উৎসব-পার্বণ এলে বেড়ে যায় সুগন্ধির ব্যবহার। আর যাঁরা অফিস কিংবা অনুষ্ঠানের যান তাঁদের জন্য ঘর থেকে পা ফেলার আগে সুগন্ধি অপরিহার্য। তাই এর বিক্রিও বেশ ভালো। হাতে কিছু পুঁজি থাকলে আপনিও শুরু করতে পারেন সুগন্ধি উৎপাদন।
সুগন্ধির রকমফের
উৎসভেদে কয়েক প্রকারের সুগন্ধি রয়েছে। যেমন_ফ্লোরাল, মসলা বা স্পাইসি, অ্যালকোহলিক ইত্যাদি। ফুল থেকে যে সুগন্ধি তৈরি হয় সেগুলো ফ্লোরাল গ্রুপের অন্তর্ভুক্ত। স্পাইসি বা মসলা সুগন্ধি লবঙ্গ, দারুচিনি, তেজপাতা, গোলমরিচ, এলাচি প্রভৃতি মসলা থেকে তৈরি হয়। অ্যালকোহলিকজাতীয় সুগন্ধিতে মূলত বিশ্বের নামকরা অ্যালকোহল ব্যবহৃত হয়। এ ছাড়া চামড়া বা তামাক এমনকি বিভিন্ন জাতের গাছের নির্যাস যেমন চন্দন কাঠ, কস্তুরি, জাফরান, আগর, ভ্যানিলা, বালসামের মিষ্টি গন্ধ থেকেও নানা ধরনের সুগন্ধি তৈরি হয়।
কিভাবে তৈরি করবেনএ জন্য অবশ্যই আপনাকে প্রশিক্ষণ নিতে হবে। একেক ধরনের সুগন্ধি তৈরির প্রক্রিয়া একেক রকম। ফ্লোরাল সুগন্ধি তৈরিতে বেলি, রজনীগন্ধা, গোলাপ, হাসনাহেনা ইত্যাদি তাজা ফুলের পাপড়ি ব্যবহৃত হয়। এ সুগন্ধি তৈরি করতে প্রথমে তাজা ফুলের পাপড়ি আলাদা করে পানি দিয়ে পরিষ্কার করতে হবে। এরপর পাপড়িগুলো বিশেষ কাচের পাত্রে পানিতে ১০-১২ দিন রাখতে হবে। একসময় পানির ওপর তেলজাতীয় পদার্থ দেখা যাবে। কয়েক দিন পর তেলজাতীয় পদার্থ ফেনা বেঁধে পানির ওপর ভাসতে থাকবে। বৈজ্ঞানিক পদ্ধতিতে পরিষ্কার তুলা দিয়ে ফেনাগুলো সংগ্রহ করলেই সেখান থেকে তৈরি হবে আতর।
বাজারজাতকরণব্যবসা করার জন্য বৈধ কাগজপত্র তৈরি, প্রশাসনের অনুমতি, সুগন্ধি বানানোর জন্য উপযুক্ত জায়গা নির্বাচন, অভিজ্ঞ লোক নিয়োগ, একই সঙ্গে সুগন্ধির গুণগত মান ঠিক রাখা ইত্যাদি ভেবে রাখতে হবে। এরপর বাজারজাতকরণ নিয়ে ভাবতে হবে। বাজারজাতকরণের ক্ষেত্রে প্রচারের কোনো বিকল্প নেই। ব্যবসা শুরুতে ছোট করে করাই ভালো। অভিজ্ঞতা বাড়লে তখন ব্যবসার পরিধি বাড়াতে হবে। সংবাদপত্র, রেডিও, টেলিভিশনসহ বিজ্ঞাপনের মাধ্যমে সুগন্ধির প্রচারের কাজ করতে পারবেন। এ ছাড়া প্রচার এবং বিক্রির জন্য সুগন্ধির স্যাম্পল বিভিন্ন গিফটশপে দিতে পারেন। পরে চাহিদা অনুযায়ী অর্ডার নিয়ে বিপণনকেন্দ্রগুলোতে সুগন্ধি সরবরাহ করার সুযোগ পাবেন। এ জন্য দোকান মালিকদের সঙ্গে নিয়মিত যোগাযোগ রাখতে হবে।
আয়-ব্যয়৩০ থেকে ৫০ হাজার টাকা মূলধন নিয়ে ব্যবসা শুরু করা যায়। মান অনুযায়ী প্রতি বোতল সুগন্ধি ১০০ থেকে ১০০০ টাকায় বিক্রি করতে পারবেন। আমাদের দেশে সুগন্ধির ভালো বাজার রয়েছে। দেশের পাশাপাশি বিদেশের বাজার ধরার জন্যও চেষ্টা করতে পারেন। বাজার ধরতে পারলে মূলধন নিয়ে ভাবতে হবে না। তিন মাসের মধ্যেই লাভের মুখ দেখবেন আপনি।
জেনে রাখুনসুগন্ধি তৈরির কাঁচামাল সংগ্রহের সময় সাবধানতা অবলম্বন করতে হবে। সুগন্ধির নাম ও প্যাকেট আকর্ষণীয় ও মানসম্পন্ন করার চেষ্টা করুন। সুগন্ধির ঘ্রাণ যেন ভালো হয় সেদিকে লক্ষ রাখুন। কারণ এর ওপরই নির্ভর করবে আপনার ব্যবসা। তাই গুণগত মান বজায় রাখার চেষ্টা করুন।
বিভিন্ন খ্যাতনামা কসমেটিকস, জেনারেল স্টোরের নাম-ঠিকানা ও ফোন নম্বর সংগ্রহে রাখুন। প্রতিষ্ঠানে কর্মী নিয়োগের সময় অবশ্যই অভিজ্ঞতার বিষয়টিকে প্রাধান্য দিন।