class="post-template-default single single-post postid-14232 single-format-standard wp-custom-logo group-blog vl-boxed aa-prefix-matin-">
Shadow

কলকাতার খবর : ধান কাটা শেষ হলেই দ্রুত ছোলা বুনুন

ছোলাএ বছর দেরিতে বৃষ্টি আসায় আমন ধান রোয়া করতে কোথাও আগস্টের শেষ, কোথাও আবার সেপ্টেম্বরের প্রথম সপ্তাহ হয়ে গিয়েছে। ফলে যেখানে জলের টান ছিল, সেখানেই ধান নাবি হয়ে গিয়েছে। ফসল উঠতে দেরি হয়েছে। স্বাভাবিকভাবে এখনও পর্যন্ত যা পরিস্থিতি তাতে ধান কাটার কাজ পুরোপুরি শেষ করতে ১০-১৫দিন সময় লেগে যাবে। এই পরিস্থিতিতে চাষিদের জন্য কৃষি আধিকারিকদের সুপারিশ, এখন শিশির ভালো আছে। ফলে যেখানে একটিও সেচ দেওয়ার সুযোগ রয়েছে, সেখানে জমি ফেলে না রেখে ছোলা চাষ করা যেতে পারে। সেক্ষেত্রে কৃষকের হাতে যেমন বাড়তি টাকা আসবে, তেমনই জমির উর্বরতাও বাড়বে।
বাজারে ছাতুর দারুণ চাহিদা। ফলে ছোলা চাষে ‘অভাবি বিক্রি’-র কোনও আশঙ্কা নেই, আশ্বস্ত করছেন কৃষি আধিকারিকরা। তবে এখন ছোলা চাষ করতে হলে বীজের পরিমাণ একটু বাড়াতে হবে। সাধারণভাবে ছোলা চাষে যেখানে বিঘাতে ৬ কেজির মতো বীজ লাগে, সেখানে বিঘাপ্রতি আরও এক থেকে দেড় কেজি বেশি বীজ লাগবে। তাতে অঙ্কুরোদগম ভালো হবে। বীজের সঙ্গে রাইজোবিয়াম কালচার মিশিয়ে নিতে পারলে ভালো। ছড়িয়ে বুনতে হবে। বীজ ছড়ানোর ২৫-৩০দিন পর বাড়তি গাছ তুলে ফেলার জন্য একবার নিড়ানি দিয়ে নিতে হবে। প্রতি বর্গমিটারে ৪০টির মতো গাছ থাকলে ফলন ভালো হবে। মুসুর ডাল চাষ শুরুর সময় প্রায় শেষ হয়ে গিয়েছে। তবুও যাঁরা মুসুর চাষ করতে চান, তাঁদের ৫-৭দিনের মধ্যে বীজ ছড়িয়ে দিতে হবে।
অনীহা কাটিয়ে আরও বেশি করে ডালশস্য চাষে কৃষকদের উৎসাহিত করছে রাজ্যের কৃষিদপ্তর। কৃষিবিদদের সুপারিশ, সারা বছর ধরে যে জমিতে চাষ করা হয়, সেখানে একটি ফসল হিসেবে অবশ্যই ডাল চাষ করতে হবে। এতে যেমন জমির উর্বরতাশক্তি বৃদ্ধি পায়, তেমনই কৃষকের বাড়তি আয় সম্ভব হয়। সর্ষে, তিসি ও গমের সঙ্গে একই জমিতে ডাল চাষ করা যেতে পারে। এতে লাভের পরিমাণ বাড়বে। রাই সর্ষে, তিসি ও গমের সঙ্গে ছোলার ডাল মিশ্র ফসল হিসেবে চাষ করা যায়। এতে রোগপোকার আক্রমণ কমে। আবার আখের সঙ্গে ছোলা চাষ করা যায় সাথী ফসল হিসেবে। সর্ষের সঙ্গে ছোলা ১: ৪ অনুপাতে সারিতে অন্তর্বর্তী ফসল হিসেবে চাষ করা যেতে পারে। মুসুর ডালও গম, সর্ষে ও তিসির সঙ্গে মিশ্র ফসল হিসেবে চাষ করে বাড়তি আয় করা সম্ভব। প্রতি