ছাগল পালনের টিপস | ছাগল পালন করবেন কীভাবে

গৃহপালিত পশুর মধ্যে ছাগল পালন হতে পারে একটি লাভজনক ব্যবসা। বাংলাদেশের আবহাওয়া ছাগল পালনের জন্য খুবই উপযোগী। যে কোন চারণভূমি, খেতের আইল বা রাস্তার ধারের গাছ লতা পাতা খেয়ে ছাগল জীবন ধারন করতে পারে। কাজেই একটু সতর্কতার সাথে ছাগল পালন করলেই হওয়া যাবে একজন সফল ব্যবসায়ী। আর নতুন করে যারা শুরু করতে চান, তাদের জন্য রইল ছাগল পালনের টিপস ।

 

ছাগলের জাত বাছাই

ছাগল পালনের জন্য এ তিনটি জাত বেশ কাজের

১. ব্যাক বেঙ্গল ছাগল

২. যমুনাপারী ছাগল

৩. বিটাল জাতের ছাগল

 

ছাগল পালনের টিপস -১ : পদ্ধতি

সাধারনত ৪ পদ্ধতিতে ছাগল পালন করা যায়।

১. আঙিনায় বা খোলা মাঠে বেধেঁ ছাগল পালন:

এ পদ্ধতিতে সাধারনত ৩-৫ টি ছাগল পালন করা হয়ে থাকে। এ পদ্ধতিতে ছাগল পালন সবচেয়ে সুবিধাজনক। কারন এ পদ্ধতিতে ছাগল কে কোন আলাদা ঘাস সরবরাহ করার দরকার হয় না। সাধারনত ‍কৃষক সকাল বেলা ছাগল নিয়ে বের হয়, কোন মুক্ত ভূমিতে ছেড়ে দেয়। ছাগল নিজে নিজে চরেই ঘাস খায়। তবে ছাগলের উৎপাদন ভালো পেতে হলে আলাদা খাদ্যের ব্যবস্থা করতে হয়।

২. মুক্তভাবে ছাগল পালন:

এ পদ্ধতিতে সাধারনত ৮-১০ টি ছাগল পালন করা হয়ে থাকে। সাধারনত একটু বড় কোন স্থানে চারপাশে বেড়া দিয়ে ঘের দিয়ে ছাগল পালন করা হতে পারে। যেখানে ছাগল পালন করা হয় সে স্থানের ঘাস খেয়েই ছাগল জীবন ধারন করে থাকে তাই আলাদা কোন খাদ্যের প্রয়োজন হয় না। সাধারনত চর এলাকায় এ পদ্ধতিতে ছাগল পালন লাভজনক বেশি।

৩. আধা নিবিড় পদ্ধতিতে ছাগল পালন

আধা নিবিড় পদ্ধতিতে সাধারনত ১৫-২০ টি ছাগল পালন করা যায় একসাথে। এখানে দিনের বেলা ছাগলকে মুক্তভাবে চড়তে দেয়া হয় আর রাতের বেলা ঘরে এনে রাখা হয়। এই পদ্ধতিতে ছাগলকে বাড়তি খাদ্য দেয়া হয়। ছাগলের সঠিক যত্ন নেয়া হয় তাই এই পদ্ধতিতে ছাগলের উৎপাদন খুব ভালো হয়।

৪. নিবিড় পদ্ধতিতে ছাগল পালন

এই পদ্ধতিতে ছাগলকে খামারে পালন করা হয় আবদ্ধ অবস্থায়। ছাগলের সংখ্যা হয় খামারের ব্যবস্থাপনা অনুযায়ী। বাণিজ্যিক ভিত্তিতে পালন করা হয় বলে ছাগলের পুষ্টি, প্রজনন, রোগ বালাই সবদিকে সচেতন দৃষ্টি রাখা হয়।

তবে আমাদের দেশের ছাগল সবসময় আবদ্ধ স্থান পছন্দ করে না। তাই মাঝে মাঝে মুক্ত স্থানে ছেড়ে দেওয়া উচিত। আর একদম বাচ্চা অবস্থা থেকে যদি আবদ্ধ অবস্থায় অভ্যাস করা হয়ে থাকে তাহলে কোন সমস্যা হয় না।

 

ছাগল পালনের টিপস -২ : ছাগলের বাসস্থান

ছাগলের ঘর একটু উঁচু ও শুকনা স্থানে করা উচিত। ছাগলের ঠান্ডাজনিত সমস্যা বেশি হয় তাই ছাগলের ঘর এমন জায়গায় হওয়া উচিত যেখানে শীতকালে উত্তুরে হাওয়া বেশি না আসে। সাধারনত মাচা দিয়ে তৈরি ঘর ছাগলের জন্য বিশেষ উপযোগী। ঘরে প্রচুর আলো বাতাসের ব্যবস্থা থাকতে হবে। ঘর সবসময় শুকনা থাকতে হবে। পূর্ব পশ্চিম দিকে লম্বা করে এবং দক্ষিণ দিকে খোলা রেখে ঘর তৈরি করতে হবে। ঘরের চারপাশে ছাগলের খাদ্য উপযোগী গাছপালা লাগাতে হবে।

বাসস্থান তৈরির আগে অবশ্যই মাপ দিয়ে নিতে হবে। একটি প্রাপ্ত বয়স্ক ছাগলের জন্য ১-১.৫ বর্গ মিটার বা ১০-১৫ বর্গ ‍ফুট জায়গা দরকার হয়। এছাড়া বাড়ন্ত বাচ্চা ছাগলের জন্য দরকার হয় ০.৩-০.৮ বর্গ মিটার বা ৩-৮ বর্গ ফুট।

মাচায় ছাগল পালনের জন্য ঘরের ভিতর বাঁশ বা কাঠের মাচা তৈরি দিতে হবে। মাচার উচ্চতা হবে ১ মিটার এবং মাচা থেকে ছাদের উচ্চতা হবে ৬-৮ ফুট। মাচার নিচ থেকে দুই পাশ ঢালু রাখতে হবে যাতে বর্জ্য পদার্থ মাচা থেকে নিচে পড়তে পারে। ঘরের মেঝেতে বালি দিতে হবে। বৃষ্টির পানি যেন কোনভাবেই ছাগলের ঘরে না ঢোকে সেদিকে খেয়াল রাখতে হবে। শীতকালে মাচার উপরে চট দিয়ে ঢেকে দিতে হবে যাতে ছাগলের ঠান্ডা না লাগে।

আরও পড়ুন: গরুর রোগ ও তার প্রতিকার | গরুর রোগের চিকিৎসা

ছাগল পালনের টিপস -৩: ছাগলের খাদ্য ব্যবস্থাপনা

ছাগলকে পুষ্টিকর খাদ্য খাওয়াতে হবে। শর্করা জাতীয় খাদ্য যেমন ভুট্টা, গম, ভূষি ইত্যাদি। আমিষ জাতীয় খাদ্য যেমন সয়াবিন খৈল, তিল খৈল,শুটকিমাছ ইত্যাদি। স্নেহ জাতীয় খাদ্য যেমন প্রাণীজ ফ্যাট বা ভেজিটেবল ওয়েল, ভিটামিন জাতীয় খাদ্য যেমন শাকসবজি , খনিজ জাতীয় খাদ্য যেমন শামুক, ঝিনুক, রকসল্ট ইত্যাদি দিতে হবে।

 

 

কৃষিকৃষি টিপসগবাদিপশুছাগলছাগল পালনের টিপস