Site icon Mati News

কাসাভা চাষ ও উৎপাদনে সফলতা পাচ্ছে কুমিল্লার কৃষকরা

লালমাই পাহাড়ের বিস্তীর্ণ এলাকায় চাষ হচ্ছে ‘কাসাভা’। প্রথম দিকে সীমিত আকারে চাষ হলেও দিন দিন ব্যাপকহারে এ পাহাড়ে সম্প্রসারণ হচ্ছে কাসাভার চাষ। পাহাড় এলাকায় এটি ‘কাঠ আলু’ বা ‘ঠেংগা আলু’ নামে বেশ পরিচিত। বহু বছর ধরে পাহাড়ে চাষ হয় আলু জাতীয় এ উদ্ভিদটি। এটি বেকারি সামগ্রী এবং ওষুধ শিল্পের কাঁচামাল হিসেবে ব্যবহার করা হয়। সরকারি-বেসরকারি সমন্বিত উদ্যোগ ও পৃষ্ঠপোষকতা থাকলে কাসাভা চাষে লালমাই পাহাড়ের অর্থনীতি ও চাষিদের জীবনমান বদলে যেতে পারে বলে জানান কৃষিবিদরা।

কাসাভা চাষ

সরেজমিন গিয়ে দেখা যায়, লালমাই পাহাড়ের সালমানপুর, কোটবাড়ি, হাজীর খামার, জামমুড়া, লালমাইসহ বিভিন্ন এলাকায় কাসাভা চাষ ও ফসল তোলায় ব্যস্ত কৃষক। কৃষকের হাতের টানে লালমাটি থেকে উঠে আসছে খয়েরি রঙের কাসাভা। তা পরিষ্কার করে তুলে দেয়া হচ্ছে ট্রাকে। মূলত গাছের শিকড়টা কাসাভায় রূপান্তরিত হচ্ছে। লালমাই পাহাড়ের সদর দক্ষিণ উপজেলার জামমুড়া গ্রামের কৃষক জাহিদ হোসেন বাসসকে বলেন, তার বংশধররা কয়েক যুগ ধরে এখানে কাসাভা চাষ করে আসছেন।

তিনি এ পাহাড়ে ১৪ বছর ধরে কাসাভা চাষ করছেন। এ বছর ৫২ একর জমিতে কাসাভা চাষ করেছেন। প্রতি একরে ২৫ হাজার টাকার মতো খরচ হয়েছে। ভালো ফলন হলে প্রতি একরের ফসল ৩০ হাজার টাকায় বিক্রি করতে পারেন। তিনি আরো বলেন, লালমাই পাহাড়ে কাসাভার ভালো ফলন হয়।

তবে এর ক্রেতা কম। এক-দুটি কোম্পানি এ ফসল সংগ্রহ করে। কোম্পানি যে দাম দেয় তা নিয়েই তাদের সন্তুষ্ট থাকতে হয়। লালমাই এলাকার কৃষক কামাল হোসেন ও সাইফুল ইসলাম বাসসকে বলেন, তারা আগে সবজি চাষ করতেন। রোগবালাইয়ের কারণে ফসল কম হতো। এখন কাসাভা চাষ করছেন।

এ ফসলের রোগবালাই কম। কান্ড থেকে নতুন গাছ হয়। সার ও সেচ কম লাগায় পুঁজিও কম লাগে এবং অধিক লাভ হয়।

কৃষি বিভাগের সূত্র জানায়, প্রতি একর জমি থেকে ৬-৭ টন কাসাভা পাওয়া যায়। কাসাভা দিয়ে গ্লুকোজ, বার্লি, সুজি, রুটি, নুডলস, ক্র্যাকার্স, কেক, পাউরুটি, বিস্কুট, পাপড়, চিপসসহ নানা খাদ্য তৈরি করা যায়। এছাড়াও কাসাভা থেকে উৎপাদিত স্টাচের (মাড়) ব্যবহার হয় বস্ত্র ও ওষুধ শিল্পে। এর পাতা ও অবশিষ্ট অংশ দিয়ে জৈবসার তৈরি হয়। পোশাক শিল্প, ওষুধ শিল্প এবং খাদ্য প্রক্রিয়াজাতকরণ শিল্পে প্রতি বছর সাড়ে ৩ লাখ টন স্টার্চ প্রয়োজন। কিন্তু দেশে বছরে উৎপাদন হয় মাত্র ৫ থেকে ৬ হাজার টন। বাকিটুকু ভারত, থাইল্যান্ড ও ভিয়েতনামসহ বিভিন্ন দেশ থেকে আমদানি করা হয়।

কুমিল্লা সদর দক্ষিণ উপজেলার উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা মো. মহিউদ্দিন মজুমদার বাসসকে বলেন, লালমাই পাহাড়ে কাসাভার ভালো ফলন হয়। কাসাভা গাছের কান্ড ছোটো ছোটো টুকরো করে রোপণ করা হয়। এর আট-নয় মাস পর মাটি খুঁড়ে তোলা হয় আলু। কাসাভার গাছের মূলই আলু হিসেবে ব্যবহার হয়। এটি গ্লুকোজ, বার্লি, সুজি, চিপসসহ বেকারিসামগ্রী এবং ওষুধ শিল্পের কাঁচামাল হিসেবে ব্যবহার করা হয়। তিনি বলেন কৃষি বিভাগের ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের সঙ্গে এ বিষয়ে কথা বলে চাষিদের কিভাবে সহযোগিতা ও সচেতন করা যায় সে বিষয়ে উদ্যোগ নেওয়া হবে।

Exit mobile version