Monday, December 23
Shadow

বাবার রিকশায় বাড়ি ফিরল গোল্ডকাপ বিজয়িনী

বিজয়িনী

বঙ্গমাতা ফজিলাতুন্নেছা গোল্ডকাপ টুর্নামেন্টের চ্যাম্পিয়ন দল নান্দাইলের পাঁচরুখী সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়। এই দলের খেলোয়াড়রা বাড়ি ফিরেছে রবিবার ভোরে। রিকশাচালক বাবা এসে নিয়ে যান কৃতী খেলোয়াড় রোকসানাকে।

বঙ্গমাতা ফজিলাতুন্নেছা গোল্ডকাপ টুর্নামেন্টের চ্যাম্পিয়ন দল ময়মনসিংহের নান্দাইল উপজেলার পাঁচরুখী সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়। এই টিমের খেলোয়াড়রা বীরদর্পে এলাকায় ফিরেছে গত রবিবার ভোরে। ওদের ফুলের মালা দিয়ে বরণ করেছেন স্থানীয় সংসদ সদস্য আনোয়ারুল আবেদিন খান তুহিন। আতশবাজি পুড়িয়ে ও পটকা ফুটিয়ে মিষ্টি খাইয়ে শুভেচ্ছা জানিয়েছে এলাকাবাসী। আজ মঙ্গলবার ময়মনসিংহ জেলা প্রশাসক খেলোয়াড়দের সংবর্ধনার আয়োজন করেছেন।

পরিশ্রান্ত খেলোয়াড়রাও সব ক্লান্তি ভুলে মেতেছে আনন্দ উৎসবে। সবার মুখে ছিল বিজয়ের হাসি। এলাকার অনেকেই পুরো টিমের সঙ্গে ছবি তুলতে আবার কেউ বা সেলফি তুলতে ভিড় করে। অনেকের অভিভাবক সন্তানকে বাড়ি নিয়ে যেতে শেষ রাত থেকে সদরে এসে অপেক্ষা করতে থাকেন। অবশেষে রবিবার ভোর ৫টার দিকে মাইক্রোবাসযোগে এলাকায় ফেরে ১৭ সদস্যের চ্যাম্পিয়ন দলটি। অভিভাবকরা তাদের সন্তানদের নিয়ে বাড়ির উদ্দেশে রওনা হন বিভিন্ন যানবাহনে করে। উপস্থিত শত শত মানুষ হাততালি দিয়ে তাদের অভিনন্দন জানায়।

এ সময় সবার দৃষ্টি পড়ে রোকসানার দিকে। সে এক বৃদ্ধের রিকশায় চড়ে বাড়ির দিকে রওনা হয়। পরে জানা যায়, এই রিকশাচালকই তার বাবা আব্দুল জব্বার (৬০)। বয়সের ভারে ন্যুব্জ মানুষটি জীবিকার তাগিদে এখনো রিকশা চালিয়ে যাচ্ছেন। মেয়ের হাতে ট্রফি দেখে তাকে বুকে জড়িয়ে ধরে আদর করেন।

আব্দুল জব্বারের বাড়ি নান্দাইল উপজেলার চণ্ডীপাশা ইউনিয়নের মিশ্রিপুর গ্রামে। গর্বিত এই বাবা জানান, তাঁর চার মেয়ে ও এক ছেলে। তিন মেয়েকে বিয়ে দিয়েছেন। রোকসানা সবার ছোট। তিনি সারা দিন রিকশা চালানোর পাশাপাশি ধর্ম-কর্ম নিয়ে ব্যস্ত থাকেন। এ অবস্থায় মেয়ে ফুটবল খেলতে গিয়ে অনেক প্রশ্নের মুখোমুখি হয়েছে। মেয়েকে ফুটবল খেলা থেকে সরিয়ে আনতে এলাকার অনেকে দিনক্ষণও বেঁধে দিয়েছে। তবে তিনি কখনো মেয়েকে বারণ করেননি। এখন মেয়ের টিম দেশসেরা হয়েছে। এ অবস্থায় নিন্দুকদের দেখিয়ে দিতে তিনি অসুস্থ শরীর নিয়েও নিজের রিকশা নিয়ে সদরে এসেছেন মেয়েকে নিয়ে যেতে। এলাকায় গিয়ে তিনি মেয়েকে নিয়ে ঘুরে বেড়াবেন। রোকসানা বলে, ‘আব্বা রাজি না থাকলে আমার ফুটবল খেলা সম্ভব ছিল না। এখন আর আমার খেলা নিয়া কেউ কোনো কথা বলে না। আব্বার কারণেই আমি ভালো ফুটবল খেলতে পারছি। আমি ফুটবল খেলে যেতে চাই।’

এলাকার আব্দুর রহিম, রইছ উদ্দিন, আবু বক্করসহ অনেকেই বলেন, ‘আমরা না বুঝে মেয়েটিকে ও তার পরিবারকে অনেক কথা বলেছি। এখন দেখছি আমরা ভুল করেছিলাম। রোকসানার কারণে এখন আমরা গর্বিত।’

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Please disable your adblocker or whitelist this site!