জাতীয় রোগী কল্যাণ সোসাইটির উদ্যোগে রমজানের তাৎপর্য শীর্ষক আলোচনা সভা ও ইফতার মাহফিল

পবিত্র রমজানুল মোবারক উপলক্ষে গতকাল রোববার জাতীয় রোগী কল্যাণ সোসাইটি চট্টগ্রাম জেলা শাখার পক্ষ থেকে চিকিৎসা বিজ্ঞানের আলোকে মাহে রমজানের তাৎপর্য শীর্ষক আলোচনা সভা ও ইফতার মাহফিল জেলা শাখার কার্যালয়ে সংগঠনের প্রতিষ্ঠাতা সদস্য মুহাম্মাদ সাইফুল ইসলাম চৌধুরীর সভাপতিত্বে প্রধান অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন বাংলাদেশের বিশিষ্ট গবেষক ও জাতীয় রোগী কল্যাণ সোসাইটির প্রতিষ্ঠাতা চেয়ারম্যান ডা.মুহাম্মাদ মাহতাব হোসাইন মাজেদ।

বিশেষ অতিথি ছিলেন, ঢাকা শহীদ মুনসুর আলী মেডিকেল কলেজের সহকারী অধ্যাপক ডা.মোস্তাফিজুর রহমান আকাশ, মা ও শিশু রোগ বিশেষজ্ঞ ডা. কোহিনুর, ইঞ্জিনিয়ার মোঃ শামসুল আলম, চট্টগ্রাম ভাটিয়ারী ফিলিং স্টেশনের পরিচালক মুহাম্মাদ সোলাইমান, বিশিষ্ট ব্যবসায়ী হাজী নাদের আলী, চট্টগ্রামের বিশিষ্ট ব্যবসায়ী মুহাম্মাদ নুরুন্নবী বিশিষ্ট ব্যবসায়ী রনি,চট্টগ্রাম, দোয়া পরিচালনা করের নাসির মোহাম্মদ চৌধুরী বাড়ি জামে মসজিদের পেশ ইমাম হাফেজ মাওলানা আতিকুর রহমান। নোয়াখালী জেলা শাখার সদস্য সচিব ডা.আনোয়ার হোসাইন’র সঞ্চালনায় আরো বক্তব্য রাখেন বিশিষ্ট ব্যবসায়ী মোহাম্মদ সুমন চৌধুরী, ডা. শাহনাজ চৌধুরী, ডা. আনিসুর রহমান, ডা.ইয়াসমিন, বিশিষ্ট ব্যবসায়ী সাইফুল ইসলাম, আফরোজা খানম ইজবা, মোছাম্মৎ শামিমা ইয়াছমিন সহ জেলা শাখার নেতৃবৃন্দ।

প্রধান অতিথি তাঁর বক্তব্যে বলেন, পবিত্র রমজান মাস। এর সঙ্গেই জড়িয়ে আছে ইসলামের চতুর্থ স্তম্ভ রোজা। রোজা শুধু ধর্মীয় বিধিবিধানের অংশ নয়; বরং এটি বিজ্ঞান ও স্বাস্থ্যনীতিরও একটি বড় অংশজুড়ে রয়েছে।তাই ১৪০০ বছর আগে মুসলিম সমাজে রোজা রাখার রেওয়াজ শুরু হয়েছিল, যা কিনা একই সঙ্গে বিজ্ঞাননির্ভর, স্বাস্থ্যসম্মত ও মানসিক প্রশান্তির আধার। পৃথিবীতে বসবাসকারী সব মুসলিম ব্যক্তির ওপর রোজা, বিশেষ করে রমজানের রোজাকে ফরজ করা হয়েছে।

কোরআন ও হাদিসে রোজার গুরুত্বের বিবরণ বিশেষভাবে উল্লেখ করা হয়েছে। বৈজ্ঞানিক দৃষ্টির সঙ্গে চিকিৎসা ক্ষেত্রেও রোজার গুরুত্ব অপরিসীম। আর রোজা রাখার অভ্যাসে উচ্চ রক্তচাপ, নানা ধরনের হৃদ্‌রোগবিষয়ক জটিলতা দূর হয়। মানসিক স্বাস্থ্য ভালো রাখতে ও ইতিবাচকভাবে জীবনদর্শনেও রোজা কার্যকরী ভূমিকা রাখে।

