৪ মে আঘাত হানবে ফণী | সরকারের যত প্রস্তুতি

পশ্চিম মধ্য বঙ্গোপসাগর ও তৎসংলগ্ন এলাকায় অবস্থানরত অতি প্রবল ঘূর্ণিঝড় ফণী ।  বুধবার দুপুরে সামান্য উত্তর-পশ্চিম দিকে অগ্রসর হয়ে একই এলাকায় অবস্থান করছে। ঘূর্ণিঝড়টি সেখানে থেকে শক্তি সঞ্চয় করছে। এ কারণে দেশের সমুদ্র বন্দরগুলোতে ২ নম্বর দূরবর্তী হুঁশিয়ারি সংকেত বাড়িয়ে ৪ নম্বর স্থানীয় হুঁশিয়ারি সংকেত জারি করা হয়েছে।

আবহাওয়া অধিদপ্তর সূত্র জানায়, ঘূর্ণিঝড়টি আজ বুধবার সন্ধ্যা ৬টায় চট্টগ্রাম সমুদ্রবন্দর থেকে ১ হাজার ২০৫ কিলোমিটার দক্ষিণ-পশ্চিমে, কক্সবাজার সমুদ্রবন্দর থেকে ১ হাজার ১৬০ কিলোমিটার দক্ষিণ-পশ্চিমে, মোংলা সমুদ্রবন্দর থেকে ১ হাজার ৬০ কিলোমিটার দক্ষিণ-পশ্চিমে এবং পায়রা সমুদ্র বন্দর থেকে ১ হাজার ৭০ কিলোমিটার দক্ষিণ-পশ্চিমে অবস্থান করছিল। এটি আরও ঘনীভূত হয়ে উত্তর ও উত্তর–পূর্ব দিকে অগ্রসর হতে পারে। ঘূর্ণিঝড় কেন্দ্রের ৭৪ কিলোমিটারের মধ্যে বাতাসের একটানা সর্বোচ্চ গতিবেগ ঘন্টায় ১৬০ কিলোমিটার, যা দমকা অথবা ঝোড়ো হাওয়ার আকারে ১৮০ কিলোমিটার পর্যন্ত বৃদ্ধি পাচ্ছে। ঘূর্ণিঝড় কেন্দ্রের কাছে সাগর খুবই উত্তাল। তবে এই ঘূর্ণিঝড় বাংলাদেশে আঘাত হানবে কি না, তা এখনো নিশ্চিত করে বলতে পারছেন না আবহাওয়া বিভাগের কর্মকর্তারা।

প্রস্তুতির অংশ হিসেবে বাতিল করা হয়েছে মহান মে দিবসের (১ মে) সরকারি ছুটিও। একইসঙ্গে সারাদেশে দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা ও ত্রাণ মন্ত্রণালয়ের অধীন সব দফতরের কর্মকর্তা-কর্মচারীকে নিজ নিজ কর্মস্থলে উপস্থিত থাকতে নির্দেশ দেওয়া হয়েছে। বুধবার (০১ মে) বিকেলে মন্ত্রণালয়ের সভাকক্ষে জরুরি সভা করে এ সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে। দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা ও ত্রাণ মন্ত্রণালয়ের প্রতিমন্ত্রী ডা. মো. এনামুর রহমান বাংলা ট্রিবিউনকে এ তথ্য জানিয়েছেন।

প্রতিমন্ত্রী বলেন, ‘‘ইতোমধ্যেই কক্সবাজার জেলাসহ ঘূর্ণিঝড় ‘ফণী’ যে সব জেলায় আঘাত হানতে পারে বলে আবহাওয়া দফতর পূর্বাভাস দিয়েছে, সেই সব জেলায়ও জেলা প্রশাসন সতর্ক অবস্থায় রয়েছে। এসব জেলা প্রশাসক জেলা দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা কমিটির সভাপতি হিসেবে দায়িত্ব পালন করছেন। ইতোমধ্যেই দুর্যোগ মোকাবিলায় ৫৬ হাজার স্বেচ্ছাসেবককে জরুরি ভিত্তিতে প্রস্তুত রাখা হয়েছে। সতর্ক থাকার নির্দেশ দেওয়া হয়েছে রেড ক্রিসেন্ট সোসাইটি, ফায়ার সার্ভিস ও হাসপাতালগুলোকে।’’

জেলা-উপজেলায় অবস্থিত সাইক্লোন শেল্টারগুলোকে প্রস্তুত রাখা হয়েছে জানিয়ে প্রতিমন্ত্রী বলেন, ‘যেখানে পর্যাপ্ত সাইক্লোন শেল্টার নেই, সেখানে স্কুল কলেজ, মাদ্রাসাকে যেন প্রয়োজনে ব্যবহার করা যায়, সেভাবে ব্যবহার উপযোগী করে রাখার নির্দেশ দেওয়া হয়েছে। পাশাপাশি ঘূর্ণিঝড় মোকাবিলায় এলাকায় মাইকিং করা হচ্ছে। প্রতিটি জেলায় জরুরি প্রয়োজন মেটাতে চাল ও নগদ টাকার ব্যবস্থা রাখা হয়েছে।’

এক প্রশ্নের জবাবে প্রতিমন্ত্রী জানান, ‘‘ঘূর্ণিঝড় ‘ফণী’ মোকাবিলায় প্রশাসনের পক্ষ থেকে প্রয়োজনীয় প্রস্তুতি নেওয়া হয়েছে। জেলা প্রশাসকের কার্যালয় ও উপজেলাগুলোর নিয়ন্ত্রণ কক্ষের পাশাপাশি উপজেলা ও উপকূলীয় অঞ্চলগুলোয় জারি করা হয়েছে সতর্কতা। কেন্দ্রীয়ভাবে সচিবালয়ে মন্ত্রণালয়ে কন্ট্রোল রুম খোলা হয়েছে। ঘূর্ণিঝড় প্রস্তুতি কর্মসূচি (সিপিপি) ও উপকূলীয় জেলায় ১৯টি কন্ট্রোল রুম খোলা হয়েছে।’

