Friday, March 14

শিক্ষার্থীদের ভাবনায় ‘বই ও বইমেলা’

বইমেলা জ্ঞান চর্চার প্রতীক

মনিরুল ইসলাম

বই মানুষের পরম ও সবচেয়ে নিকটতম বন্ধু। পৃথিবীর সকল মানুষ নিজ প্রয়োজনে কিছুটা হলেও পিছু হটে থাকে, কিন্তু বিপরীতে বই রথের সারথি হয়ে পাশে থেকে যায় অবলীলাক্রমে। বলছি ২০২৫ অমর একুশে গ্রন্থমেলার কথা। মাসব্যাপী এমন চমৎকার আয়োজনে আমি প্রতিনিয়ত মুগ্ধ ও উচ্ছ্বসিত। এই একুশ শতকে এসে বেশিরভাগ তরুণ ও যুব সমাজ সোশ্যাল মিডিয়ার অপব্যবহার, অনৈতিকতা, খেলাধুলায় অমনোযোগী এবং বন্ধনহীন সমাজে পরিণত হয়েছিল প্রায়। পাশাপাশি নতুন করে জুলাই-আগস্টে জেন-জি জেনারেশন দেখিয়ে দিয়েছে কিভাবে নতুন করে জাগতে হয়, জাগ্রত করতে হয়। উক্ত বইয়ের মিলনমেলায় প্রিয় কবি, লেখক, সাহিত্যিক, প্রাবন্ধিক, গবেষক ও স্কলারদের রয়েছে নানান রকম বই, যা আমাদের আলোর দিশারীর ন্যায় উদ্যমী হয়ে পাশে থাকবে। তাই মহান আল্লাহ তায়ালা সর্বপ্রথম নাজিলকৃত (সূরা আল-আলাকের: ০৫) প্রথম আয়াতেও বলেছিলেন “পড় তোমার প্রভুর নামে যিনি তোমাকে সৃষ্টি করেছেন”। সকল বইয়ের পরশে যেন জাতি জাগ্রত হতে পারে জ্ঞানে-বিজ্ঞানে এবং শিষ্ঠাচারে এমনই প্রত্যাশা। নিজ, পরিবার, সমাজ এবং দেশকে বিশ্ববাসীর কাছে উপস্থাপন করতে প্রয়োজন জ্ঞান চর্চার, আর তারই প্রতীক অমর একুশে গ্রন্থমেলার। এমন আয়োজনে জ্ঞান চর্চা বিকশিত হোক, দেশ হোক সমৃদ্ধশালী, বিজ্ঞানময় ও শিষ্টাচারপূর্ণ। অমর হোক, কালজয়ী একুশে গ্রন্থমেলা।

লেখক: শিক্ষার্থী; জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়

বইমেলা সাজুক তারুণ্যের ছোঁয়ায় 

শাহিনূর পারভীন

রঙিন বই তাঁকে তাঁকে সাজায় থরে থরে। নতুন বই আর রঙ্গের ঘ্রানে ফিরে আসে বার বার একুশে বইমেলা, বাংলা একাডেমির প্রাঙ্গন জুড়ে। বইয়ে লেখা শব্দ, বাক্য, গল্প, কবিতা মানুষকে নিরবে হাসায়, কাঁদায়, ভাবায়। সঠিক জীবন গড়তে সাহায্যও করে। একটি ভালো বই নিঃসন্দেহে ভালো বন্ধু আর সেই ভালো বন্ধুটি যদি শিশু কিশোর বয়স থেকেই সঙ্গী হয় তাহলে জীবন সঠিক দিকে এগুবে এটা নিশ্চিত। মোবাইল ও মাদকের আসক্তিতে তরুণ সমাজ ডুবে যাচ্ছে গভীর অন্ধকারে। এমন চলতে থাকলে, দেশ ও জাতির জন্য অনেক বড় হুমকি হয়ে দাঁড়াবে আগামীর দিনগুলোতে। মোবাইল ও মাদকের আসক্তি থেকে অনেকটা বের করে আনতে পারে আনন্দ মুখর বইমেলা এবং লেখকের ভালো মানের বই। এ আনন্দের ভাগ ছড়িয়ে দিতে হবে শহর থেকে প্রত্যন্ত গ্রামেও যেখানে এখনো আলোর নিচে অন্ধকার। বই মেলা সার্বজনীন তাই সকল শ্রেণী পেশার মানুষে লোকারন্য থাকে। লেখক, পাঠক, প্রকাশকের সুন্দর এক মিলন মেলার কেন্দ্র বিন্দু এই বইমেলা। বই মেলার আমেজ ও নতুন বইয়ের ঘ্রাণ যেনো ফেব্রুয়ারী মাসেই মফস্বলের শিক্ষার্থিদের হাতেও পৌঁছায় সেই ভাবনায় এগিয়ে যেতে হবে রাষ্ট্র ও তরুণ প্রজন্মকেই। বাংলাদেশে বর্তমানে কতজন কবি-লেখক আছেন, বই মেলা উপলক্ষে  প্রতি বছর কোন কোন লেখকের বই প্রকাশ হচ্ছে এবং কোন বিষয়ের উপর লিখেছেন তাঁর একটা তালিকা মেলায় সীমাবদ্ধ না রেখে সমগ্র বাংলাদেশ ছড়িয়ে পড়ুক এই প্রত্যাশায়।

