ব্যাটম্যান : সুপারহিরোদের রাজা

ধ্রুব নীল : তিন সুপারহিরোর দেখা হয়ে গেল। সুপারম্যান, স্পাইডারম্যান আর ব্যাটম্যান ।
সুপারম্যান: তোদের সবার চেয়ে আমার শক্তি বেশি। আমি উড়তে পারি। ফুঁ দিলেই টর্নেডো শুরু হয়ে যায়।
স্পাইডারম্যান: কতক্ষণ আর উড়বে ভায়া, হাত থেকে সুতো ছুড়ে তোমাকে এমন বাঁধা বাধবো, এক চুলও নড়তে পারবে না। তখন দেখবো কী করে সুপারহিরোগিরি কর।
ব্যাটম্যান: এসব গাঁজাখুরি আর কদ্দিন। মানুষের পক্ষে ওড়া সম্ভব না। আর কারো কবজির ভেতর আস্ত একটা স্পিনিং মিল ঢুকিয়ে দেয়া সম্ভব নয় যে, যত খুশি সুতো বের করতে পারবে। আমাকে দেখো, অতি সাধাসিধে মানুষ আমি। নিজের বুদ্ধি, পরিশ্রম আর যন্ত্রপাতি তৈরি করে সুপারহিরো হয়েছি। আমার দেখাদেখি বাস্তবে চাইলে যে কেউ ব্যাটম্যান হতে পারবে। আর তোমরা তো পারবে কেবল সিনেমা আর কমিকের পাতায় বাহাদুরি ফলাতে। এভাবেই বাকি দুই জনকে চুপ করে দিয়ে বিশ্বসেরা সুপারহিরোর খেতাব জিতে নিলো ব্যাটম্যান।

এবার শোনা যাক কমিকের পাতা থেকে সিনেমার পর্দা পর্যন্ত ব্যাটম্যানের ইতিকথা।

পরিচয়
আসল নাম ব্রুস ওয়েইন। বিশাল ধনীর সন্তান। বাস করেন যুক্তরাষ্ট্রের গোথাম সিটিতে (কাল্পনিক শহর)। কোটি কোটি ডলারের মালিক। কৈশোরে চোখের সামনে খুন হতে দেখেন মা-বাবাকে। প্রতিজ্ঞা করেন, অন্যায়ের বিরুদ্ধেই লড়ে যাবেন গোটা জীবন। গোপনে সেরে নিলেন মার্শাল আর্ট ও কমান্ডো প্রশিক্ষণ। এরপর মোটা অংকের টাকা খরচ করে বানালেন একের পর এক টুকটাক যন্ত্রপাতি আর সবশেষে বাদুড়ের মতো দেখতে কালো পোশাক।

ব্যাটম্যান এর প্রথম

শিল্পী বব কেইন ও গল্পকার বিল ফিংগারের হাত ধরে ব্যাটম্যানের আত্মপ্রকাশ ১৯৩৯ সালের মে মাসে। আমেরিকার বিখ্যাত ডিসি কমিকসে ছাপা হয় প্রথম কমিক ‘দ্য ব্যাট-ম্যান’। প্রথমে বইটার নাম ব্যাটম্যান না থাকলেও পরের বছর অর্থাৎ ১৯৪০ সালেই ব্যাটম্যান নামেই প্রকাশিত হয় ব্যাটম্যানের কমিক। সেই হিসেবে এ মাসেই ৭৫ বছরে পা দিতে যাচ্ছে তোমাদের সবার প্রিয় এ সুপারহিরো।