হেক্টরে ২০-২২ কেজি মুসুর ও আড়াই কেজি তিসি মিশ্রভাবে ছিটিয়ে বুনলে মুসুরের ঢলে পড়া রোগ কম হয় বলে জানিয়েছেন কৃষি বিশেষজ্ঞরা। আখ, তিল, তোসা পাটের সঙ্গে সাথী ফসল হিসেবে মুগ ডাল চাষ করলে অপেক্ষাকৃত বেশি লাভ পাওয়া যায়। অড়হর, তুলো, জোয়ার, ভুট্টা প্রভৃতির সঙ্গেও মুগ চাষ করা যেতে পারে। ভুট্টা, বাজরা ও জোয়ারের সঙ্গে চাষ করলে হলুদ কুটে রোগ ও শুঁটি ছিদ্রকারী পোকার আক্রমণ কমে।
যেসব কৃষক আমনের জমিতে পয়রা পদ্ধতিতে ডাল চাষ করেছেন, তাঁদের প্রাথমিক সার হিসেবে নাইট্রোজেন প্রয়োগ করতে হবে না বলে জানাচ্ছেন কৃষিবিদরা। তাঁদের সুপারিশ, যদি দেখা যায় গাছের ভালো বৃদ্ধি হচ্ছে না, তা হলে ডালের বীজ বোনার ২০-২৫ দিন পর বিঘা প্রতি ৬ কেজি ইউরিয়া প্রয়োগ করা যেতে পারে। এইসময় জমিতে সিঙ্গল সুপার ফসফেট প্রয়োগ করলে মাটিতে যদি ফসফেট ও সালফারের ঘাটতি থাকে, তা হলে তা মিটে যায়। ডালশস্যের ফুল ফোটার ১০দিন আগে ইউরিয়া ২ শতাংশ (প্রতি লিটার জলে ২০গ্রাম) বা তরল সার এনপিকে ১৯:১৯:১৯ সাড়ে সাত গ্রাম প্রতি লিটার জলে গুলে স্প্রে করা যেতে পারে। হেক্টর প্রতি এই দ্রবণ ৭০০-৮০০লিটার লাগে। শুঁটি আসার সময় আর একবার স্প্রে করে দিতে পারলে ভালো। অম্লযুক্ত মাটিতে বোরন ও মলিবডেনামের ঘাটতি থাকে। এক্ষেত্রে বোরাক্স ২ গ্রাম ও অ্যামোনিয়াম মলিবডেট বা সোডিয়াম মলিবডেট ০.৫ গ্রাম প্রতি লিটার জলে গুলে ফুল আসার আগে গাছে স্প্রে করতে পারলে ভালো ফল পাওয়া যায়।
মাটিতে সালফারের ঘাটতি থাকলে পটাশিয়াম সালফেট ১.২৫ শতাংশ (প্রতি লিটার জলে ৫০গ্রাম) বা অ্যামোনিয়াম সালফেট ১ শতাংশ (প্রতি লিটার জলে ১০গ্রাম) দ্রবণ আলাদাভাবে সোহাগা দ্রবণের সঙ্গে মিশিয়ে মাটিতে প্রয়োগ করলে সুফল মেলে। মাটিতে জিঙ্কের অভাব থাকলে ০.৫ শতাংশ জিঙ্ক সালফেট এবং ০.২৫শতাংশ চুন সহযোগে পাতায় স্প্রে করতে হবে ৩৫-৪০দিনের মাথায়। মাটিতে রসের টান ধরলে ফুল অবস্থায় এবং শুঁটি ধরার সময় জলসেচ দিতে হবে। এর জন্য হেক্টর প্রতি ৭০০-৮০০লিটার জল লাগে। পয়রা ফসল হিসেবে হেক্টরে প্রায় ১৬ কুইন্টাল ডাল উৎপাদন হয়। মটরের ক্ষেত্রে ১৮ কুইন্টাল পর্যন্ত ফলন পাওয়া যেতে পারে।
কৃষিবিদরা বলছেন, ডালের জমিতে জীবাণুসার প্রয়োগ অত্যন্ত জরুরি। গবেষণায় দেখা গিয়েছে, কৃষি জমির ১ গ্রাম মাটিতে ১০ কোটিরও বেশি জীবাণু থাকে। এর মধ্যে ৫ শতাংশ অপকারি জীবাণু। এবং ৯৫ শতাংশ উপকারি জীবাণু। জীবাণুসার প্রয়োগের মাধ্যমে উপকারি জীবাণুর সংখ্যা বৃদ্ধি করা যায়। ফলে তারা বেশিমাত্রায় ফসলের জন্য প্রয়োজনীয় খাদ্য উপাদান সরবরাহ করে থাকে।

শীত পড়লেই ছোলা বুনতে হবে

শীত পড়তে শুরু করেছে, এখনই ছোলার বীজ বোনার আদর্শ সময়। বেশি ঠান্ডা বা অত্যধিক বৃষ্টি ছোলা চাষের পক্ষে অন্তরায় হয়ে দাঁড়ায়। অম্লধর্মী মাটি ছাড়া যে কোনও ধরনের মাটিই ছোলা চাষের অনুকূল। তবে দো-আঁশ ও বেলে-দো-আঁশ মাটিতে ভালো ফলন ফলে। শর্ত একটাই, জল নিকাশের সুব্যবস্থা থাকা চাই। আমাদের রাজ্যের আবহাওয়ার পক্ষে কয়েকটি উন্নত জাতের ছোলার বীজ হল মহামায়া-১ (বি-১০৮), মহামায়া-২ (বি-১১৫) ও অনুরাধা। অনুরাধা যেমন তাড়াতাড়ি ফলে, ফলনও হয় বেশি। ফলনের পরিমাণ প্রতি হেক্টরে ২২ থেকে ২৫ কুইন্টাল। মহামায়া-১ ও মহামায়া-২ ফলতে একটু বেশি সময় লাগে, ফলনের পরিমাণ হেক্টর প্রতি ২০ থেকে ২৪ কুইন্টাল।
নভেম্বরের ১৫ থেকে ৩০ তারিখের মধ্যে ছোলার বীজ বোনার উৎকৃষ্ট সময়।
তিনভাবে ছোলার চাষ করা যায়, বীজ বুনে, বীজ ছিটিয়ে বা সারি করে। সারি করে বুনলে একর প্রতি ১২ থেকে ১৮ কিলোগ্রাম বীজের দরকার হয়। ছিটিয়ে বুনলে একর প্রতি ২২ থেকে ২৫ কিলোগ্রাম বীজের দরকার হয়। সময় মতো বীজ বুনলে শুঁটি ছিদ্রকারী পোকার আক্রমণ থেকে রক্ষা পাওয়া যায়। এককভাবে ছাড়াও আখ, সরিষা ও গমের সঙ্গেও সঙ্গী ফসল হিসাবেও ছোলার চাষ করা যায়। সঙ্গী ফসল হিসাবে চাষ করলে রোগ পোকার আক্রমণের হাত থেকে অনেকটাই রক্ষা পাওয়া যায়।
বীজ বোনার এক সপ্তাহ পূর্বেই বীজ শোধন করে নিতে হবে। কার্বেন্ডাজিম ও থাইরাম ১:২ অনুপাতে মিশিয়ে প্রতি কিলোগ্রাম বীজে ৩ গ্রাম করে মিশিয়ে, বীজ শোধন করতে হবে। বীজ শোধন করলে গাছে ছত্রাকের আক্রমণের ভয় থাকে না।
ছোলা গাছের শিকড় মাটির অনেকটা গভীরে যায় বলে একটু গভীর করে লাঙলের চাষ দিতে হবে। ২-৩ বার চাষ করবার পর, আগাছা বেছে, মই দিলেই জমি তৈরি হয়ে গেল। জমিতে প্রয়োজন অনুযায়ী জীবাণুসার ও জৈব সার প্রয়োগ করা যেতে পারে। জমি যদি শুকনো থাকে তবে বীজ বোনার সাতদিন আগে একবার সেচ দিতে হবে। তারপর বীজ বোনার ৪৫ থেকে ৬০ দিন পর একবার এবং ১০০-১১০ দিনের মাথায় আরেকবার সেচ দিতে হবে। ফসল কাটা হয় সাধারণত চৈত্র মাসে। তখন পাতাগুলো শুকিয়ে যায় এবং শুঁটিও পুষ্ট হয়ে ধূসর রংয়ের হয়। তখন গাছ তুলে রোদে শুকিয়ে খোসা আলাদা করে ছোলা সংগ্রহ করা হয়।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Please disable your adblocker or whitelist this site!