টবে করলা চাষ করবেন যেভাবে

টবে করলা চাষ করা যায় সহজে।  টবের আকার বড় হলে ফলনও আসে ভালো। অন্তত মাসের কয়েক দিন খাওয়া যাবে অনায়াসে।

টবে করলা চাষ করতে মাটি তৈরি

যেকোন ধরনের মাটিতেই করলা চাষ করা যায়। তবে জৈব পদার্থ সমৃদ্ধ দো-আঁশ ও বেলে দো-আঁশ মাটিতে করলার চাষ সবচেয়ে ভালো হয়। পানি জমে থাকে বা ছায়াযুক্ত জায়গায় উচ্ছে-করলার চাষ ভালো হয় না। ছাদে যে অংশে আলোর পরিমাণ বেশি সেদিক নির্বাচন করতে হবে। আর টবে অথবা বেডে যেন কখনই পানি জমে না থাকে সেদিকে লক্ষ্য রাখতে হবে।

 

জাত 

উচ্ছে ও করলা পর-পরাগায়িত সবজি। এর জাত বৈচিত্র্য অনেক। তাই বাড়িতে করলা চাষ করে সে জাত থেকে বীজ সংগ্রহ করে, আবার করলার চাষ করলে তা থেকে ভালো ফল পাওয়া যায় না। সেজন্য প্রতি মৌসুমে ভাল জাতের ভালো বীজ সংগ্রহ করে এর চাষ করা উচিত।

যেসব জাত লাগাতে পারেন

১) উচ্চ ফলনশীল জাত বারি করলা ১

২) বিএডিসি উদ্ভাবিত ‘গজ করলা’। টবে করলা চাষ করতে সাধারণত এ বীজটাই বেশি ব্যবহার করা হয়।

৩) হাইব্রিড জাত বুলবুলি, প্যারট, টিয়া, কাকলি, প্রাইম-এক্সএল, টাইড, গৌরব, গ্রিন স্টার, প্রাইড ১, প্রাইড ২, গ্রীন রকেট, জাম্বো, হীরা ৩০৪, মিনি, গুড বয়, ওয়াইজম্যান, গজনি, ইউরেকা, হীরক, মানিক, মণি, জয়, কোড-বিএসবিডি ২০০২, কোড-বিএসবিডি ২০০৫, পেন্টাগ্রিন, ভিভাক, পিয়া, এনএসসি ৫, এনএসসি ৬, রাজা, প্রাচী ইত্যাদি।

এইসব বীজ বিএডিসি সেন্টার, হর্টিকালচার সেন্টার অথবা ভালো কোন বীজ সারের দোকান থেকে সংগ্রহ করতে হবে।

 

টব বা বেড তৈরি

টবের মাটি খুব ভালোভাবে চাষ দিয়ে আগাছা পরিষ্কার করে নিতে হবে।প্রথমে দুই ভাগ মাটির সাথে ১ ভাগ গোবর, ২০-৩০ গ্রাম টিএসপি সার, ২০-৩০ গ্রাম পটাশ একসাথে মিশিয়ে ড্রামে ভরে পানি দিয়ে ভিজিয়ে রাখতে হবে। সপ্তাহখানেক পরে মাটি কিছুটা ওলটপালট করে আবার চার-পাঁচ দিন রেখে দিতে হবে।ছাদে বেড করে করলা চাষ করতে চাইলে একই ভাবে মাটি তৈরি করে দেড় মিটার দূরত্বে গাছ লাগাতে হবে।

 

