class="post-template-default single single-post postid-15609 single-format-standard wp-custom-logo group-blog vl-boxed aa-prefix-matin-">
Shadow

বনানীর আগুন : ওয়াশরুমে ঢোকাই কাল হলো আবিরের

বৃহস্পতিবার সকালে মায়ের হাতে ভাত খেয়ে অফিসে গিয়েছিলেন আনজির সিদ্দিকী আবির (২৪)। মা তাসরিমা খানম মাত্র দুই দিন আগে গ্রামের বাড়ি থেকে ঢাকায় বেড়াতে গিয়েছিলেন। মাকে কাছে পেয়ে একটু বেশিই খুশি ছিলেন আবির।

বাসা থেকে বের হওয়ার পর পরিবারের লোকজনের সঙ্গে আর কথা হয়নি তাঁর। এরপর বনানীর এফআর টাওয়ারের অগ্নিকাণ্ডের খবর পেয়ে পরিবারের লোকজন তাঁর খোঁজ নেওয়ার চেষ্টা করছিলেন। তবে তাঁর মোবাইল ফোনসেট ছিল বন্ধ। সারা দিন খোঁজাখুঁজির পর শেষ পর্যন্ত ওই দিন রাত ১০টায় আবিরের মারা যাওয়ার খবর পায় পরিবার।

এ খবর লালমনিরহাটের পাটগ্রাম পৌর শহরের কলেজপাড়ার বাড়িতে পৌঁছালে সেখানে পড়ে যায় কান্নার রোল। কিছুক্ষণের মধ্যে খবর ছড়িয়ে পড়ে পুরো পাটগ্রামজুড়ে। ফলে ওই বাড়িতে ভিড় করতে থাকে অসংখ্য মানুষ। গতকাল শুক্রবার বিকেল পৌনে ৪টার দিকে আবিরের মরদেহবাহী অ্যাম্বুল্যান্স গ্রামের বাড়িতে পৌঁছার পর সেখানে দেখা যায় এক হৃদয়বিদারক দৃশ্য। পরিবারের লোকজনতো দূরের কথা, পাটগ্রামবাসীই যেন মেনে নিতে পারছেন না সদা হাস্যোজ্জ্বল আবিরের অকাল মৃত্যু।

পরিবার জানায়, এফআর টাওয়ারের অগ্নিকাণ্ডে ধোঁয়ায় নিঃশ্বাস বন্ধ হয়ে মারা যান আবির। তিনি ওই ভবনের ১৬ তলায় থাকা মিকা সিকিউরিটিজ লিমিটেড নামের একটি শেয়ারবাজার লেনদেনকারী প্রতিষ্ঠানের নির্বাহী পদে কর্মরত ছিলেন।

আবির পাটগ্রাম পৌর শহরের কলেজপাড়ার পাথর ব্যবসায়ী ও আওয়ামী লীগ নেতা আবু বক্কর সিদ্দিক বাচ্চুর  ছেলে। তাঁর মা তাসরিমা খানম পাটগ্রাম মডেল সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক। ২০০৯ সালে পাটগ্রাম টিএন উচ্চ বিদ্যালয় থেকে এসএসসি পাস করে আবির ঢাকার সেন্ট যোসেফ কলেজে ভর্তি হন। এরপর একটি বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয় থেকে বিবিএ শেষ করে যোগ দেন মিকা সিকিউরিটিজে।

তাঁর চাচা মোস্তাফিজুর রহমান ওই প্রতিষ্ঠানের কর্মীদের উদ্ধৃতি দিয়ে জানান, অগ্নিকাণ্ড শুরুর কিছুক্ষণ আগে আবির ওয়াশরুমে ঢুকেছিলেন। এ সময় হঠাৎ আগুন লাগলে সেখানে থাকা ১৯ কর্মীর সবাই তাড়াহুড়ো করে অফিসের দরজা বন্ধ করে বাইরে বেরিয়ে আসেন। সবার অজান্তেই ওয়াশরুমে থেকে যান আবির। পরে ওয়াশরুম থেকে বেরিয়ে অফিস ফাঁকা ও দরজা বন্ধ দেখে ফোন করেন অফিসের একজনকে। তখন তিনি তাঁকে দরজা ভেঙে বেরিয়ে ওপরের দিকে চলে যেতে বলেন। একা একা দরজাও ভাঙেন আবির। এরপর থেকে তাঁর মোবাইল ফোনসেট বন্ধ পাওয়া যায়। ধারণা করা হচ্ছে, ধোঁয়ার কারণে ওপরে যেতে না পেরে তিনি নিচের দিকে নামতে থাকেন। শেষ পর্যন্ত ১৩ তলায় এসে ধোঁয়ায় আচ্ছন্ন হয়ে মারা যান।

মোস্তাফিজুর রহমান আরো জানান, বৃহস্পতিবার অফিসে যাওয়ার আগে মায়ের হাতে খাওয়ার সময়ই নিজের বিয়ে ও ঢাকায় একটি ফ্ল্যাট কেনার বিষয়ে কথা হয়েছিল আবিরের।

জানা যায়, আবির গত ১০ মার্চ অনুষ্ঠিত প্রথম ধাপের উপজেলা পরিষদ নির্বাচন উপলক্ষে সর্বশেষ বাড়িতে এসেছিলেন। শুক্রবার বাদ আসর পাটগ্রাম সরকারি কলেজ মাঠে জানাজা শেষে পারিবারিক কবরস্থানে তাঁর দাফন সম্পন্ন হয়।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Please disable your adblocker or whitelist this site!