সোনাগাজীতে পরীক্ষাকেন্দ্রে মাদ্রাসাছাত্রীর গায়ে আগুন

ফেনীর সোনাগাজীতে আলিমের পরীক্ষাকেন্দ্রে আগুনে দগ্ধ হয়েছেন অধ্যক্ষের বিরুদ্ধে যৌন হয়রানির অভিযোগ করা এক ছাত্রী।

শনিবার সকালে পৌরশহরের সোনাগাজী ইসলামিয়া সিনিয়র ফাজিল মাদ্রাসা কেন্দ্রে এ ঘটনা ঘটে।

আগুনে নুসরাত জাহান নামের ওই ছাত্রীর শরীরের ৭০ শতাংশ পুড়ে গেছে। তাকে প্রথমে উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে ও পরে ফেনী সদর হাসপাতাল হয়ে ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের বার্ন ইউনিটে পাঠানো হয়েছে। নুসরাত পৌরসভার উত্তর চরছান্দিয়া গ্রামের মাওলানা মুচা মিয়ার মেয়ে।

অগ্নিদগ্ধ ছাত্রীর ভাই মাহমুদুল হাসান নোমান বলেন, শনিবার সকালে আরবি প্রথম পত্র পরীক্ষা দিতে মাদ্রাসায় যায় নুসরাত। এ সময় কতিপয় বখাটে তাকে পরীক্ষা কেন্দ্রের চারতলায় ডেকে নিয়ে তার গায়ে কেরোসিন জাতীয় পদার্থ নিক্ষেপ করে আগুন দিয়ে পালিয়ে যায়। এতে তার শরীরের বেশির ভাগ অংশ পুড়ে যায়।

তিনি বলেন, তার চিৎকার শুনে উপস্থিত লোকজন ও পরিক্ষার্থীরা তাকে উদ্ধার করে প্রথমে উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে নিয়ে গেলে চিকিৎসকরা তাকে ফেনী সদর হাসপাতালে পাঠান। পরে ফেনী সদর হাসপাতালে তাকে প্রাথমিক চিকিৎসা দিয়ে ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের বার্ন ইউনিটে পাঠানো হয়।

আশঙ্কাজনক অবস্থায় নুসরাত সমকালকে জানান, তিনি পরীক্ষা কেন্দ্রে গেলে বোরকা পরা এক ছাত্রী তাকে বলেন- তার এক বান্ধবীকে (নিশাত) ছাদের ওপর মারপিট করা হচ্ছে। এ কথা শুনে তিনি ছাদে গেলে তার ওপর কেরোসিন ঢেলে আগুন লাগিয়ে বোরকা পরা কয়েকজন ছাত্রী পালিয়ে যায়।

তিনি বলেন, অধ্যক্ষের বিরুদ্ধে অভিযোগ করায় তার শরীরে আগুন লাগানো হয়েছে।

পরীক্ষার হলে দায়িত্বরত পুলিশ কনষ্টেবল রাসেদ ও মাদ্রাসার নিরাপত্তা প্রহরী মোস্তফা বলেন, ঘটনার সময় ছাদ থেকে চিৎকার করতে করতে নুসরাত নিছে নেমে আসলে আমরা দ্রুত তার শরীরের আগুন নেভানোর চেষ্টা করি। এসময় মাদ্রাসার অন্যান্য পরীক্ষার্থী এগিয়ে এসে তার শরীরের আগুন নিভিয়ে তাকে হাসপাতালে পাঠায়।

ঘটনার কিছুক্ষণ পর ফেনীর অতিরিক্ত জেলা ম্যাজিষ্ট্রেট পিকে এনামুল করিম, উপজেলা নির্বাহী অফিসার সোহেল পারভেজ, সোনাগাজী সার্কেলের সহকারী পুলিশ সুপার সাইকুল আহমদ ভুঞা মাদ্রাসায় পৌঁছে পরীক্ষাথীদের সঙ্গে কথা বলেন।

এসময় অগ্নিদগ্ধ নুসরাতের বান্ধবী নিশাত জানান, তাকে কেউ মারধর করেনি।

উপস্থিত ২৩ জন পরীক্ষার্থী জানান, নুসরাত হলে এসে তার প্রবেশপত্রসহ অন্য সামগ্রী পরীক্ষা কেন্দ্রের টেবিলে রেখে গিয়ে বাইরে চলে যাওয়ার কিছুক্ষণ পর আগুনের ঘটনা ঘটে। তবে ঘটনা কিভাবে ঘটেছে তারা কিছু জানেন না।

পরীক্ষা কেন্দ্রের সচিব নুরুল আফচার একই রকম কথা বলেন।

ফেনী সদর হাসপাতালের আবাসিক চিকিৎসা কর্মকর্তা ডা. আবু তাহের বলেন, নুসরাতের শরীরে কেরোসিন জাতীয় পদার্থ দিয়ে আগুন দেওয়া হয়েছে। এতে শরীরের ৭০ থেকে ৮০ শতাংশ পুড়ে গেছে।

প্রসঙ্গগত, গত ২৭ মার্চ নুসরাতকে যৌন হয়রানির অভিযোগে ওই মাদরাসার অধ্যক্ষ সিরাজউদ্দৌলাকে আটক করে পুলিশ। এ ঘটনায় নুসরাতের মা শিরিন আক্তার বাদী হয়ে মামলা করেন সোনাগাজী থানায়। ওই মামলায় অধ্যক্ষ ফেনী কারাগারে আছেন।

সোনাগাজী থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মোয়াজ্জেম হোসেন বলেন, বিষয়টি আত্মহত্যার চেষ্টা নাকি হত্যা প্রচেষ্টা তা তদন্ত করে দেখা হচ্ছে। তদন্তপূর্বক আইনানুগ ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে।

সূত্র : সমকাল

আগুনমাদ্রাসাছাত্রীরযৌন হয়রানি