শত্রু মিত্র
সুপারহিরোদের সাথে খুব একটা বন্ধুবান্ধব দেখা যায় না। তারা একা একা কাজ করতেই ভালবাসেন। তবে ব্যাটম্যানের সঙ্গে শুরু থেকে দীর্ঘদিন ধরে একজন ছিল। নাম তার রবিন। ব্যাটম্যানের চেয়ে বয়সে ছোট রবিনের কাজ ছিল সহকারী হিসেবে কাজ করা। রবিনকে নিয়ে বিতর্ক ছিল অনেক। কেউ বলতেন, ব্যাটম্যান ছোটবেলা থেকেই একা। তার মধ্যে একাকীত্বটা বড় আকারে কাজ করে। আর তাই তাকে একাই মানায়। অবশ্য রবিন চরিত্রটা এত বেশি জনপ্রিয় হয়ে গিয়েছিল যে তাকে বাদ দিয়ে দেয়াটা খুব একটা সহজ কাজ হয়নি। তবে কালে কালে এই চরিত্রের চেহারা বদলেছে অনেকবার। ১৯৮০ সালে একবার ব্যাটম্যানের অন্যতম শত্রু জোকারের হাতে মারা যায় রবিন। পরে অবশ্য আবার তাকে ফিরিয়ে আনা হয়। সম্প্রতি ব্যাটম্যান নিয়ে যে তিনটি ছবি তৈরি হয়েছে, তাতে রবিনের নামগন্ধও নেই। কারণ, নতুন পরিচালকরা ব্যাটম্যানকে একা দেখতেই পছন্দ করেন। কাজে কর্মে একা হলেও কাছের কিছু লোকজন অবশ্য আছে। ব্যাটম্যানকে রীতিমতো লালন করে বড় করেছেন বুড়ো আলফ্রেড। এছাড়া ব্যবসা দেখাশোনা থেকে শুরু করে যাবতীয় খুঁটিনাটি অস্ত্রের যোগানদাতা হিসেবে আছে লুসিয়াস ফক্স। গোথাম সিটির পুলিশ কমিশনার জিম গর্ডনও আড়ালে থেকে ক্রমাগত প্রশ্রয় দিয়ে যান ব্যাটম্যানের ক্ষেপাটে কাজকর্মকে। আর যে চরিত্রের কথা না বললেই নয়, ব্যাটগার্ল। প্রথমে এ চরিত্রে দেখা গেছে কমিশনার গর্ডনের একমাত্র মেয়েকে। পরে আরো কয়েকজনকেও এ চরিত্রে নামতে দেখা গেছে। সেও ব্যাটম্যানের মতো মুখোশ পরে গুন্ডাদের সঙ্গে যুদ্ধ করে। মাঝে সেই শত্রু জোকার তাকে গুলি করে পঙ্গু করে দেয়। এরপর থেকে হুইল চেয়ারে বসে কেবল বুদ্ধির জোরেই সে অন্যায়ের বিরুদ্ধে লড়াই চালিয়ে যেতে থাকে।
একটা শত্রুর নাম এরইমধ্যে কয়েকবার বলা হয়েছে। জোকার। কাজকর্ম জোকারের মতোই। ব্যাটম্যান সিরিজের সবচেয়ে জনপ্রিয় ভিলেন বলা হয় তাকে। কেন জানি সে ব্যাটম্যানকে সহ্যই করতে পারে না। ব্যাটম্যানকে পদে পদে বাধা দেয়াই যেন তার কাজ। এছাড়া, বেইন আর কাকতাড়ুয়া নামের ভিলেন দুজনও বেশ ভয়ানক। এছাড়া, পেঙ্গুইন, টু ফেইস, রিডলার, মিস্টার ফ্রিজ, পয়জন আইভি ও রাস আল ঘাউল হলো ব্যাটম্যানের চিরশত্রু।

ব্যাটম্যানের যন্ত্রপাতি
ব্যাটম্যানের অতিপ্রাকৃত ক্ষমতা নেই। একমাত্র সম্বল মার্শাল আর্ট আর একগাদা টুকিটাকি যন্ত্র। প্রথম দিকে খুব একটা যন্ত্রপাতি না থাকলেও কালে কালে নানান প্রযুক্তি পেয়েছে ব্যাটম্যান। প্রথমেই আছে ব্যাটস্যুট। যার মধ্যে পড়বে গ্রাফাইটের তৈরি বুলেটপ্রুফ হেলমেট ও বডি আর্মার (এটা বুলেটপ্রুফ জ্যাকেটের চেয়েও শক্তিশালী)। কনুইয়ের সুরক্ষার জন্য আছে এলবো প্যাড। হেলমেটের ভেতর লাগানো আছে রেটিনা প্রজেকশন সিস্টেম। আছে বিশেষ গ্লাভস। শত্রুকে ঘায়েল করতে আছে বাদুড় আকৃতির ব্লেড। উপরে দড়ি ছুড়ে উড়ে যেতে আছে গ্র্যাপিং হুক লঞ্চার। এছাড়াও আছে লেজার মাইক্রোফোন, তাপ সনাক্তকারী ক্যামেরা, রাতে দেখার চশমা, ছোটখাট কম ক্ষতিকর গ্রেনেড ও পেরিস্কোপ। ব্যাটম্যানের স্পেশাল বুটে আছে আল্ট্রাসনিক ব্যাট অ্যাট্রাক্টর। বাদুড় একটা নির্দিষ্ট শক্তির শব্দ তৈরি করে উড়ে বেড়ায়। আর এই যন্ত্রটা সেই শব্দ তৈরি করতে পারে। আর এ শব্দ শুনেই বাদুড়ের দল ব্যাটম্যানকে ঘিরে ফেলে।

টাম্বলার দ্য গ্রেট
ব্যাটম্যানের গাড়ির কথা ভুলে গেলে চলবে না। টাম্বলার নামের দানবীয় গাড়িটা দেখলেই শত্রুদের অন্তরাত্মা কেঁপে ওঠার কথা। কালো রঙের গাড়িটার গায়ে বোমা ফাটলেও কিছু হয় না। চালানো যায় যেভাবে খুশি। আবার কোনো কারণে দুর্ঘটনার আশংকা দেখা দিলে টাম্বলার থেকে বের হয়ে আছে দুই চাকার ব্যাট পড।
ব্যাটম্যান হতে গেলে কী কী লাগবে সব তো জেনে গেলে। তাই বলে আবার এসবের জন্য বায়না ধরে বসো না। সত্যিকারের এ যন্ত্রগুলো কিনতে হলে গুনে গুনে খরচ করতে হবে প্রায় এক হাজার কোটি টাকা। আর ব্যাটম্যান হতে গেলে সবার আগে শিখতে হবে আত্মরক্ষার কৌশল।