লেখক: শিক্ষার্থী; কাচিকাটা মোহাম্মাদিয়া গার্লস দাখিল মাদরাসা

চিন্তাশীল জাতি গঠনে বই অন্যতম উৎস

মোফাজ্জল হোসেন

বই মননশীলতার পরিচায়ক। জ্ঞানকে সমৃদ্ধ করতে এবং জ্ঞানের পরিধি বাড়াতে বইয়ের ভূমিকা অশেষ। বই মানুষের মনকে উজ্জীবিত করে, আলোকিত মানুষ গড়ে তোলে এবং মানুষকে বিনয়ী বানায়। সভ্য জাতি হিসেবে গড়ে উঠতে হলে বই পড়ার কোনো বিকল্প নেই। কেননা যে জাতি যত বেশি বই পড়ে, সে জাতি তত বেশি সভ্য হয়। নিয়মিত বই পড়লে মস্তিষ্কের ব্যায়াম হয় এবং ব্রেইন সচল হয়। এক গবেষণায় দেখা গেছে – “নিয়মিত বই পড়লে মস্তিষ্কের জটিল কোষগুলো উদ্দীপিত হয় ও স্নায়ুগুলো উজ্জীবিত হয় এবং আলঝাইমার ও ডিমেনশিয়ার মতো মানসিক রোগের প্রক্রিয়া হ্রাস হয়।” নিয়মিত বই পাঠের অভ্যাস মানসিক চাপ কমাতে, দুশ্চিন্তা ও মনের বিষন্নতা দূর করতেও বেশ কার্যকরী। বিখ্যাত নাট্যকার ও ঔপন্যাসিক ডাব্লিউ সমারসেট মাঘাম বলেছেন – “বই পড়ার অভ্যাস অর্জন করা মানে জীবনের প্রায় সমস্ত দুঃখ-কষ্ট থেকে নিজের জন্য একটি আশ্রয় তৈরি করা।” বই পাঠের অভ্যাস চিন্তার জগতকে প্রসার করতে এবং লেখার দক্ষতা বৃদ্ধিতেও সহায়তা করে। যে যত বেশি বই পড়বে, সে তত বেশি লেখায় দক্ষতা অর্জন করবে এবং তার বিবেকবোধ জাগ্রত হবে। আর বিবেকবান জাতি কখনো স্বার্থলোভী হয় না, বরং সে মানুষ ও দেশের কল্যাণে কাজ করে। বই পড়ার অভ্যাস গড়ে তুলতে এবং অন্যদেরকেও বই পাঠে উদ্বুদ্ধ করতে, প্রতি বছরের আয়োজিত ‘একুশের বইমেলা’ নিরলসভাবে কাজ করে যাচ্ছে। আমি মনে করি, “একুশের বইমেলার অনবদ্য উদ্যোগ স্ক্রিন আসক্ত নবীন প্রজন্মকে বই পাঠে আগ্রহী করে তুলবে।” তাই আসুন বই পড়ি, সুস্থ-সুন্দর জীবন গড়ি এবং বইমেলাকে আরো উপভোগ্য করি।

