বাংলাদেশে মিষ্টি আলুর উৎপাদনে নতুন বিপ্লব

FacebookTwitterEmailShare

সিদ্ধার্থ চক্রবর্তী:

বাংলাদেশের অন্যতম প্রধান খাদ্য ফসল মিষ্টি আলু। পুষ্টিগুণে ভরপুর এই ফসল ভাতের বিকল্প হিসেবে শর্করার চাহিদা পূরণে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখে। তবে স্থানীয় জাতের উৎপাদন ব্যয় বেশি হওয়ায় এবং বাজারে ন্যায্যমূল্য না পাওয়ায় কৃষকদের আগ্রহ কমে যাচ্ছিল মিষ্টি আলু চাষে।

একদিন অধ্যাপক এ বি এম আরিফ হাসান খান ও তার গবেষক দল সিদ্ধান্ত নিলেন, মিষ্টি আলুর উৎপাদন বাড়াতে হবে। কৃষকদের মুখে হাসি ফোটানোর জন্য দরকার একটি উচ্চ ফলনশীল, রোগ প্রতিরোধী এবং লাভজনক জাত। শুরু হলো গবেষণা, এবং তারই ফলাফল—বাউ মিষ্টি আলু-৫।

গবেষকরা যখন ঘোষণা দিলেন যে তারা একটি নতুন জাত উদ্ভাবন করেছেন, তখন কৃষকদের কৌতূহল বেড়ে গেল। অধ্যাপক খান জানান, বাউ মিষ্টি আলু-৫ সাধারণ আলুর চেয়ে তিন গুণ বেশি ফলনশীল এবং প্রতিটি গাছে এক থেকে দেড় কেজি পর্যন্ত আলু ধরে। ৯০ দিনের মধ্যেই ফলন পাওয়া যায় এবং এটি সারা বছর চাষযোগ্য।

ময়মনসিংহ, শেরপুর, কিশোরগঞ্জ, ফরিদপুর, রাজবাড়ী, টাঙ্গাইল ও খুলনার কিছু কৃষক প্রথমবারের মতো বাউ মিষ্টি আলু-৫ চাষ করলেন। ময়মনসিংহের কৃষক হাসান বললেন, ‘আমরা প্রতি ১০ বর্গ মিটারে ৩০ কেজি পর্যন্ত ফলন পেয়েছি! আগে যেখানে প্রতি গাছে ৭০০-৭৫০ গ্রাম আলু পেতাম, এখন ১২০০-১৫০০ গ্রাম পাচ্ছি। এটা এক কথায় অবিশ্বাস্য!’

অন্য কৃষকরা জানালেন, আগে উৎপাদন ব্যয় বেশি হওয়ায় তারা চাষ ছেড়ে দিয়েছিলেন। কিন্তু এই নতুন জাত এত বেশি উৎপাদন দিচ্ছে যে তারা আবার মিষ্টি আলু চাষে ফিরেছেন। ফুলপুরের মনু মিয়া খুশি হয়ে বললেন, ‘প্রতি গাছে ২০০-৩০০ গ্রাম ওজনের ৬-৭টি আলু পেয়েছি। এটা আমাদের জন্য বড় সাফল্য!’

গবেষণা দলের সদস্য মুন মোদক জানালেন, বাউ মিষ্টি আলু-৫-এর তিনটি রঙ রয়েছে:

কমলা রঙের আলুগাজরের বিকল্প হিসেবে সালাদে ব্যবহার করা যায়।

বেগুনি রঙের আলুপুড়িয়ে খেলে দারুণ স্বাদ পাওয়া যায়। বিশেষ করে এতে গ্লুকোজ ও সুগারের পরিমাণ বেড়ে যায়।

ক্রিম রঙের আলু: সবজি হিসেবে রান্না করা যায়, আবার পুড়িয়েও খাওয়া যায়।

অধ্যাপক খান বলেন, বাউ মিষ্টি আলু-৫ সারা বছর চাষ করা সম্ভব। তবে রবি মৌসুমে (১৬ অক্টোবর থেকে ১৫ মার্চ) ফলন সবচেয়ে ভালো হয়। চারা রোপণের জন্য নভেম্বরের শেষের সময়টা সবচেয়ে উপযুক্ত এবং মার্চের শেষের দিকে উত্তোলন করলে ফলন সর্বোচ্চ পাওয়া যায়।

যদিও এই জাতটি কৃষকদের জন্য আশীর্বাদস্বরূপ, কিছু প্রতিকূলতা থেকেই যায়। রোগ সংক্রমণ ও ইঁদুরের উৎপাত উৎপাদনে প্রভাব ফেলতে পারে। তবে সঠিক পরিচর্যার মাধ্যমে হেক্টরপ্রতি গড়ে ৩৩ টন উৎপাদন সম্ভব।

বাউ মিষ্টি আলু-৫ শুধুমাত্র একটি নতুন জাত নয়, এটি বাংলাদেশের কৃষিক্ষেত্রে নতুন বিপ্লবের প্রতীক। অধিক ফলন, সহজ চাষাবাদ এবং পুষ্টিগুণে সমৃদ্ধ হওয়ায় এটি বাংলাদেশের কৃষকদের জন্য নতুন সম্ভাবনার দুয়ার খুলে দিয়েছে। কৃষকরা এখন নতুন আশায় বুক বাঁধছেন—এই আলু তাদের স্বপ্ন পূরণ করবে!

*********

সিদ্ধার্থ চক্রবর্তী, 

শিক্ষার্থী, বাংলাদেশ কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়। 

কৃষিক্যাম্পাস