অস্টিওআর্থাইটিস বা হাঁটুর ব্যথার আধুনিক রিজেনারেটিভ থেরাপি চিকিৎসা

বয়স্ক মানুষদের মধ্যে হাটু ব্যথা প্রায় প্রতিটি পরিবারেই দেখতে পাওয়া যায়। এর বিভিন্ন কারনের মধ্যে প্রধান কারন অস্টিও-আর্থাইটিস বা অস্থিসন্ধির ক্ষয়। আমাদের হাঁটুর জয়েন্টে একধরনের নরম এবং মসৃন আবরন বা কার্টিলেজ দিয়ে ঢাকা থাকে। এই কার্টিলেজ যখন ক্ষয় হয়ে অমসৃণ  আকার ধারন করে তখন জয়েন্ট নড়াচড়ায় ব্যথা অনুভূত হয়, অনেক সময় ফুলে যায়। এটিই অস্টিওআর্থাইটিস বা হাঁটুর এক প্রকার বাত।

আমি যদি আরও সহজভাবে বলি, হাঁটুর জয়েন্ট এ যে কুরকুরে বা কচকচ হাড্ডির মত  প্রলেপ থাকে সেটা ক্ষয় হয়ে যদি জয়েন্টে থাকা ফ্লুইডের সাথে মিশে যায়, তখন ব্যথা অনুভূত হয় সেটাকেই অস্টিওআর্থাইটিস বা গিটে বাত বলে। 

হাঁটুর অস্টিওআর্থাইটিস কেন হয়?

>হাঁটুর অস্টিওআর্থাইটিস এর অন্যতম প্রধান কারন বয়সবৃদ্বি। বয়স বাড়ার সাথে সাথে কার্টিলেজে পানির পরিমান বাড়তে থাকে এবং প্রোটিনের পরিমান কমতে থাকে। সেজন্য তরুনাস্থি বা কার্টিলেজ ক্ষয় হয় ফলে অস্টিওআর্থাইটিস হতে পারে। 

>হাটু আমাদের শরীরের ওজন বহন করে। ধরুন আপনার শরীরের ওজন যদি ১০০ কেজি হয় এবং আপনার বয়স যদি ৫০ কিংবা ৬০ বছর হয় তাহলে প্রায় ২০-৩০ বছর যাবত হাটু তা বহন করছে। তাই অতিরিক্ত দৈহিক ওজন হাঁটুতে বেশী চাপ সৃষ্টি করে যার ফলে হাঁটুতে ক্ষয় বেশী হয়।

>আঘাত বা জয়েন্টে যদি কোন ইনজুরি হয় সেখান থেকেও কার্টিলেজ ক্ষয় হয়ে এমন টি হতে পারে।

>হাটুর ভিতরে যে তরল পদার্থ বা সায়নোভিয়াল ফ্লোয়িড কমে গেলে জয়েন্ট নড়াচড়া করতে ঘর্ষন হয় অর্থাৎ জয়েন্টে স্পেস কমে যায় তখনও অস্টিওআর্থাইটিস হতে পারে। 

কিভাবে বুজবেন যে আপনার অস্টিওআর্থাইটিস হয়েছে?

+হাঁটুতে ব্যথা হবে, হাটু ফুলে যাবে এবং হাঁটুতে হাত রাখলে গরম অনুভূত হবে। 

+হাটু ভাঁজ করতে কষ্ট হবে বা জয়েন্ট জমে আছে এমন বোধ হবে।

+হাটু গেরে নিচে বসতে সমস্যা হবে এবং সিডি দিয়ে উঠানামা করতে কষ্ট হবে। 

+হাটুর জয়েন্টের আক্রিতি পরিবর্তন হয়ে যাবে এবং কখনও কখনো হাঁটুর ভিতর নড়াচড়ায় কটকট শব্দ করবে।

হাঁটুতে এই জাতীয় সমস্যা হলে প্রাথমিক পর্যায়ে ঔষুধের পাশাপাশি লাইফস্টাইল মডিফিকেশন, নিয়মমাফিক চলাফেরা এবং সঠিক ফিজিওথেরাপি নিলে বেশীর ভাগ রোগীই সুস্থ হয়ে যায়। কিন্তু একজন বিশেষঙ্গ চিকিৎসকের পরামর্শ অনুযায়ে বিশ্রাম নেওয়ার পাশাপাশি ঔষধ, ফিজিওথেরাপি যেমন- ম্যানিয়াল থেরাপি বা থেরাপিউটিক এক্সাসাইজ, ম্যানুপুলেশন থেরাপি, বিভিন্ন ধরনের ইলেক্টোথেরাপি যেমন- লেজার, আলট্রাসাউন্ড থেরাপি এবং অনান্য যেসব ইলেক্টোথেরাপি আছে, এমনকি স্ট্যারোয়েড ইনজেকশন দেওয়ার পরে ও যদি আশানুরুপ উপকার না আসে, তাদের জন্য রিজেনারেটিভ থেরাপি অত্যন্ত কার্যকর। যা এফ ডি এ(FDA) এপ্রুভড এবং সম্পূর্ন পাশ্বপ্রতিক্রীয়া মুক্ত। 

সঠিক সময়ে সঠিক চিকিৎসা নিলে দীর্ঘমেয়াদী হাটু ব্যথা বা অস্টিওআর্থাইটিস, পায়ের গোড়ালির ব্যথা এবং ফ্রোজেন সোল্ডার বা কাঁধের জয়েন্টে ব্যথার দীর্ঘস্হায়ী সমাধান সম্ভব। আমরা দীর্ঘমেয়াদী বিভিন্ন ব্যথার জন্য ফোকাসড এবং রেডিয়াল শকওয়েভ থেরাপি, টেকার রেডিওফ্রীকোয়েন্সী এবং পিআরপি বা প্লাজমা থেরাপির মাধ্যমে চিকিৎসা দিয়ে থাকি। 

চিকিৎসার এই পদ্বতিতে, রক্তপ্রবাহ বৃদ্ধির  ফলে শরীরের নিজস্ব পূর্নগঠন পদ্বতি অর্থাৎ এনজিওজেনেসিস মানে নিউ ব্লাড ভেসেল ফরমেশন  ও নিউরোজেনেসিস মানে নিউ নার্ভ সেল রিপেয়ার এবং রিডিউস ইনফ্লামেশন বা প্রদাহ, এই প্রকিয়াকে কাজে লাগিয়ে নতুন টিস্যু তৈরি করতে সাহায্যে করে যার ফলে দীর্ঘমেয়াদী সম্পূর্ন ব্যথা মুক্ত হওয়া সম্ভব।

এই চিকিৎসার জন্য সময় লাগে প্রায় এক ঘন্টা কিন্তু চিকিৎসার পরেই  রোগী তার নিজের কাজে বা বাড়ী ফিরে যেতে পারে। তিন সপ্তাহ অথবা এক মাস পরপর তিন থেকে চার বার এই চিকিৎসা নিতে হয় সর্বমোট। একজন বিশেষ প্রশিক্ষন প্রাপ্ত চিকিৎসক বা রিজেনারেটিভ থেরাপি প্রাক্টিশনার এই চিকিৎসা প্রদান করেন।

এছাড়া ও সঠিক খাদ্যাভাস, থেরাপিউটিক  এক্সাসাইজ ও লাইফস্টাইল মডিফিকেশন করে এর সঠিক সমাধান সম্ভব।

[08/09, 9:37 pm] Ar Jumman: লেখকঃ শামসুল হক নাদিম, কনসালটেন্ট, রিজেনারেটিভ থেরাপি প্র্যাক্টিশনার.

🏪  এডভান্সড সেন্টার ফর রিজেনারেটিভ থেরাপি- ২০৬৬, এভারকেয়ার হসপিটাল লিংক রোড, রয়েল স্কুল ও ওয়াটার পলো সুইমিং পুলের সাথের বিল্ডিং, বসুন্ধরা, ঢাকা-১২২৯।

মোবাইলঃ ০১৯৭৭৬৫৬২৩৭

ওয়েবসাইটঃ www.acrtbd.com

healthosteoarthritisস্বাস্থ্য