রোজেল: দেশে নতুন ইন্ডাস্ট্রিয়াল উদ্ভিদের নতুন সম্ভাবনা - Mati News
Thursday, December 25

রোজেল: দেশে নতুন ইন্ডাস্ট্রিয়াল উদ্ভিদের নতুন সম্ভাবনা

বাকৃবি প্রতিনিধি: দেশের ক্ষুদ্র ও মাঝারি উদ্যোক্তাদের জন্য নতুন সম্ভাবনাময় একটি ফসল রোজেল যা বাংলায় চুকোর বা টক গাছ নামে পরিচিত। বীজ বপনের ২শ ২০ দিন পর গাছ প্রতি গড়ে ৫শ গ্রাম থেকে ১ কেজি পর্যন্ত কাঁচা ফল এবং ১শ ৫০ থেকে ৪শ গ্রাম বৃতির ফলন পাওয়া যায়। এছাড়া হেক্টর প্রতি তিন থেকে সাত টন পর্যন্ত ফলন পাওয়া যায়। এই ফল এবং মাংসল বৃতি থেকে জ্যাম, জেলী, চা, আচার, চাটনী, জুসসহ বিভিন্ন পানীয় উৎপাদন করা যায় ও রান্নাতেও ব্যবহার করা যায়। 

শুক্রবার (২৮ নভেম্বর) বাংলাদেশ কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়ের (বাকৃবি) ফসল উদ্ভিদ বিজ্ঞান বিভাগে আয়োজিত রোজেল নিয়ে এক প্রদর্শনীতে এসব তথ্য জানান বিভাগটির অবসরপ্রাপ্ত অধ্যাপক ও “রোজেল উদ্ভিদের পাতা ও বৃতি উৎপাদন, প্রক্রিয়াজাতকরণ, সংরক্ষণ ও ব্যবহারের কলা-কৌশল” প্রকল্পের প্রধান গবেষক ড. মো. ছোলায়মান আলী ফকির। 

এসময় তিনি রোজেলের উৎপাদন, চাষ পদ্ধতি, খাদ্যে ব্যবহার, ঔষধি ব্যবহার, পশু খাদ্য হিসেবে ব্যবহার সম্পর্কে জানান।

অধ্যাপক বলেন, এই উদ্ভিদটি পতিত জমিতে চাষাবাদ করা যায়। এটি আমাদের দেশে অপ্রচলিত একটি উদ্ভিদ। আমার লক্ষ্য কোনো জমি যাতে পতিত না থাকে। এ কারণেই আমি পতিত জমিতে চাষাবাদ উপযোগী অপ্রচলিত কিন্তু ব্যাপক পুষ্টিগুণ সম্পন্ন উদ্ভিদ নিয়ে দীর্ঘদিন ধরে গবেষণা পরিচালনা করে আসছি। 

তিনি বলেন, রোজেল খাদ্য হিসাবে স্বাদে ও ভেষজ গুনে অনন্য। বাড়ীর আশে-পাশে রৌদ্রময় বা আংশিক ছায়াযুক্ত উঁচু জায়গাতে চার থেকে পাঁচটি রোজেল উদ্ভিদ থাকলে একটি পরিবারের জন্য চা, জ্যাম, জুস, আচার ইত্যাদির পারিবারিক চাহিদা মেটানো সম্ভব। শুধু তাই নয় রোজেল ভিত্তিক খাদ্য ও পানীয় ছোট-মাঝারী আকারের শিল্পের যথেষ্ট সম্ভাবনা রয়েছে। 