বীজ বপন

বছরের যেকোনো সময় করলা চাষ করা যায়। তবে গ্রীষ্ম-বর্ষা মৌসুম করলা চাষের জন্য সবচেয়ে উপযুক্ত সময়। এক্ষেত্রে ফেব্রুয়ারি থেকে মে মাসের মধ্যে বীজ বুনতে হয়।আর উচ্ছে চাষ করতে চাইলে জানুয়ারি থেকে মার্চ মাসের মধ্যে বীজ বুনলে ভালো ফলন পাওয়া যায়। একসাথে দু’টি করে বীজ বুনতে হয়। করলার বীজের খোসা বেশ শক্ত। তাই বোনার আগে ২৪ ঘন্টা পানিতে বীজ ভিজিয়ে রাখতে হয়, তাহলে খুব সহজে চারা গজায়। তবে টবে বা বেডে সরাসরি বীজ না বুনে আলাদাভাবে পলিব্যাগে চারা তৈরি করে সেসব চারা রোপণ করা যেতে পারে। এতে ফলন ভালো হয়।

 

সার

জৈব সার করলা চাষে খুবই উপকারী। বাজার থেকে ভালো মানের জৈব সার কিনে ব্যবহার করতে হবে। গাছে করলা আসা শুরু করলে সরিষার খৈল পচা পানি পাতলা করে প্রতি ১৫-২০ দিন অন্তর দিতে হবে। গাছের স্বাস্থ্য বেশি খারাপ হলে কৃষি কর্মকর্তার পরামর্শ অনুযায়ী রাসায়নিক সার ব্যবহার করা যেতে পারে।

 

মাচা

টবে করলা চাষ করতে মাচা খুবই গুরুত্বপূর্ণ। চারাগাছ ২০ থেকে ২৫ সেন্টিমিটার লম্বা হলে চারার সাথে কাঠি পুঁতে দিতে হবে। এর পাশাপাশি মাটি থেকে এক থেকে দেড় মিটার উঁচু মাচা তৈরি করতে হবে। বেডের চওড়া অনুযায়ী মাচার চওড়া নির্ধারণ করতে হবে। বারান্দায় চাষ করতে চাইলে গ্রিল বেয়ে যেন উঠতে পারে, সেই ব্যবস্থা থাকতে হবে।

প্রথমে বাঁশের শক্ত খুঁটির মাথায় জিআই তার অথবা রশি বেঁধে খাঁচা তৈরি করে নিতে হবে। এর উপরে পাটকাঠি বা বাঁশের সরু কাঠি ফাঁকা ফাঁকা করে বিছিয়ে দিয়ে মাচা তৈরি করা যেতে পারে।

 

সেচ ও আগাছা পরিষ্কার

চারা গজানোর পর নিয়মিত পানি দিতে হবে। কিন্তু গাছের গোড়ায় যেন পানি জমে না থাকে সেদিকে বিশেষ ভাবে লক্ষ্য রাখতে হবে। এছাড়া মাটিতে চটা বেঁধে গেলে তা ভেঙে দিতে হবে এবং নিড়ানি দিয়ে আগাছা পরিষ্কার করতে হবে। গাছের গোড়া থেকে ছোট ছোট ডগা বের হলে সেগুলো ছেঁটে ফেলতে হবে। এতে ফলন ভালো হয়।

 

রোগবালাই

করলা গাছে ভাইরাসজনিত মোজাইক রোগ, পাউডারি মিলডিউসহ বিভিন্ন রোগের সংক্রমণ হতে পারে । এছাড়া মাছিপোকা ও পামকিন বিটলের আক্রমণও দেখা যায়। সেক্ষেত্রে রোগের ধরন অনুযায়ী নির্দিষ্ট বালাইনাশক স্প্রে করতে হবে। পোকামাকড়ের আক্রমণ থেকে বাঁচতে সেক্স ফেরোমন ফাঁদ ও বিষটোপ ফাঁদের সমন্বিত ব্যবহার খুবই উপকারী।

 

করলা তোলা 

চারা গজানোর দেড় থেকে দুই মাসের মধ্যেই গাছে ফল আসা শুরু করে। ফল আসার সময় থেকে প্রায় দু’মাস ফল তোলা যায়।

করলাকৃষিকৃষি টিপসছাদ বাগানটবে করলা চাষ