ঢাকা মেডিক্যাল কলেজ (ঢামেক) হাসপাতালে চিকিৎসাধীন ফেনীর সোনাগাজীর সেই মাদ্রাসাছাত্রী নুসরাত জাহান রাফি মারা গেছেন। বুধবার (১০ এপ্রিল) রাত সাড়ে ৯টার দিকে তিনি ঢামেকে মারা যান। ঢামেকের বার্ন ইউনিটের সমন্বয়ক ডা. সামন্ত লাল সেন এ তথ্য নিশ্চিত করেছেন।
অধ্যাপক রায়হানা আউয়াল বলেন, ‘নুসরাত রাত সাড়ে ৯টায় মারা গেছেন।’
নুসরাত জাহান রাফির চিকিৎসায় গঠিত মেডিক্যাল বোর্ডের প্রধান ও শেখ হাসিনা জাতীয় বার্ন অ্যান্ড প্লাস্টিক সার্জারি ইনস্টিটিউটের প্রকল্প পরিচালক অধ্যাপক ডা. আবুল কালাম বাংলা ট্রিবিউনকে বলেন, ‘বুধবার সকাল থেকে তার অবস্থা অবনতি হতে থাকে। একাধিকবার তার হার্ট অ্যাটাক করেছিল, তারপরও সে সার্ভাইভ করেছিল। কিন্তু, রাত সাড়ে ৯ টার দিকে মারা যায়।’
.
প্রসঙ্গত, শনিবার (৬ এপ্রিল) সকাল ৯টার দিকে আলিম পর্যায়ের আরবি প্রথম পত্র পরীক্ষা দিতে সোনাগাজী ইসলামিয়া ফাজিল মাদ্রাসা কেন্দ্রে যান ওই ছাত্রী। এরপর কৌশলে তাকে পাশের ভবনের ছাদে ডেকে নেওয়া হয়। সেখানে বোরকা পরা ৪/৫ ব্যক্তি ওই ছাত্রীর শরীরে কেরোসিন ঢেলে আগুন ধরিয়ে দেয়। এতে তার শরীরের ৮৫ শতাংশ পুড়ে যায়। পরে ওই ছাত্রীকে উদ্ধার করে স্বজনরা প্রথমে সোনাগাজী উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে নিয়ে গেলে চিকিৎসকরা তাকে ফেনী সদর হাসপাতালে পাঠান। সেখানে প্রাথমিক চিকিৎসা দেওয়ার পর তাকে ঢাকা মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালের বার্ন ইউনিটে পাঠানো হয়।
ঢামেক বার্ন ইউনিটে লাইফ সাপোর্টে থাকা ওই ছাত্রীর ভাই মাহমুদুল হাসান নোমান বলেন, শনিবার সকালে তার বোনের আরবি প্রথম পত্রের পরীক্ষা ছিল। তাকে পরীক্ষাকেন্দ্রে নিয়ে যান তিনি। তবে কেন্দ্রের প্রধান ফটকে নোমানকে আটকে দেন নিরাপত্তাকর্মী মোস্তফা। এরপর তার বোন একাই হেঁটে কেন্দ্রে প্রবেশ করেন। এ সময় নোমান কেন্দ্রে থেকে একটু দূরে চলে আসেন। এর ১৫-২০ মিনিট পরই মোবাইল ফোনে তিনি তার বোনের অগ্নিদগ্ধের খবর পান। ফের কেন্দ্রে ছুটে গিয়ে বোনকে দগ্ধ অবস্থায় দেখতে পান তিনি।
এদিকে, সোমবার (৮ এপ্রিল) দগ্ধ মাদ্রাসাছাত্রীকে উন্নত চিকিৎসার জন্য সিঙ্গাপুরে পাঠানোর নির্দেশ দেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। এরপর সিঙ্গাপুর জেনারেল হাসপাতালে তার সর্বশেষ স্বাস্থ্যের অবস্থা জানিয়ে কাগজপত্র পাঠানো হয়। মঙ্গলবার সকালে সেখানকার চিকিৎসকদের সঙ্গে ভিডিও কনফারেন্সে কথা বলেন ডা. সামন্তলাল সেন। পরে তিনি সাংবাদিকদের বলেন, ‘মেয়েটির শারীরিক যে অবস্থা তাতে পাঁচ ঘণ্টা ফ্লাই করা খুবই রিস্কি বলে মনে করছেন সিঙ্গাপুর জেনারেল হাসপাতালের চিকিৎসকরা। তাই এই মুহূর্তে মেয়েটিকে সিঙ্গাপুরে নেওয়া সম্ভব না।’
মামলা দায়ের
মাদ্রাসাছাত্রীকে পুড়িয়ে হত্যাচেষ্টার ঘটনার তিনদিন পর থানায় মামলা হয়েছে। সোমবার (৮ এপ্রিল) বিকালে সোনাগাজী মডেল থানায় মামলাটি করেন ভিকটিমের বড় ভাই মাহমুদুল হাসান। মামলায় মুখোশধারী চারজন এবং তাদের সহযোগীদের আসামি করা হয়েছে।এ ঘটনায় জড়িত সন্দেহে এ পর্যন্ত মোট আটজনকে আটক করেছে পুলিশ।