Sunday, December 22
Shadow

কলকাতার খবর : পড়ার সঙ্গেই মাশরুম চাষ

মাশরুম চাষপ্রতিদিন প্রায় পাঁচ কিলোমিটার পথ সাইকেল চালিয়ে আছড়ার স্কুলে যান একাদশ শ্রেণির ছাত্রী আমিনা পারভিন। আরও প্রায় তিন কিলোমিটার বেশি পথ উজিয়ে কলেজে পড়তে যান দ্বিতীয় বর্ষের ছাত্রী অঞ্জুমান খাতুন। দু’জনই সালানপুরের বৃন্দাবনি গ্রামের বাসিন্দা। পড়াশোনার পাশাপাশি, নিজের পায়ে দাঁড়াতে তাঁরা পাঠ নিচ্ছেন মাশরুম চাষের। গ্রামের এই দুই কন্যার উদ্যম দেখে অন্য মহিলারাও ব্লক কৃষি দফতরের সঙ্গে যোগাযোগ করে প্রশিক্ষণ নিতে শুরু করেছেন।

সালানপুর ব্লক কৃষি দফতরের উদ্যোগে সম্প্রতি গ্রামের মহিলাদের স্বনির্ভর করে তুলতে একাধিক প্রকল্প চালু করা হয়। এ ব্যাপারে কৃষি আধিকারিকেরা রূপনারায়ণপুর পঞ্চায়েতের বৃন্দাবনি গ্রামের মহিলাদের সঙ্গে যোগাযোগ করেন। কিন্তু, প্রথমে কেউই আগ্রহ দেখাননি। ব্লকের সহ-কৃষি অধিকর্তা চন্দন কোনার বলেন, ‘‘আমরা প্রায় হাল ছেড়ে দিতে বসেছিলাম। এমন সময় এগিয়ে এল দুই পড়ুয়া অঞ্জুমান খাতুন ও আমিনা পারভিন। তাদের উৎসাহ দেখে আমরা মাশরুম চাষের প্রশিক্ষণ দিতে শুরু করলাম।’’ তিনি জানান, পরবর্তীতে এই দুই কন্যাই গ্রামের বাকি মহিলাদের পথ দেখিয়ে এই প্রশিক্ষণকেন্দ্রে নিয়ে এসেছেন।

সম্প্রতি গ্রামে গিয়ে দেখা গিয়েছে, কৃষি দফতরের ব্লক টেকনোলজি ম্যানেজার উদয়ন দাসের তত্ত্বাবধানে মাশরুম চাষের প্রশিক্ষণ নিচ্ছেন এই দুই কন্যা। ইতিমধ্যে বেশ কিছু মাশরুমও ফলিয়েছেন তাঁরা। চিত্তরঞ্জন কলেজের ইংরেজি বিভাগের ছাত্রী অঞ্জুমান খাতুন বলেন, ‘‘বাবার একার রোজগারে সংসারের হাল ফিরছে না। তাই পড়াশোনার ফাঁকে স্বনির্ভরতার এই পাঠ নিয়েছি।’’ আমিনা পারভিনের কথায়, ‘‘পড়াশোনার শেষে চাকরি পাব কী না জানি না। তাই নিজের পায়ে দাঁড়ানোর এই পথটাই বেছে নিয়েছি।’’

তাঁরা জানালেন, প্রথমে খড় কেটে ফুটন্ত জলে ভেজানো হয়। ভেজা খড়কে ভাগ ভাগ করে পলিথিনের প্লাস্টিকের প্যাকেটে ঢুকিয়ে দেওয়া হয়। ২৪ ঘণ্টা রাখার পরে তার মধ্যে মাশরুমের বিজ পোঁতা হয়। এরপর খড়-সহ পলিথিনের প্যাকেটগুলিকে আধো অন্ধকার ঘরে সুতলির সাহায্যে ঝুলিয়ে রাখা হয়। ২০-২৫ দিন পরে খাওয়ার উপযোগী হয়।

অঞ্জুমান ও আমিনা জানিয়েছেন, আপাতত খুব অল্প পরিমাণেই তাঁরা মাশরুম তৈরি করেছেন। সেগুলি আঞ্চলিক বাজারে বিক্রি করে তেমন উল্লেখযোগ্য আয় হয়নি। তবে ভবিষ্যতে এর থেকে ভাল আয় হবে বলেই তাঁদের আশা। বৃন্দাবনি এলাকার বাসিন্দা রুকসানা বিবি বলেন, ‘‘অঞ্জুমানদের দেখে আমরা অনুপ্রাণিত হয়েছি। আমরাও প্রশিক্ষণ নিয়ে মাশরুম চাষ করা শুরু করেছি।’’ কৃষিকর্তা চন্দন কোনার জানিয়েছেন, ভবিষ্যতে তাঁরা বেশি পরিমাণে মাশরুম চাষ করতে পারলে ব্লক কৃষি দফতরের উদ্যোগেই তাঁদের ফসল বিক্রির ব্যবস্থা করা হবে।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Please disable your adblocker or whitelist this site!