ডা. মো. হুমায়ুন কবীর
পৃথিবীতে পুরুষের মৃত্যুর প্রথম কারণ হলো ফুসফুসের ক্যান্সার জনিত কারণ, তবে নারীদের ক্ষেত্রে এটি দ্বিতীয় মৃত্যুর কারণ। ফুসফুসের শ্বাসনালী, বায়ুথলি ও মিউকাস গ্রন্থির এপিথেলিয়াম কোষ হতে সৃষ্ট ক্যান্সারকে ফুসফুসের ক্যান্সার বলে। ফুসফুস ক্যান্সারের বিভিন্ন পূর্বসংকেত আছে, তা শুরুতে শনাক্ত করে যথাযথ চিকিৎসা নিলে জটিলতা হতে রক্ষা পাওয়া সম্ভব। ফুসফুস ক্যান্সার দেহে দ্রুত ছড়িয়ে পড়ে।
ফুসফুসের ক্যান্সারের কারণ
ধুমপান ফুসফুস ক্যান্সারের জন্য প্রায় ৮০ শতাংশ ক্ষেত্রে দায়ী হিসেবে চিহ্নিত করা হয়
- তামাকজাত দ্রব্য সেবন
- পান, সুপারি, জর্দা অতিমাত্রায় গ্রহণ
- নানা প্রকার পরিবেশ দূষণ
- জেনেটিক কারণ অর্থাৎ কারো বংশে এ ক্যান্সার আক্রান্ত কোনো রোগির ইতিহাস থাকলে পরবর্তী বংশধরে হওয়ার সম্ভাবনা থাকে
- ঘন ঘন ফুসফুসের প্রদাহ
- অতিরিক্ত ধোঁয়াচ্ছন্ন পরিবেশ
- রাবার বা পেট্রোলিয়াম ক্যামিকেল কারখানায় কাজের প্রভাব
- বেনজিন, বেনজোপাইরিন, নিকেল, ক্রোমিয়াম ও জৈব পদার্থ ফুসফুসে প্রবেশ ইত্যাদি।
ফুসফুসের ক্যান্সারের লক্ষণ
- কোনো কারণ ছাড়াই প্রায় বছল জুড়ে কাশি লেগেই থাকে
- ক্যান্সারের আধিক্যের সাথে প্রবল শ্বাসকষ্ট শুরু হয়
- প্রায় বছর কোনো কারণ ছাড়াই গলা ভেঙ্গে থাকে। গলার স্বরের পরিবর্তন বিশেষ ভাবে লক্ষ্য করা যাবে
- ক্যান্সারের অন্যতম লক্ষণ হলো ক্লান্তি। তবে ফুসফুস ক্যান্সারে ফলে ক্লান্তি আরো বেশী
- এ রোগের ফলে বুক, পিট ও কাঁধের আশেপাশে তুলনামুলক বেশী ব্যথা থাকে
- অনেক সময় কফের সাথে রক্ত আসে
- ওজন কমে যায়, ক্ষুধা কমে যায়।
ফুসফুসের ক্যান্সারের প্রকার
ফুসফুস ক্যান্সারকে প্রধানত দুই ভাগে ভাগ করা যায়। যথা: স্মল ও নন স্মল সেল। আরো ভাগ গুলো হলো স্কোয়ামাস, লার্জ সেল ও এডিনোকার্সিনোমা।
ফুসফুসের ক্যান্সারের চিকিৎসা
ক্যান্সার শনাক্ত করে উপযুক্ত চিকিৎসার মাধ্যমে প্রাথমিকভাবে রোগটি হতে রক্ষা পাওয়া যায়। এ রোগে চিকিৎসার মধ্যে সার্জারী অন্যতম। তবে কেমোথেরাপি ও টার্গেটেড থেরাপির মাধ্যমে চিকিৎসা দেওয়া সম্ভব।
প্রতিরোধ
- ফুসফুস ক্যান্সার যেহেতু দেহে দ্রুত ছড়িয়ে পড়ে তাই রোগটি সম্পূর্ণ নিরাময়যোগ্য নয়, তবে সচেতন হলে তা প্রতিরোধযোগ্য।
- দ্রুত ধুমপান ত্যাগ করতে হবে। ধুমপায়ীর কাছ হতে যথাসম্ভব দুরত্ব বজায় রাখতে হবে
- ধুমপায়ীদের উচিত ক্যান্সারের স্ক্রীনিং করানো, প্রাথমিক পর্যায়ে ধরা পড়লে জটিলতা কমানো যায়
- তামাকজাত দ্রব্য বর্জন করতে হবে
- খাদ্য তালিকায় সবুজ তাজা শাকসব্জি ও ফলমুল নিয়মিত রাখতে হবে
- গাড়ির কালো ধোঁয়া, শিল্প কারখানা নির্গত ধোঁয়া হতে দুরে থাকতে হবে
- ক্যাডমিয়াম, ক্রোমিয়াম, এসবেষ্টস, নিকেল ইত্যাদি রাসায়নিক পদার্থ সম্পূর্ণভাবে এড়িয়ে চলতে হবে
- যক্ষ্মা, নিউমোনিয়া, ব্রষ্কাইটিস ইত্যাদি হলে অতি দ্রুত চিকিৎসা করাতে হবে
লেখক: কনসালটেন্ট, রেনেসাঁ হোমিও মেডিকেয়ার
২৫/৩, নবাব কাটারা, নিমতলী, চানখাঁরপুল
ঢাকা-১০০০।
মোবাইলঃ ০১৭১৭৪৬১৪৫০, ০১৯১২৭৯২৮৯৪।