অনেক দিন থেকে পরিকল্পনা করছি উত্তরের কোনো জেলা ঘুরে আসব। নভেম্বরের প্রথম সপ্তাহে আমার বান্ধবী রাফিয়া বলল, ওরা কয়েকজন মিলে ৮ নভেম্বর রাতে পঞ্চগড় ভ্রমণের উদ্দেশ্যে বের হবে। ওদেরকে বললাম, “তাহলে তোদের সাথে আমাকেও নিস।” তখন ওরা বলল, বাসে প্রায় বুকিং শেষ, আর মাত্র কয়েকটি আসন ফাঁকা আছে। দ্রুত বুকিং কর। আমি আর অন্য কিছু না ভেবে বুকিং কনফার্ম করলাম। সেই সাথে বন্ধু প্রতীককে বললাম, “চল, ঘুরে আসি পঞ্চগড়।” প্রতীক কিছু না ভেবেই বুকিং কনফার্ম করল।
তারপর মনে মনে ভাবলাম, কবে আসবে সেই ৮ নভেম্বর! অবশেষে ৮ নভেম্বর এল। আমরা রাত ১১:৪৫ মিনিটে বেগম রোকেয়া বিশ্ববিদ্যালয়ের মূল ফটকের সামনে থেকে তেঁতুলিয়া, পঞ্চগড়ের উদ্দেশ্যে যাত্রা শুরু করলাম। বাস চলতে চলতে ঠাকুরগাঁওয়ে পৌঁছে ১০ মিনিটের যাত্রা বিরতি দিল। আমরা হালকা নাস্তা করে আবার বাসে উঠলাম।
রাতে যেতে যেতে বাংলাদেশ-ভারত সীমান্তের লাইটগুলোর আলো চোখে পড়ল। খানিকটা যেতে আলো হারিয়ে যায়, আবার দেখা যায়। এভাবেই ভোর সাড়ে পাঁচটায় তেঁতুলিয়া পৌঁছালাম। উদ্দেশ্য তখন অপরূপ সৌন্দর্যের অধিকারী হিমালয়ের দ্বিতীয় সর্বোচ্চ শৃঙ্গ কাঞ্চনজঙ্ঘার এক পলক দর্শন।
তেঁতুলিয়ার ডাকবাংলোর সামনে মহানন্দা নদীর তীরে দাঁড়িয়ে শীতল বাতাস উপভোগ করছিলাম আর রূপময়ী কাঞ্চনজঙ্ঘা দেখার জন্য আকাশের দিকে তাকিয়ে ছিলাম। বিয়ের সময় মানুষ যেভাবে অনাগত প্রিয় মানুষের দিকে চোখে চোখ রেখে শুভদৃষ্টি সম্পন্ন করে, ঠিক সেভাবেই কাঞ্চনজঙ্ঘার পানে তাকিয়ে ছিলাম। অনেকক্ষণ অপেক্ষা করলাম আর ভাবলাম, চির রূপময়ী হয়তো অভিমান করেছে আমার সাথে। যৌবনের প্রেমাবেগে প্রথম নারীকে যেভাবে দেখেছিলাম, ঠিক সেভাবেই মহানন্দার পাড়ে দাঁড়িয়ে কাঞ্চনজঙ্ঘাকে দেখেছি।
তারপর ফ্রেশ হয়ে সকালের নাস্তা সেরে বাংলাবান্ধা স্থলবন্দরের উদ্দেশ্যে যাত্রা শুরু করলাম। বাংলাবান্ধা স্থলবন্দর ঘুরে দেখলাম, কিছু সুন্দর ছবি তুললাম। তারপর আবার তেঁতুলিয়া এসে খোলা ভ্যানগাড়িতে করে গ্রামের পাকা-আধাপাকা পথ বেয়ে সময়তলের বড় বড় কয়েকটি অর্গানিক চা বাগান ঘুরে দেখলাম। পাশেই মহানন্দা নদীর বাংলাদেশ অংশ থেকে পাথর উত্তোলন, সীমান্তের তারকাঁটার বেড়া আর ভারতের কিছু চা বাগান দেখলাম।
সেখান থেকে তেঁতুলিয়া শহরে এসে দুপুরের খাবার খেয়ে বাসে করে কাজী টি অ্যান্ড টি এস্টেটে এলাম। তারপর চা বাগানের পথ বেয়ে আনন্দধারা রিসোর্টে প্রবেশ করলাম। সেখানে ইউরোপীয় মডেলের কয়েকটি ছোট ছোট ঘর দেখতে পেলাম। বিশাল চা বাগান আর সেই চা বাগানের ভেতরে অপরূপ সৌন্দর্য। আনন্দধারা রিসোর্টটি ঘুরে দেখলাম আর তার সৌন্দর্য উপভোগ করলাম।
তখন বেলা প্রায় শেষের দিকে। তারপর আমরা বাসে করে আবারও রংপুরের উদ্দেশ্যে যাত্রা শুরু করলাম। বাসে সারাদিনের স্মৃতি মনে করতে করতে রাত প্রায় দশটা নাগাদ রংপুর এসে পৌঁছালাম। সময় স্বল্পতার কারণে আরও অনেক কিছু দেখা হয়নি। পরবর্তীতে যদি কখনো আবারও যাই, তাহলে অন্যান্য দর্শনীয় স্থানগুলো ঘুরে দেখব।
লেখক:মোঃহেলাল মিয়া
শিক্ষার্থী,বেগম রোকেয়া বিশ্ববিদ্যালয়,রংপুর।