লেখক: শিক্ষার্থী; ইউরোপিয়ান ইউনিভার্সিটি অব বাংলাদেশ

বইমেলা শুধু ঘুরতে আসার জায়গা নয়, হয়ে উঠুক জ্ঞানচর্চার ক্ষেত্র

প্রজ্ঞা দাস

ফেব্রুয়ারি মানেই বইপ্রেমীদের কাছে অন্যরকম উত্তেজনা। নতুন বইয়ের গন্ধ, পাঠকদের ভিড়, লেখকদের সাথে মত বিনিময়ের সুযোগ, নতুন নতুন বইয়ের সংগ্রহ করা। বইমেলা বাঙালির প্রাণের উৎসব। ভাষা সংগ্রাম থেকে শুরু করে স্বাধীনতা সংগ্রাম বুকে ধারণ করা বাঙালির বইমেলা যেন এক টুকরো সংস্কৃতির প্রতিচ্ছবি। বইমেলা কেবল বই কেনাবেচার স্থান নয়, এটি একটি জ্ঞান ও সৃজনশীলতার মিলনমেলা। লেখক এবং পাঠক উভয়ই সারাবছর এই একটি মাসের জন্য অধীর আগ্রহে অপেক্ষা করেন। লেখকদের মূল উদ্দেশ্য লেখা ছড়িয়ে দেওয়া, পাঠকদের উচিত তা সাদরে গ্রহণ করা। এই দুইয়ের মাঝে সুসম্পর্ক স্থাপনের অন্যতম মাধ্যম হলো বইমেলা। প্রতিটি বই একেকটি নতুন ভাবনার দ্বার উন্মোচন করে, নতুন দৃষ্টিভঙ্গি দেয়, চিন্তাকে শাণিত করে, মনের অন্ধকার-গ্লানি দূর করে, বুদ্ধিবৃত্তিক চর্চার বিকাশ ঘটায়। আর বইমেলা সেই সুযোগ এনে দেয়, যেখানে পাঠক তাদের কৌতূহল মেটাতে পারে, জ্ঞানের বিচ্ছুরণ ঘটাতে পারে। তবে দুঃখজনক বাস্তবতা হলো, অনেকেই এখন বইমেলাকে শুধুই আড্ডা ও ঘুরতে আসার জায়গা হিসেবে দেখেন। অথচ বইমেলা কেবল ঘোরাঘুরির স্থান নয়, এটি হতে পারে গভীর জ্ঞানচর্চার এক উন্মুক্ত মঞ্চ। যদি পাঠকরা বইয়ের গভীরে ডুবে যেতে পারে, তবে বইমেলা হয়ে উঠবে সৃজনশীলতার উৎসমুখ। তাই বইমেলা হোক শুধু ঘোরাঘুরির জন্য নয়, হয়ে উঠুক জ্ঞানের আলো ছড়ানোর এক মহাসমাবেশ। পাঠকের আত্মোন্নয়ন ও মানসিক উৎকর্ষ সাধনের পথ। বইমেলা হোক প্রকৃত পাঠকের মিলনস্থল, জ্ঞানপিপাসুদের পাঠশালা। আমরা যেন কেবল ঘুরতেই না আসি, বইয়ের গভীরে প্রবেশ করি, নতুন জ্ঞান আহরণ করি। যা ভবিষ্যতে জ্ঞানসমৃদ্ধ জাতি গঠনে ভূমিকা রাখবে।

লেখক: শিক্ষার্থী; ইডেন মহিলা কলেজ

বইয়ের সাথে প্রণয়ের পথ

সামিন ইয়াসার

বই আমাদের পরমবন্ধু। যেই বন্ধু আমাদের দেয় আনন্দ, কল্পনাশক্তিকে করে প্রখর এবং জ্ঞানের সাগরে নিয়ে যেতে অবদান রাখে অতুলনীয়। বর্তমান সময়ে মোবাইল ফোনের প্রতি আসক্তি, সোশ্যাল মিডিয়ার পিছনে অহেতুক সময় ব্যয়ের জন্য শুধুমাত্র মোবাইল ফোন কিংবা সোশ্যাল মিডিয়াই দায়ী না। বরং একজন শিক্ষার্থীর উপর পড়াশোনার চাপও ওতপ্রোতভাবে জড়িত। প্রতিটি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের শিক্ষার্থীদের উপর যেই পরিমাণ পড়াশোনার চাপ ভর করে আছে, এতে করে তাঁরা দিনের অধিকাংশ সময়ই ব্যয় করছে পাঠ্যবইয়ের পিছনে। মূলত, মূল বিপত্তি হলো অন্যখানে। শিক্ষার্থীরা তাঁদের পড়াশোনাকে খুব গুরুতরভাবে গ্রহণ করছে, যা সত্যিই প্রশংসনীয়। তবে, এমন একটা অবস্থা আমাদের সম্মুখে এসে দাঁড়িয়েছে যেন, পড়াশোনায় কখনও একটু অবনতি হলেই যেন তাঁরা জীবনযুদ্ধে ঢের পিছিয়ে গেল। এরকম মনে হয় কারণ, আমরাই তৈরি করেছি এমন সব ধারণা। সেই কারণেই বই পড়া কিংবা পড়াশোনা একটি ভীতির কারণ হয়ে দাঁড়িয়েছে তরুণ প্রজন্মের নিকট। অথচ বই আমাদের সুহৃৎ, বই পড়ে আমরা জ্ঞানার্জন করতে পারি, বিভিন্ন প্রখ্যাত মানুষের জীবনী, দেশ-বিদেশের ইতিহাস, রাজনীতি আরও কত কী সম্পর্কে জানতেও পারি। নিজেদের ভেতরের জ্ঞান আরও বেশি উজ্জীবিত করতে বই পড়া অত্যন্ত জরুরী। বইমেলা কেবলমাত্র বই কেনার স্থানই নয়, বরং এক অপূর্ব সুযোগ নবীন-প্রবীন লেখকদের সহিত পরিচিত হওয়ার। নবীন লেখকদের থেকে জানতে পারি তাঁরা কীভাবে লেখালেখিতে উদ্বুদ্ধ হয়েছে, কী করে অনুপ্রাণিত হয়েছে -সে সম্পর্কে। অপরদিকে, প্রবীন লেখকদের নিকট পরামর্শ নিতে পারি কীভাবে বই পড়ায় নিজেদের উৎসাহ দিব এবং কী করে বইয়ের সাথে প্রণয় সৃষ্টি করা যায়। সেখানে অপার বইয়ের ভীড়ে বিভিন্ন ধারার বই পরখ করে দেখলে অথবা সেইসব বইয়ের কিছু পৃষ্ঠা পড়লেও শিক্ষার্থীরা বইয়ের প্রতি আগ্রহী হতে পারে। তবে বইমেলা-ই যথেষ্ট নয়। স্কুল-কলেজসহ বিশ্ববিদ্যালয়গুলোতেও বইয়ের প্রতিযোগিতামূলক আয়োজন করা এবং আকর্ষণীয় পুরষ্কারের ব্যবস্থা থাকা উচিৎ বলে মনে করি। এতে করে শিক্ষার্থীরা এসব অনুষ্ঠানে অংশগ্রহণ করতে আগ্রহ প্রকাশ করবে এবং বই পড়ার প্রতি যেই অনীহা তা-ও দূর হবে। আমাদের উচিৎ বইকে খাঁচায় বন্দী না করে, মুক্ত ঘোড়ার ন্যায় ছেড়ে দেওয়া। যেন সবাই তাঁকে ছুঁতে পারে, ব্যাঘ্রের ন্যায় ভয় না পায়। তবেই বই পড়ার প্রেরণা তৈরি হবে এবং বই ও মানুষ থাকবে একই সাথে, ঠিক যেমন অংস আলিঙ্গন করে থাকে অশ্বপিঠে।

লেখক: শিক্ষার্থী; ইস্ট ওয়েস্ট ইউনিভার্সিটি

“বই ও বইমেলার আলোয় শিক্ষার্থীর জ্ঞানের পদচারণা”

আফিয়া আলম

বই মনের খোরাক। আর বইমেলা সেই বইয়ের প্রদর্শনক্ষেত্র। প্রতিবছরই ফেব্রুয়ারি মাস উপলক্ষে অমর একুশে বইমেলার আয়োজন করা হয়। নানা ধরনের বই থাকে সেইখানে। সাইন্স ফিকশন, সাহিত্য, শিক্ষামূলক, দক্ষতামূলকসহ প্রায় সর্বপ্রকার বই পাওয়া যায়। সব বয়সের মানুষই এই বইমেলায় আসে, বই দেখা বা ক্রয়ের উদ্দেশ্যে, বিশেষ করে শিক্ষার্থীরা। বইমেলার আকর্ষণে বইমেলায় আসার মাধ্যমে শিক্ষার্থীরা বই পড়ার প্রতি আগ্রহী হয়ে পড়ে এবং আগ্রহ বাড়ে তাদের জ্ঞান আহরণের প্রতিও। জ্ঞান আহরণের পিপাসায় তারা জ্ঞানচর্চা করতে শুরু করার ইচ্ছা পোষণ করে। পড়ার ইচ্ছা থেকে তারা পড়াশোনায় মনোযোগী হয়। তারা বই ক্রয় করে ও বই পড়তে শুরু করে। দিনে দিনে জ্ঞান অর্জন করতে করতে তারা ধীরে ধীরে জ্ঞানসাধনা করে। বই সম্পর্কে তাদের ধারনা বাড়ে। তারা তাদের কীসের প্রতি আগ্রহ বেশি সেই সম্পর্কেও জানতে পারে। আর তারা সেই ধরনের বই পড়ে অধিক  পরিমাণে, যে বিষয়ে সে আগ্রহী। কোনো কিছু না দেখলে সেই সম্পর্কে আমারা জ্ঞাত হয়না আর জানতেও পারিনা। বইমেলায় বই প্রদর্শনীর মাধ্যমে বই সম্পর্কে তাদের ধারনা হয়, তারা বই পড়তেও চায়। গবেষণার ক্ষেত্রেও সহায়ক এই বই ও বইমেলা। শিশু থেকে বয়স্ক লোকেরাও বই পড়তে আগ্রহী হয়। এজন্য বইমেলা হলো আমার ভাবনায় জ্ঞান অর্জন করার অন্যতম মাধ্যম।

লেখক: শিক্ষার্থী; ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয়, কুষ্টিয়া

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *