class="post-template-default single single-post postid-17479 single-format-standard wp-custom-logo group-blog vl-boxed aa-prefix-matin-">
Shadow

পিজির স্নায়ুরোগ বিশেষজ্ঞ ডাক্তার আহসান হাবীব বললেন : মস্তিষ্কের রোগ পারকিনসন্স

মস্তিষ্কের রোগ

মস্তিষ্কের রোগ পারকিনসন্স

ডা. আহসান হাবীব (হেলাল)

ব্রেন বা মস্তিষ্কের ছোট ছোট অসুখও অনেক সময় পুরো দেহে বিরাট প্রভাব ফেলে। মস্তিষ্কের রোগ স্ট্রোক, মাইগ্রেন, ব্রেন টিউমার ইত্যাদির সঙ্গে আমরা পরিচিত হলেও পারকিনসন্স ডিজিজ সম্পর্কে তেমন কিছু জানি না। মস্তিষ্কের প্রাণঘাতী রোগের তালিকায় এর অবস্থান দ্বিতীয়

 

পারকিনসন্স কী?

এটি মস্তিষ্কের ক্ষয়জনিত রোগ। মস্তিষ্কের সাবস্ট্যানশিয়া নাইগ্রা নামের অংশের স্নায়ুকোষ (নিউরোন) শুকিয়ে যাওয়ার কারণে ডোপামিন নামের নিউরোট্রান্সমিটারের (এক ধরনের রাসায়নিক পদার্থ) ঘাটতি দেখা দেয়। এটাই হচ্ছে পারকিনসন্স ডিজিজ।  স্বাভাবিক অবস্থায় মস্তিষ্কের ব্যাজাল গ্যাংলিয়া নামের অংশ শরীরের চলাফেরা বা গতি বা নড়াচড়া করার সমন্বয় করে থাকে। ডোপামিনের অভাবে এই সমন্বয় নষ্ট হয়ে যায়।

 

কারণ ও জটিলতা

৭০ শতাংশ ক্ষেত্রে পারকিনসন্স রোগের কারণ অজানা। পাঁচ শতাংশ ক্ষেত্রে জেনেটিক বা বংশগত কারণে হয়। অবশিষ্ট ২৫ শতাংশ নানা কারণে হয়। যেমন—স্ট্রোক, টিউমার, বারবার আঘাত, মস্তিষ্কের ইনফেকশন, উইলসন ডিজিজসহ মস্তিষ্কে ক্ষয়জনিত অন্যান্য রোগ—যেগুলোকে বলা হয় পারকিনসনিজম।

পারকিনসন্স ডিজিজে আক্রান্ত রোগীর চলাফেরার ওপর নিয়ন্ত্রণ কমে যায় আস্তে আস্তে। ভয়ংকর ব্যাপার হলো, এই রোগের কোনো নিরাময় নেই, শুধু রয়েছে রোগের লক্ষণগুলো নিয়ন্ত্রণের কিছু পদ্ধতি।

 

উপসর্গ

এই রোগের প্রধান উপসর্গ বা লক্ষণ তিনটি।

♦ হাত-পা কাঁপুনি।

♦ হাত-পা স্বাভাবিকের চেয়ে শক্ত হওয়া।

♦ চলাচলের গতি ধীর হয়ে যাওয়া।

এ ছাড়া যে লক্ষণগুলো দেখা দিতে পারে তা হলো—সামনের দিকে ঝুঁকে হাঁটা, কথার স্বর ক্ষীণ হয়ে যাওয়া, কম কথা বলা, চোখের পাতার নড়াচড়া কমে যাওয়া, বারবার পড়ে যাওয়া, কোষ্ঠকাঠিন্য, হতাশাগ্রস্ততা ইত্যাদি।

 

কাদের হতে পারে?

পুরুষ-নারী সমানভাবে সবাই আক্রান্ত হয়। সাধারণত ৫৫ বছরের পরে এই রোগটি হয়। জেনেটিক ক্ষেত্রে কম বয়সে যেমন ১৫ থেকে ২০ বছরের মধ্যে এ রোগে আক্রান্ত হওয়ার আশঙ্কা থাকে।

 

চিকিৎসা

সঠিক সময়ে এবং সঠিকভাবে চিকিৎসা গ্রহণ করলে রোগী দীর্ঘদিন ভালো থাকে। এ রোগে আক্রান্ত রোগীকে আজীবন ওষুধ সেবন করে যেতে হয়। তবে এটি সম্পূর্ণ নিরাময়যোগ্য রোগ নয়। এই রোগে অপারেশনের কোনো ভূমিকা নেই। তবে ডিবিএস পদ্ধতিতে অতি ক্ষুদ্র ইলেকট্রোড মস্তিষ্কের গভীরে স্থাপন করা হয়। এতে ওষুধ অনেক কম লাগে। উপসর্গগুলো ৯০ শতাংশ কমে যায়, রোগী দীর্ঘদিন ভালো থাকে। কিন্তু এটি অত্যন্ত ব্যয়বহুল। এ পদ্ধতি আমাদের দেশে সীমিত পরিসরে চালু হয়েছে।

অ্যাডভান্স পারকিনসন্স ডিজিজ রোগীর ক্ষেত্রে লিভোডোপা প্যাঁচ এবং লিভোডোপা ইনফিউশন পাম্প রয়েছে। এগুলো ব্যয়বহুল, যা এ দেশে এখনো শুরু হয়নি। বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিক্যাল বিশ্ববিদ্যালয়, ন্যাশনাল ইনস্টিটিউট অব নিউরোসায়েন্স, বিভিন্ন মেডিক্যাল কলেজের নিউরোলজি বিভাগ ছাড়াও বেসরকারি হাসপাতালে স্নায়ুরোগ বিশেষজ্ঞরা এই রোগের চিকিৎসা করে থাকেন।

 

করণীয়

পারকিনসন্স রোগ প্রতিরোধের তেমন কোনো উপায় নেই। গড় আয়ু বৃদ্ধির কারণে নিউরোডিজেনারেটিভ অসুখের পরিমাণ বৃদ্ধি পাচ্ছে। পারকিনসন্স ডিজিজ এগুলোর মধ্যে অন্যতম। তাই রোগী ও পরিবারের লোকজনকে সচেতন থাকতে হবে। এতে রোগীকে সচল রেখে জটিলতা এড়ানো সম্ভব।

লেখক : সহযোগী অধ্যাপক, স্নায়ুরোগ বিভাগ,বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিক্যাল বিশ্ববিদ্যালয়

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Please disable your adblocker or whitelist this site!