আবহাওয়া অধিদফতরের তথ্য অনুযায়ী ভারতের ওড়িশার দিকে অগ্রসর হচ্ছে বঙ্গোপসাগরে সৃষ্ট প্রবল ঘূর্ণিঝড় ‘ফণী’। মঙ্গলবার (৩০ এপ্রিল) রাতে ঘূর্ণিঝড়টির অবস্থান ছিল চেন্নাইয়ের প্রায় ৬৯০ কিলোমিটার দূরের বঙ্গোপসাগরে।

আবহাওয়াবিদরা ধারণা করছেন, আগামী শুক্রবারের (৩ মে) মধ্যে ঘূর্ণিঝড়টি প্রচণ্ড শক্তিশালী (ভেরি সিভিয়ার সাইক্লোনিক স্টর্ম) রূপ নিয়ে ওড়িশার উপকূলে আঘাত হানতে পারে। স্থলভূমিতে প্রবেশের সময় এর গতিবেগ হতে পারে ঘণ্টায় ১৭০ থেকে ২০০ কিলোমিটার। ঝড়টি ধীরে ধীরে অপেক্ষাকৃত দুর্বল হয়ে বাংলাদেশের খুলনা, সাতক্ষীরা, বাগেরহাট ও পিরোজপুর আঘাত হানতে পারে। তবে গতিপথ পরিবর্তন করলে এই তিন জেলার পাশাপাশি বাগেরহাট, পটুয়াখালী, বরগুনা, চট্টগ্রাম, কক্সবাজার এলাকায় আঘাত হানার আশঙ্কা রয়েছে।

উল্লেখ্য, হ্যারিকেনের গতিসম্পন্ন ঘূর্ণিঝড় ‘ফণী’ আগামী শুক্রবার (৩ মে) নাগাদ ভারতের ওড়িশা উপকূলে আঘাত হানতে পারে বলে ধারণা করছেন আবহাওয়াবিদরা। তাদের মতে, এরপর উপকূল ছুঁয়ে দক্ষিণ-পশ্চিমাঞ্চল দিয়ে বাংলাদেশের ভূখণ্ড অতিক্রম করতে পারে। তবে, ঘূর্ণিঝড়টি বাংলাদেশে আসা-না আসার বিষয়ে এখনই স্পষ্ট করে কিছু জানাতে চান না তারা।

এদিকে, বুধবার দুপুর থেকে বাংলাদেশের সমুদ্রবন্দরগুলোকে ২ নম্বরের পরিবর্তে ৪ নম্বর স্থানীয় হুঁশিয়ারি সংকেত দেখিয়ে যেতে বলেছে বাংলাদেশ আবহাওয়া অধিদফতর। ‘ফণী’ ভারতের উপকূল ছুঁয়ে আগামী শনিবার (৪ মে) নাগাদ খুলনা, সাতক্ষীরা ও যশোর অঞ্চল দিয়ে বাংলাদেশে প্রবেশ করতে পারে বলে জানিয়েছেন আবহাওয়াবিদরা।

এদিকে, কক্সবাজারের ভারপ্রাপ্ত জেলা প্রশাসক মো. আশরাফুল আশরাফ জানিয়েছেন, ঘূর্ণিঝড় ‘ফণী’ মোকাবিলায় সব উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তাকে নির্দেশনা দেওয়া হয়েছে। ওয়ার্ডভিত্তিক কমিটিও গঠন করা হয়েছে। সতর্ক রাখা হয়েছে দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা কমিটিগুলোকে। একইভাবে রেডক্রিসেন্ট সোসাইটির সব সদস্যকে প্রস্তুত রাখা হয়েছে। প্রস্তুত রাখা হয়েছে আশ্রয় কেন্দ্রগুলোকেও। পাশাপাশি উখিয়া ও টেকনাফে অবস্থিত রোহিঙ্গাদের কথা বিবেচনা করে কক্সবাজার ত্রাণ ও শরণার্থী প্রত্যাবাসন কমিশনারের সঙ্গে আলাদাভাবে জরুরি সভা অনুষ্ঠিত হয়েছে।

উল্লেখ্য, বঙ্গোপসাগরে সৃষ্ট ঘূর্ণিঝড় ‘ফণী’ বুধবার (১ মে) দুপুরে চট্টগ্রাম সমুদ্রবন্দর থেকে ১ হাজার ২৭৫ কিলোমিটার দক্ষিণ-পশ্চিমে, কক্সবাজার সমুদ্রবন্দর থেকে ১ হাজার ১৯০ কিলোমিটার দক্ষিণ-পশ্চিমে, মোংলা সমুদ্রবন্দর থেকে ১ হাজার ৯৫ কিলোমিটার দক্ষিণ-পশ্চিমে এবং পায়রা সমুদ্রবন্দর থেকে ১ হাজার ১০০ কিলোমিটার দক্ষিণ-পশ্চিমে অবস্থান করছিল। এটি আরও ঘনীভূত হয়ে উত্তর বা উত্তর-পশ্চিম দিকে অগ্রসর হয়ে পুরো বাংলাদেশে আঘাত হানতে পারে বলে জানিয়েছেন আবহাওয়া অফিস।