বাংলাদেশসহ পৃথিবীজুড়েই মানসিক স্বাস্থ্য নিয়ে ভ্রান্ত ধারণা রয়েছে মানুষের মধ্যে। কী কী লক্ষণ বা উপসর্গ দেখে বোঝা যাবে যে কেউ মানসিক স্বাস্থ্য সমস্যায় ভুগছেন জানতে চাইলে জাতীয় মানসিক স্বাস্থ্য ইন্সটিটিউট ও হাসপাতালের শিশুবর্ধন ও পারিবারিক সম্পর্ক বিভাগের সহকারী অধ্যাপক ডা. হেলাল উদ্দিন আহমেদ বাংলা ট্রিবিউনকে বলেন, ‘মৃদু এবং তীব্র-এ দুই ধরনের মানসিক রোগ হয়ে থাকে। মানসিক রোগীদের যেসব উপসর্গ দেখা যাবে সেগুলো হলো-
১. ভ্রান্ত বিশ্বাস
২. আবেগের পরিবর্তন
৩. আচরণ পরিবর্তন
৪. কর্মক্ষমতা হ্রাস
৫. মানসিক অস্থিরতা
৬. মাথা ব্যথা-মাথা ঘোরা
৭. দুশ্চিন্তা
৮. মানসিক ভীতি
৯. খিঁচুনি
১০. একই চিন্তা, বা কাজ বারবার করা
১. মানসিক অবসাদ
১২. বিষণ্নতা
১৩. বিরক্তিবোধ
১৪. অসহায় বোধ করা,
১৫ স্মরণশক্তি কমে যাওয়া
১৬. ক্ষুধা না পাওয়া
১৭. কোনও কাজে মনোযোগ দিতে না পারা এবং
১৮. আত্মহত্যা করার কথা বারবার ভাবা
বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা ও জাতীয় মানসিক স্বাস্থ্য ইন্সটিটিউট হাসপাতালের এক প্রতিবেদন থেকে জানা যায়, বাংলাদেশে প্রাপ্তবয়স্ক জনগোষ্ঠীর শতকরা ১৬ শতাংশ মানসিক স্বাস্থ্য সমস্যায় ভুগছেন। যাদের মধ্যে অ্যাংজাইটিস ডিজঅর্ডারে (উদ্বেগাধিক্য) ৮ দশমিক ৪ ভাগ, ডিপ্রেসিভ ডিজঅর্ডারে ৪ দশমিক ৬ ভাগ, সাইকোসিসে (গুরুতর মানসিক রোগ) ১ দশমিক ১ ভাগ এবং ড্রাগ অ্যাডিকশনে শূন্য দশমিক ৬ ভাগ মানুষ আক্রান্ত।
অপরদিকে, ১৮ বছরের কম বয়সীদের মধ্যে শতকরা ১৮ দশমিক ৪ শতাংশই মানসিক রোগে আক্রান্ত। এর মধ্যে ৩ দশমিক ৮ ভাগ মানসিক প্রতিবন্ধী, ২ ভাগ মৃগীরোগে এবং শূন্য দশমিক ৮ ভাগ মাদকাসক্ত। আর মানসিক রোগীদের মাথাপিছু বরাদ্দ ৫০ পয়সারও কম।
গবেষণায় বলা হয়েছে, দেশে মানসিক রোগে আক্রান্তের সংখ্যা তুলনামূলকভাবে বেড়েছে। এর পেছনে রয়েছে মানসিক চাপ, নগরায়ন, আর্থ-সামাজিক অবস্থা, বংশগতি ও শরীরবৃত্তিক কারণ। চিকিৎসকরা বলছেন, প্রাপ্তবয়স্ক অনেক মানুষও সচেতনতার অভাবে বুঝতে পারেন না, তারা মানসিক সমস্যায় ভুগছেন। আর কখনও কখনও বুঝতে পারলেও এসব রোগীর বেশিরভাই চিকিৎসকরে কাছে যান না, যার প্রধান কারণ ‘লজ্জা-পাগলের তকমা’ বলেন চিকিৎসকরা।
তবে যাদের মানসিক রোগটা মৃদু তাদের ক্ষেত্রে আশার কথা হলো, তারা বুঝতে পারেন যে, তিনি মানসিক সমস্যায় ভুগছেন এবং তাদেরকে কাউন্সিলিং ও খুব কম ওষুধের মাধ্যমেই সারিয়ে তোলা যায়। আর যাদের অসুখটা তীব্র তারা কখনও বুঝতে পারেন না, এবং তারা স্বীকারও করেন না তাদের এ সমস্যা রয়েছে। তাদের চিকিৎসাটা দীর্ঘমেয়াদী এবং ওষুধের প্রয়োজনও হয় অনেক বেশি। তীব্রভাবে মানসিক অসুখে যারা ভোগেন তারা সন্দেহপ্রবণ হয়ে থাকেন। নিজেকে বড় মনে করেন। স্বাভাবিক বিচারবুদ্ধি লোপ পায়, একা হাসেন এবং কথা বলেন। ঘুম এবং খাওয়া সময় মতো না করা, ভাঙচুর-মারামারি করার লক্ষণগুলো তাদের মধ্যে দেখা যায়। সবচেয়ে বড় সমস্যা হয়, এসব রোগীরা স্বীকার করেন না, তারা মানসিক সমস্যায় ভুগছেন এবং এর চিকিৎসা দরকার।