কী নেই জব্বারের বলীখেলা ও বৈশাখী মেলায়

কী নেই জব্বারের বলীখেলা ও বৈশাখী মেলায়

বলা হয়, চিরুণি থেকে ফুলদানি সবই পাওয়া যায় জব্বারের বলীখেলা ও বৈশাখী মেলায়। আক্ষরিক অর্থেই তাই। কী নেই শতবর্ষী বলীখেলাকে ঘিরে আয়োজিত এই বৈশাখী মেলায়! খাট পালঙ্ক থেকে শুরু করে আসবাব পণ্য, সাজসজ্জা সরঞ্জাম, গৃহস্থালি, কাপড়, কসমেটিক্স, বাঁশ ও বেতের ঝুড়ি, পিঠাপুলি, আচার এমন আরও বাহারি পণ্যের পসরা সাজিয়ে দোকানীরা দখল নিয়েছে নগরের লালদিঘি ময়দানের আশেপাশের অন্ততঃ এক কিলোমিটার এলাকা। ফলে গৃহিণীরাও এক জায়গা থেকে গৃহস্থালি পণ্য কেনার জন্য সারা বছর ধরে এই মেলারই অপেক্ষায় থাকেন।

মেলা মানেই লোকাচারের প্রতিচ্ছবি। বৈশাখ মাসে লোক উৎসবের ক্ষেত্রে নগর চট্টগ্রামের সবচেয়ে বড় আয়োজন লালদিঘি মাঠের ঐতিহাসিক আবদুল জব্বারের বলীখেলা। এই বলীখেলার অন্যতম বৈশিষ্ট্য স্বয়ংসম্পূর্ণ লোকজ মেলার। বলীখেলা শুরুর প্রায় এক সপ্তাহ আগে থেকে চট্টগ্রামের বিভিন্ন অঞ্চল ও দেশের বিভিন্ন জেলা থেকে ব্যবসায়ীরা তাদের পসরা নিয়ে হাজির হন লালদিঘি মাঠে।

তিন দিনব্যাপী বৈশাখী মেলা গতকাল বুধবার থেকে শুরু হয়েছে। প্রথমদিনেই বৈশাখের তপ্ত গরমকে উপেক্ষা করে বিকেলে নগরের উত্তর কাট্টলী থেকে মেলায় এসেছেন স্কুল শিক্ষক তপতী রাণী ও তাঁর সহকর্মী উম্মে সুলতানা। লালদিঘি এলাকার সোনালী ব্যাংকের করপোরেট ব্রাঞ্চের ঠিক আগে রাস্তার পাশে বসা দোকানে ফুলের ঝাড়ু নেড়েচেড়ে দেখছিলেন। জানতে চাইলে দুজনেই বলেন, ‘এই মেলায় যে ফুলের ঝাড়ু পাওয়া যায় তা বছরের অন্যসময় কোথাও পাওয়া যায় না। মান ও কার্যকারিতায় এই মেলায় উঠা ঝাড়ুগুলোই সবচেয়ে কার্যকরী। তাই বছরের পুরোসময় যে পরিমাণ ঝাড়ু লাগতে পারে তা এখান থেকেই কেনেন প্রতিবছর।’ একই সঙ্গে সংসারের আরও কিছু টুকিটাকি জিনিস কিনবেন বলে স্কুল ছুটির পর সরাসরি মেলায় চলে এসেছেন।

 

সিনেমা প্যালেস বাস কাউন্টারের সামনে মাটির তৈরি রকমারি ফুলদানি দেখছিলেন রেশাদ ইসলাম ও সামিনা দম্পতি। সদ্য বিবাহিত এই জুটি নিজেদের সংসার সাজানোর জন্য নানা ডিজাইনের মাটির সামগ্রী কিনতে এসেছেন মেলায়। গতকাল মেলায় আসা প্রসঙ্গে তিনি বলেন, ‘প্রথমদিনে একটু ভিড় কম থাকে। পরের দুদিন এখানে হাঁটাও যাবে না। তাই আজকেই ভিড় শুরু হওয়ার আগেই প্রয়োজনীয় জিনিস কিনতে এসেছি। জব্বারের বৈশাখী মেলায় এমন কিছু আনকমন আইটেম পাওয়া যায় যা বছরের অন্যসময় পাওয়া যাবে না।’

 

তবে মেলা শুরু হয়ে গেলেও প্রথমদিনে তেমন বেচাবিক্রি নেই বলে জানালেন দেশের বিভিন্ন প্রান্ত থেকে আসা ব্যবসায়ীরা। গত ১৫ বছর ধরে খাট, চৌকি, শেলফসহ বিভিন্ন আসবাবপত্র নিয়ে জব্বারের বৈশাখী মেলায় আসেন চাঁদপুরের ব্যবসায়ী মোহাম্মদ বেলাল। এক ট্রাক আসবাব নিয়ে ছেলে ইয়াসিনসহ ৪ জন ২২ এপ্রিল সিনেমা প্যালেস পুলিশ বক্সের সামনে নিজেদের আস্তানা গেড়েছেন বেলাল। গতকাল বিকেলে কথা হয় পঞ্চাশোর্ধ্ব মোহাম্মদ বেলালের সঙ্গে। জানালেন, ‘কারখানা চাঁদপুরে হলেও সারাদেশে মূলতঃ মেলা ঘুরে ঘুরে তিনি আসবাব বিক্রি করেন। জব্বারের বলীখেলা ও বৈশাখী মেলায় সাধারণত সঙ্গে আনা আসবাব ফেরত নিতে হয় না। মেলাতেই বিক্রি হয়ে যায়। তবে এবার এখনও বিক্রি শুরু হয়নি। আশা করছেন শেষ দুদিনেই মেলা জমে উঠবে।’

 

এবারের শতবর্ষী জব্বারের বলীখেলা ও বৈশাখী মেলার ১১০তম আয়োজন। তিন দিনব্যাপী মেলা বুধবার শুরু হলেও মূল আকর্ষণ বলীখেলা হবে আজ বৃহস্পতিবার। ইতোমধ্যে ৭০ থেকে ৮০ জন বলী নাম নিবন্ধন করেছেন বলে জানিয়েছেন মেলা আয়োজক কমিটির সভাপতি ও স্থানীয় ওয়ার্ড কাউন্সিলর জহরলাল হাজারী। তবে এর অধিকাংশই শৌখিন বলী। পেশাদার বলীরা মূলতঃ দেশের বিভিন্ন প্রান্ত থেকে আজ সকালে এসে নাম নিবন্ধন করবেন তিনি জানান।

 

উল্লেখ্য, চট্টগ্রামে প্রচলিত এই বলীখেলার প্রবর্তক ছিলেন আব্দুল জব্বার সওদাগর। তাঁর নামানুসারে একে জব্বারের বলীখেলা বলা হয়। আবদুল জব্বার ছিলেন নগরের বদরপাতি এলাকার প্রভাবশালী সমাজসেবক ও বিশিষ্ট ব্যবসায়ী। ব্রিটিশবিরোধী আন্দোলনে দেশের যুবসমাজকে সংগঠিত, প্রেরণা দেওয়া এবং সংগ্রামী করে গড়ে তোলার লক্ষ্যে এটির প্রবর্তন করেন তিনি। বাংলা ১৩১৫ সনের ১২ বৈশাখ আবদুল জব্বারের বলীখেলার প্রথম আসর বসে। নগরের লালদিঘি মাঠে প্রতি বছরের ১২ বৈশাখ এ খেলা অনুষ্ঠিত হয়।

 

জব্বারের বলীখেলা