ক্রিকেট বাংলাদেশকে অনেক কিছুই দিয়েছে। বিশ্বব্যাপী পরিচয়, এশিয়ান গেমসের সোনা। কিন্তু সাকিব আল হাসান, মাশরাফি বিন মুর্তজারাও একটি অতৃপ্তি রেখে দিচ্ছিলেন বারবার। আন্তর্জাতিক ক্রিকেটে কোনো শিরোপা জিতে উৎসবের সুযোগ করে দিতে পারেননি তাঁরা। কিন্তু ছেলেদের অতৃপ্তি ঘোচালেন মেয়েরা। রুমানা-আয়েশাদের হাত ধরে আন্তর্জাতিক ক্রিকেটে প্রথম শিরোপা পেল বাংলাদেশ। ভারতকে ৩ উইকেটে হারিয়ে সপ্তম এশিয়া কাপ জিতে নিয়েছে বাংলাদেশ।
আইসিসি ও এসিসি ট্রফি নামে দুটো শিরোপা ছেলেরা এনে দিয়েছিলেন বিংশ শতাব্দীতে। কিন্তু সেগুলো আন্তর্জাতিক ক্রিকেটের অর্জন নয়। আন্তর্জাতিক ক্রিকেটে বাংলাদেশ কোনো শিরোপা জয়ের কাছাকাছি গিয়েছে দুবার। ২০১২ সালের এশিয়া কাপ আর ২০১৮ সালের নিদাহাস ট্রফি, দুবারই শিরোপার গন্ধ পেতে পেতেও শেষ বলে এসে দীর্ঘশ্বাস সঙ্গী হয়েছে বাংলাদেশের। ২০১৬ সালের এশিয়া কাপ টি-টোয়েন্টিতে ফাইনালে গিয়েও হারতে হয়েছে ধোনি-কোহলিদের উত্তুঙ্গ ফর্মের কাছে।
এবারও ২০১২ সালের স্মৃতিটা ফিরে এসেছিল। শেষ ওভারে ৯ রান দরকার। পাকিস্তানের বিপক্ষে সে ফাইনালই কি ফিরে এল! প্রথম ৩ বলে ৬ রান তুলে রুমানা আহমেদ আশা জাগালেন। কিন্তু পর পর দুই বলে উইকেটে থাকা দুই ব্যাটার সানজিদা ও রুমানা আউট হয়ে গেলেন। শেষ বলে দরকার ২ রান। আবারও আরেকটি হতাশার গল্প লিখতে হবে? লিখতে হবে আরেকটি দীর্ঘশ্বাস ফেলার কথা। ছন্দময় কথার গাঁথুনিতে লুকাতে হবে অশ্রুতে বাধ দেওয়ার চেষ্টার কথা?
কিন্তু জাহানারা সে কষ্ট দিতে রাজি হলেন না। ভারত অধিনায়ক হারমানপ্রীত কাউরের বল মিড উইকেট দিয়ে পাঠিয়েই ভোঁ দৌড়। ছুট ছুট ছুট। বাঁধা ভাঙা এক দৌড়ে এশিয়ার ক্রিকেটের হিমালয় সমদূরত্বে থাকা ভারতকে স্তব্ধ করে দিয়ে দৌড়াতেই থাকলেন জাহানারা, অন্যপ্রান্তে সালমা। সে দৌড়টা যখন থামল, ততক্ষণে ইতিহাস হয়ে গেছে। মাঠে ঢুকে গেছেন রুমানা-সানজিদারা। বাংলাদেশের দুঃখের অবসান ঘটল আজ, একটি আন্তর্জাতিক ট্রফি উচানোর দৃশ্য দেখালেন মেয়েরা। টানা ছয়বারের চ্যাম্পিয়নদের হারিয়েই বাংলাদেশকে অমৃত স্বাদ এনে দিলেন রুমানা-সানজিদা-আয়েশারা।