ডায়াবেটিস দীর্ঘমেয়াদি একটি রোগ যা ক্রমে দেহের বিভিন্ন অঙ্গ–প্রত্যঙ্গের ক্ষতিসাধন করতে থাকে। হাত–পায়ের নার্ভ বা স্নায়ু হচ্ছে সেই সব অঙ্গের একটি, যা ডায়াবেটিসের আক্রমণের শিকার হয় প্রায়ই। এর ফলে স্নায়ুজনিত নানা সমস্যা দেখা দেয়। হাত বা পায়ের তালু জ্বালাপোড়া, ঝিনঝিন করা, অসাড় মনে হওয়া, কামড়ানো, পিন ফোটার মতো অনুভূতি, অস্বাভাবিক অনুভূতি ইত্যাদি হলো এমন সমস্যার লক্ষণ। এই সমস্যার নাম ডায়াবেটিক নিউরোপ্যাথি। এই সমস্যা হাত বা পায়ের নিচ থেকে ক্রমে ওপরের দিকে ছড়াতে থাকে। আর রাতেই এর প্রবণতা বাড়ে। এ ছাড়া পায়ে রক্ত চলাচল কমে যায় বলে হাত–পা ঠান্ডা হয়ে যায়, চামড়ার রং পরিবর্তন হয়। একটু হাঁটলেই পায়ের পেশি কামড়াতে থাকে। পেশি শুকিয়ে গেলে উঠতে–বসতে দুর্বল লাগে। ভারসাম্য কম মনে হয়।
অটোনমিক নিউরোপ্যাথির কারণে হঠাৎ দাঁড়ালে রক্তচাপ কমে যায়, মাথা ঘুরে ওঠে। কখনো নির্দিষ্ট কোনো একটা নার্ভ বা স্নায়ু ক্ষতিগ্রস্ত হওয়ার কারণে মুখের একপাশ বেঁকে যায় বা চোখের পাতা পড়ে যায় বা হাতের কবজিতে টনটন করে।
ডায়াবেটিক নিউরোপ্যাথি একটি যন্ত্রণাময় সমস্যা। রোগীরা প্রায়ই জ্বালাপোড়া ও কামড়ানোর জন্য রাতে ঘুমাতে পারেন না। তা ছাড়া স্নায়ু সমস্যার রোগীদের পায়ের ক্ষত, সংক্রমণ ইত্যাদি বেশি হয়। এ থেকে রেহাই পেতে হলে কী করতে হবে জেনে নিন।
: রক্তে শর্করা সুনিয়ন্ত্রিত রাখতে হবে। এটি অনিয়ন্ত্রিত ডায়াবেটিসেরই জটিলতা, তাই শর্করা নিয়ন্ত্রণে না আনলে সমাধান হবে না।
: শর্করার মতো রক্তচাপ ও রক্তে চর্বি নিয়ন্ত্রণ করাও জরুরি। কেননা এগুলো অনিয়ন্ত্রিত থাকলে রক্তনালি ক্ষতিগ্রস্ত হয়ে সমস্যা আরও বাড়তে পারে।
: ধূমপান ত্যাগ করতে হবে।
: নিয়মিত হাঁটা চাই। এতে পায়ের রক্তনালি ও নার্ভে রক্ত চলাচল বাড়বে।
: পায়ে যেকোনো ধরনের আঘাত, তাপ, অতিরিক্ত গরম, ঠান্ডা থেকে সাবধান। খালি পায়ে হাঁটা চলবে না। কোনো ফোসকা, গোটা নিজে নিজে খুঁচিয়ে ওঠানো যাবে না। যেকোনো ধরনের রং বদল বা অস্বাভাবিকতা দেখা দিলে চিকিৎসকের শরণাপন্ন হন।
: সঠিক মাপের জুতা পরুন। সুতি মোজা পরবেন।
: বিভিন্ন ধরনের উপসর্গের জন্য বিভিন্ন ধরনের ওষুধ প্রযোজ্য। চিকিৎসকের পরামর্শমতো জ্বালাপোড়া কমাতে ওষুধ খেতে পারেন।
মেডিসিন ও ডায়াবেটিস রোগ বিশেষজ্ঞ, ইমপালস হাসপাতাল