প্রধান অতিথি আরো বলেন, রোজার সময় খাবার গ্রহণ নির্দিষ্ট সময় পর্যন্ত বন্ধ থাকে। এতে আমাদের কোষে বাহির থেকে কোনো খাবার না পেয়ে নিজেই নিজের অসুস্থ কোষগুলো খেতে শুরু করে। চিকিৎসা শাস্ত্রে এই পরিস্থিতিকে বলা হয়েছে অটোফেজি। রোজা নিয়ে বিস্ময়কর ‘অটোফেজি’ তথ্য দিয়ে ২০১৬ সালে নোবেল পেয়েছিলেন জাপানি গবেষক ও বিজ্ঞানী ওশিনরি ওসুমি। বিখ্যাত পুষ্টিবিদ ক্লাইরি ম্যাথিও অটোফেজির এ বিষয়টি মেনে চলেন।

দীর্ঘদিন একইভাবে প্রয়োজনীয় খাদ্যগ্রহণ করলে শরীরে তা অতিরিক্ত মেদ হিসেবে জমা হয়। সেই সঙ্গে বাড়ে ক্ষতিকারক টক্সিনের মাত্রাও। কিন্তু দীর্ঘ একটি মাস রোজা রাখলে এ সমস্যা থেকে অনেকটাই বেরিয়ে আসা সম্ভব হয়। এ বিষয়ে স্বাস্থ্যবিজ্ঞানী ডা. শেলটন তার ‘সুপিরিয়র নিউট্রিশন’ গ্রন্থে বলেছেন, উপবাসকালে শরীরের মধ্যকার প্রোটিন, চর্বি, শর্করাজাতীয় পদার্থগুলো স্বয়ং পাচিত হয়। ফলে গুরুত্বপূর্ণ কোষগুলোর ক্ষতি নয়; বরং পুষ্টি বিধান হয়।

যারা আলস্য ও গোঁড়ামির কারণে এবং অতিভোজনের কারণে নিজেদের সংরক্ষিত জীবনীশক্তিকে ভারাক্রান্ত করে ধীরে ধীরে আত্মহত্যার দিকে এগিয়ে যায়, রোজা তাদের এ বিপদ থেকে রক্ষা করে। বিশ্বখ্যাত চিকিৎসাবিজ্ঞানী নাস্টবারনার বলেন, ফুসফুসের কাশি, কঠিন কাশি, সর্দি এবং ইনফ্লুয়েঞ্জা কয়েক দিনের রোজার কারণেই নিরাময় হয়।এবং রোজা মানুষের আত্মাকে পরিশুদ্ধ করে এবং ব্যক্তি, পরিবার ও সমাজজীবনে অত্যন্ত সুশৃঙ্খলভাবে চলার শিক্ষা দেয়। হিংসা-বিদ্বেষ, হানাহানি ও আত্ম–অহংবোধ ভুলে গিয়ে সুখী, সুন্দর ও সমৃদ্ধিশালী সমাজ প্রতিষ্ঠার মাসই হলো রমজান।

মাহফিলের শুরুতে পবিত্র কোরআন থেকে পাঠ ও রমজানের ফজিলত সম্পর্কে বয়ান করেন হাফেজ মাওলানা আতিকুর রহমান আল কাদেরী তিনি বলেন, পবিত্র রমজানের রোজা আমাদের পুরো বছরের দোষ-ত্রুটি ক্ষমার কারণ হয়। কেননা, মানুষ যখন আল্লাহ তালার জন্য জাগতিক আরাম-আয়েশ, চাওয়া-পাওয়া ইত্যাদি থেকে বিরত থাকে, তখন সে তার নফসকে পুণ্যের ওপর প্রতিষ্ঠিত রাখতে অধিক শক্তি পায়।