class="post-template-default single single-post postid-22532 single-format-standard wp-custom-logo group-blog vl-boxed aa-prefix-matin-">
Shadow

মেজর সিনহা হত্যা: ওসি প্রদীপের নির্দেশে গুলি করেন পরিদর্শক লিয়াকত

বাংলাদেশ সেনাবাহিনীর অবসরপ্রাপ্ত মেজর সিনহা হত্যার ঘটনায় কক্সবাজারের আদালতে আজ একটি মামলা হয়েছে। জুডিসিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট আদালতে দায়ের করা মামলায় টেকনাফের বাহারছড়া পুলিশ তদন্ত কেন্দ্রের পরিদর্শক লিয়াকত আলী ও টেকনাফ থানার ওসি প্রদীপ কুমার দাশসহ ৯ পুলিশকে আসামি করা হয়েছে।

গত ৩১ জুলাই দিবাগত রাত সাড়ে ৯টার দিকে কক্সবাজার-টেকনাফ মেরিন ড্রাইভ সড়কের বাহারছড়া পুলিশ তদন্ত কেন্দ্রে মেজর সিনহা মো. রাশেদ খানকে গুলি করে হত্যার ঘটনায় ৯ পুলিশ সদস্যকে আসামি করা হয়। এসময় তারা সবাই ঘটনাস্থলে ছিলেন।

আদালতের বিচারক তামান্না ফারাহ ফৌজদারি দরখাস্তটি আমলে নিয়ে টেকনাফ থানায় নিয়মিত মামলা হিসাবে রেকর্ড করতে নির্দেশ প্রদান করেন। সেই সাথে বিচারক হত্যা মামলাটি তদন্তের জন্য র‌্যাব-১৫ কে দায়িত্ব দিয়ে আগামী ৭ দিনের মধ্যে প্রতিবেদন জমা দিতে বলেছেন।

বুধবার দুপুরে টেকনাফের সিনিয়র জুডিসিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট আদালতে এমন অভিযোগ আনেন বাদি শারমিন শাহরিয়ার ফেরদৌস। তিনি নিহত মেজর সিনহা মো. রাশেদ খানের বড় বোন। বাদী অভিযোগ করেছেন যে, টেকনাফ থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) প্রদীপ কুমার দাসের নির্দেশে সেনা বাহিনীর অবসরপ্রাপ্ত মেজর সিনহা মো. রাশেদ খানকে গুলি করেছেন পুলিশ পরিদর্শক লিয়াকত আলী।

বাদী উল্লেখ করেন যে, ঘটনার কিছুক্ষণ পর ওসি প্রদীপ কুমার দাস ঘটনাস্থলে আসেন। তিনি এসেই তখনও জীবিত থাকা মেজর সিনহাকে উদ্দেশ্য করে অকথ্য ভাষায় গালিগালাজ করেন এবং তার শরীরে লাথি মারেন। মৃত্যু নিশ্চিত হলে একটি ‘ছারপোকা গাড়ি’তে তুলে মেজর সিনহাকে কক্সবাজার জেলা সদর হাসপাতালের উদ্দেশ্যে পাঠানো হয়।

মামলার অন্যান্য আসামিরা হলেন- বাহারছড়া তদন্ত কেন্দ্রের উপপরিদর্শক (এসআই) নন্দ দুলাল রক্ষিত, কনস্টেবল সাফানুর করিম, কামাল হোসেন, আব্দুল্লাহ আল মামুন, সহকারি উপপরিদর্শক (এএসআই) লিটন মিয়া, সহকারি উপপরিদর্শক (এএসআই) টুটুল ও কনস্টেবল মোহাম্মদ মোস্তফা।

মামলার বিবরণে বলা হয়েছে, একটি ইউটিউব চ্যানেলের জন্য ভিডিও চিত্র ধারণ শেষে গত ৩১ জুলাই রাত আনুমানিক সাড়ে ৯টার দিকে মেজর (অব:) সিনহা মো. রাশেদ খান নিজস্ব প্রাইভেট কার নিয়ে মেরিন ড্রাইভ দিয়ে কক্সবাজার আসছিলেন। এ সময় টেকনাফ উপজেলার বাহারছড়া ইউনিয়নের শামলাপুর বাজার সংলগ্ন পুলিশ তদন্ত কেন্দ্রে পৌঁছলে ১নম্বর আসামি লিয়াকত ও ৩নম্বর আসামি এসআই নন্দ দুলাল রক্ষিত গাড়ি গতিরোধ করে। এসময় মেজর সিনহা নিজের পরিচয় দেন। এরপরও সিনহার সঙ্গে থাকা ক্যামেরাম্যান সিফাতকে টানা হেঁচড়া করে গাড়ি থেকে নামিয়ে ফেলে। এসময় সিফাত দুই হাত উঁচু করে গাড়িতে বসে থাকা সিনহার পরিচয় দেয়। পরিচয় দেয়ার পরও পুলিশ অকথ্য ভাষায় গালিগালাজ করে। একপর্যায়ে পরিদর্শক লিয়াকত হুংকার ছেড়ে বলেন- ‘তোর মত অনেক মেজর দেখেছি’ বলে সিনহাকেও গাড়ি থেকে নামিয়ে ফেলে। মুহুর্তে কয়েক রাউন্ড গুলি করলে সিনহা মাটিতে পড়ে যায়। এসময় মেজর সিনহা জীবন রক্ষার্থে পালিয়ে যাওয়ার চেষ্টা করলে পুলিশ সদস্যরা তাকে চেপে ধরে পুণরায় মাটিতে ফেলে দেয়।

এমনকি মৃত্যু নিশ্চিত করার জন্য পরিদর্শক লিয়াকত আরও এক রাউন্ড গুলি করে। মৃত্যু নিশ্চিত করে টেকনাফ থানা পুলিশ কক্সবাজার সদর হাসপাতালে নিয়ে যায়। সেখানে কর্তব্যরত চিকিৎসক তাকে মৃত ঘোষণা করেন। দরখাস্তে আরো বলা হয়, সিনহার মৃত্যুর ঘটনাটি ধাপাচাপা দেয়ার জন্য ইয়াবা, গাজা ও সরকারি কাজে বাঁধা দেয়ার অভিযোগ এনে টেকনাফ থানায় দুটি মামলা দায়ের করা হয়।

মামলার বাদী শারমিন শাহরিয়ার ফেরদৌস আদালত থেকে বেরিয়ে বলেন, ‘ওসি প্রদীপ কুমার দাশের নির্দেশনা মতে পরিদর্শক লিয়াকত ঠান্ডা মাথায় গুলি করে আমার ভাইকে হত্যা করেছে।’ তিনি আরো বলেন, পরে আমার ভাইয়ের শরীরে ও মুখে বিভিন্ন জায়গায় পা দিয়ে লাথি মেরে তার মুখ বিকৃত করার চেষ্টা করে। এসময় অন্যান্য আসামিরা তাদের সহযোগিতা করে। তাই তিনি আইনের আশ্রয় নিচ্ছেন বলে জানান।

মামলাটি দায়েরে আইনগত সহযোগিতায় ছিলেন কক্সবাজারের সিনিয়র আইনজীবী মোহাম্মদ মোস্তফার নেতৃত্বে আরো অনেকেই।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Please disable your adblocker or whitelist this site!