রোজেলের পুষ্টিগুণ নিয়ে তিনি বলেন, জাত অনুসারে লাল ও সবুজ রোজেল পাওয়া যায়। তবে লাল রোজেলে এ্যান্থোসায়ানিন, ফ্লাভনয়েড, ক্যারোটিনসহ অন্যান্য অ্যান্টিএক্সিডেন্ট ও আমিষ, চর্বি বিদ্যমান যা উচ্চ রক্তচাপ, ডায়াবেটিসসহ বিভিন্ন রোগ উপসম করে বলে গবেষণায় জানা গিয়েছে। মৌলিক পুষ্টি উপাদান বিশ্লেষণে দেখা যায় পাতায় ও বৃতিতে প্রোটিন, চর্বি, ফাইবার ও মিনারেলস থাকে। রোজেল বৃতিতে ৩-৪ গ্রাম প্রতি লিটার টোটাল অরগ্যানিক এসিড থাকে। এই অর্গানিক এসিডের উপস্থিতিতে বৃতি ও পাতা টক স্বাদ হয়। এই উদ্ভিদের শুকনা পাতা ও বৃতিতে সহজে ছত্রাক বা জীবানু আক্রমন করে না ফলে এটা ছত্রাক-ব্যাকটেরিয়া প্রতিরোধকারী। রোজেল সেবনের নির্দিষ্ট কোনো মাত্রা নেই কারণ এর পুরোটাই প্রাকৃতিক খাদ্য উপাদান সম্পন্ন। তাই এর তেমন কোনো প্বার্শ প্রতিক্রিয়া নেই।

rosel BAU

এছাড়া রোজেলের অন্যান্য ব্যবহারের মধ্যে আশ উৎপাদন, পশুখাদ্য ও বায়োমাস হিসেবে ব্যবহারের কথা উল্লেখ করেন। তিনি বলেন, রোজেলের কান্ড ও শাখা থেকে পাটের মত আঁশ উৎপাদন ও ব্যবহার করা যায়। এ গোত্রীয় মেস্তা পাট আঁশের জন্য উৎপাদন ও ব্যবহার হয়ে আসছে। পরিপক্ক রোজেল বীজে প্রায় ২০ শতাংশ আমিষ ও ২০ শতাংশ চর্বি আছে যা প্রক্রিয়াকরণের পর পশুখাদ্য হিসাবে ব্যবহারের প্রচলন আফ্রিকা মহাদেশ থেকে জানা যায়। ফসল ক্ষেতের বেড়া-উদ্ভিদ হিসাবে রোজেল খুবই কার্যকর। ফসল কর্তনের পর উদ্ভিজ্জ বায়োমাস খড়ি হিসাবে ব্যবহার করা যায়। সুদৃশ্য সবুজ বা লালচে উদ্ভিদ শোভা বর্ধনকারী হিসাবে সুপরিচিত। 

রোজেলের বৈদেশিক মুদ্রা অর্জনের সম্ভাবনা উল্লেখ করে তিনি বলেন, লাল রোজেলের বৃতির রঙ জৈব খাদ্য রঙ হিসেবে ব্যবহার করা সম্ভব। বিদেশে এর ব্যাপক ব্যবহার রয়েছে। বাণিজ্যিকভাবে চাষাবাদ করলে জৈব খাদ্য রঙ বিদেশে রপ্তানি করার ব্যাপক সম্ভাবনা রয়েছে।

অধ্যাপক আরও বলেন, রোজেল ক্যাফেইনমুক্ত। ১:৪, ১:৩ ও ১:২ বিভিন্ন অনুপাতে চায়ের সাথে রোজেল মিশানো হয়েছে। তবে সার্ভেতে অংশ নেয়া প্রায় ৬০ শতাংশ মানুষ চা দিয়ে মেশানো ছাড়া শুধু রোজেল পছন্দ করেছে।

তিনি আরো বলেন, আমার এই গবেষণায় আমার স্ত্রী রাকেয়া তৌফিকা নাজনীন রেসিপি প্রস্তুতি ও প্রক্রিয়াজাতকরণে সাহায্য করেছে। এছাড়া বিভাগটির অধ্যাপক ড. নেছার উদ্দীন, অধ্যাপক ড. আলমগীর হোসেন, অধ্যাপক ড. সবিবুল হক এবং উদ্ভিদ রোগতত্ত্ব বিভাগের অধ্যাপক ড. মো. দেলোয়ার হোসেন যুক্ত ছিলেন। 

********************

আরাফাত হোসাইন

বাংলাদেশ কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়, ময়মনসিংহ

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *