জলবসন্ত রোগের চিকিৎসা কী? চুলকানি থামাবেন কী করে

জলবসন্ত বা চিকেন পক্স সংক্রামক রোগ। ভাইরাসের কারণে হয় এটি। গরম শুরু হওয়ার সঙ্গে সঙ্গে শুষ্ক আবহাওয়ায় ভাইরাসটির আক্রমণ বেশি দেখা যায়। ছোট-বড় সবারই জলবসন্ত হতে পারে। শিশুদের আক্রান্তের হার বেশি।

ডাক্তাররা বলেন, জলবসন্ত এক সপ্তাহ বা তার বেশি সময় অস্বস্তিকর অবস্থায় থাকে। প্রথমে জ্বর, এরপর ফোসকা পড়ে, চুলকানি হয়। অবশেষে ফোসকা থেকে শুকনা চামড়া উঠে আসে।

 

জলবসন্তের লক্ষণ কী

জলবসন্তের লক্ষণগুলো হলো প্রচণ্ড জ্বর, হাত-পাসহ শরীরের বিভিন্ন স্থানে ফোসকা। একটু সচেতন থাকলে দ্রুত ভালো হয়ে যায়। কিন্তু ত্বকের দাগ থেকে যেতে পারে দীর্ঘদিন। আবার শিশুর শরীরে অনেক সময় জটিলতা দেখা দেয় বলে প্রথমেই চিকিৎসকের পরামর্শ নিতে হয়।

 

জলবসন্ত কীভাবে ছড়ায়?

বাতাসের মাধ্যমেই অন্যকে আক্রমণ করে জলবসন্ত। আক্রান্ত ব্যক্তির হাঁচি, কাশি, কাপড়চোপড় থেকে জলবসন্তের ফলে সৃষ্ট ফোসকা ফেটে গিয়ে যে পদার্থ নির্গত হয়, তা অন্যের সংস্পর্শে এলে এই রোগ সংক্রমিত হতে পারে। সব কটি গুটি শুকিয়ে গেলে ভাইরাসটি আর ছড়াতে পারে না।

 

জলবসন্তের আরও কিছু লক্ষণ

জলবসন্ত হলে শুরুর দিকে শরীর ম্যাজম্যাজ করবে। মাথাব্যথা করা, গা-হাত-পা ব্যথা করা, এমনকি পিঠের ব্যথাও এর প্রাথমিক লক্ষণ। একটু সর্দি-কাশিও হতে পারে। এরপর জ্বর জ্বর ভাব হবে। এরপর ঘামাচির মতো কিছু উঠতে দেখা যায়। তারপর সেটা একটু পর বড় হতে থাকে এবং ভেতরে পানি জমতে থাকে। খুব দ্রুতই শরীর দুর্বল হয়ে যায়। প্রচণ্ড জ্বর আসবে ও ব্যথা হবে। সঙ্গে সর্দি-কাশিও থাকবে।

 

শিশুর জলবসন্ত হলে কী করবেন?

সাধারণত জলবসন্ত হলে শিশুর বিশেষ কোনো ওষুধ লাগে না। তবে এটি প্রতিরোধে ভ্যাকসিন পাওয়া যায়। শিশুকে ভ্যাকসিন দিয়ে রাখতে পারেন।

তবে জলবসন্ত হলে শিশুদের খাওয়ার রুচি কমে। তাই এ সময় শিশুদের নরম খাবার ও পুষ্টিকর খাবার দিতে হবে। জলবসন্ত হওয়ার পাঁচ-ছয় দিন পর নিমপাতা, হলুদ একসঙ্গে সব শরীরে মেখে পাঁচ-ছয় দিন গোসল করিয়ে দিন। ছোঁয়াচে রোগ বলে পোশাক, কাঁথাসহ শিশুর ব্যবহৃত জিনিসপত্র আলাদা রাখুন।

 

জলবসন্ত প্রতিরোধের উপায় কী?

যতটুকু পারা যায় আক্রান্ত ব্যক্তিকে আলাদা রাখতে হবে। জলবসন্ত প্রতিরোধের জন্য ভ্যাকসিন দেওয়া যেতে পারে। কারও একবার জলবসন্ত হয়ে গেলে আর টিকার প্রয়োজন নেই। কারণ একবার জলবসন্ত হলে সাধারণত দ্বিতীয়বার আর এ রোগ হয় না।

 

জলবসন্তের রোগীকে কী খাওয়াতে হবে?

দিনে কমপক্ষে আট গ্লাস পানি পান করাতে হবে জলবসন্তের রোগীকে। এ সময়ে পুষ্টিকর খাবারও দিতে হবে। তবে খাবারের কোনো বাধ্যবাধকতা নেই। মাছ, মাংস, দুধ, ডিম, সবজি সবই খাওয়া যাবে।

 

জলবসন্তের রোগীর গোসল করার নিয়ম

জলবসন্ত হওয়ার পরও নিয়মিত গোসল করা যায়। তবে গোসল শেষে শরীর ঘষে মোছা যাবে না। আলতো করে চাপ দিয়ে মুছতে হবে। স্বাভাবিক পানি দিয়ে গোসল করানো যাবে। এ সময়ে ডাবের পানি খুব উপকারী এবং ডাবের পানি দিয়ে মুখ ধুলে ও গোসল করলে দাগ হওয়ার হাত থেকে বাঁচা যাবে।

জলবসন্তের রোগীকে হালকা সুতির কাপড় কিংবা পায়জামা পরান৷ রোগীর ত্বক ঠান্ডা থাকলে কম অস্বস্তি বোধ করবে৷

 

জলবসন্ত থেকে যেসব জটিলতা দেখা দিতে পারে

নানা ধরনের জটিলতা হতে পারে জলবসন্ত থেকে। বিশেষ করে ত্বকের সংক্রমণ, স্কারলেট জ্বর, নিউমোনিয়া, হাড়ের সংক্রমণ, মস্তিষ্ক ও কিডনির প্রদাহ হতে পারে। গর্ভবতী মায়ের ক্ষেত্রেও জটিলতা সৃষ্টি করতে পারে। গর্ভের সন্তানের মৃত্যু থেকে সন্তান বিকলাঙ্গ হয়েও জন্মাতে পারে।

 

জলবসন্তের চিকিৎসা কী?

জলবসন্ত রোগের প্রাথমিক চিকিৎসা হলো, ফুসকুড়ি না শুকানো পর্যন্ত রোগীকে আলাদা করে রাখা। ৮০ শতাংশ ক্ষেত্রে যদি রোগীর শরীরের রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা ভালো থাকে, তাহলে এর জন্য কোনো ওষুধের দরকার হয় না।

 

জলবসন্তের চুলকানি থামাবেন কী করে

চেষ্টা করতে হবে যতটা সম্ভব না চুলকানোর। কারণ, চুলকানোর ফলে সংক্রমণ হতে পারে এবং ত্বকে স্থায়ী দাগ পড়ে যেতে পারে৷ তবে প্রবল চুলকানি হলে আলতোভাবে চুলকানো যেতে পারে এবং চিকিৎসকের পরামর্শে চুলকানির ওষুধ দেওয়া যেতে পারে। তাজা নিমপাতা হালকা গরম পানিতে মিশিয়ে গোসল করালে জলবসন্তের চুলকানিতে উপকার পাওয়া যায়।

 

জলবসন্ত হলে কী খেতে হবে

খাবার হবে কম মসলা ও লবণযুক্ত। খাবারে যেন বেশি ভিটামিন, খনিজ ও ক্যালরি থাকে। অনেকে জলবসন্তে আক্রান্ত শিশুকে বুকের দুধ খাওয়ানো বন্ধ রাখেন, যা ঠিক নয়। শিশুকে অবশ্যই বুকের দুধ খাওয়াতে হবে।

কম স্নেহযুক্ত আইসক্রিম, মিল্ক শেক, দই, মাছ, মাংস, ডিম, দুধ, স্যুপ, ফলের রস, ডালের পানি ইত্যাদি খেতে পারবে জলবসন্তের রোগী।

 

জলবসন্তের রোগীকে যা খাওয়ানো যাবে না

নারিকেল, মাখন, চকলেট, বাদাম ও পনির শরীরের প্রদাহ বাড়ায়। এসব খাবারে অনেক সম্পৃক্ত চর্বি থাকে। এগুলো জলবসন্তের গুটির জ্বালাপোড়া বাড়িয়ে দিতে পারে।

ঝাল ও মসলাযুক্ত খাবার জলবসন্তের রোগীদের দেওয়া উচিত নয়। রোগীর মুখে ঘা থাকে বলে এ ধরনের খাবার বাদ দেওয়া উচিত।

অতিরিক্ত লবণ শরীরের জন্য সব সময়ই ক্ষতিকর। জলবসন্তের সময়ও এ ধরনের খাবার ক্ষত বাড়িয়ে দেয়।

চীনাবাদাম, ওয়ালনাট, চকলেট, বীজ ও কিশমিশে প্রচুর অরগিনিন অ্যামিনো অ্যাসিড রয়েছে। অরগিনিন শরীরের উপকারী হলেও এটি জলবসন্তের জীবাণুর বংশ বিস্তার ঘটায়।

এ সময় লেবু–জাতীয় ফলের রস শিশুকে না খাওয়ানোই ভালো। কারণ, উচ্চমাত্রায় সাইট্রিক অ্যাসিডের কারণে লেবুর রস মুখের ভেতরে গেলে ক্ষতস্থানে ব্যথা ও জ্বালাপোড়া হয়।

healthhealth tipsশিশুর স্বাস্থ্যস্বাস্থ্য