লোরের আগুন নিয়ন্ত্রণে আনতে ফায়ার সার্ভিসের ১৮টি ইউনিটের ২০ ঘণ্টারও বেশি সময় লাগে। এ ঘটনায় মোট ৫২ জনের লাশ উদ্ধার হয়েছে