মহান ও পবিত্র মাস রামাদান আমাদের দ্বারপ্রান্তে, রামাদানের আলোচনা কুরআন এবং হাদিসে বহু বার এসেছে। মুসলিমদের কাছে এর গুরুত্ব অনেক বেশি। এই রামাদান আসার সাথে সাথে একটি বিষয় নিয়ে সাধারণ মানুষ তো বটেই আলেম সমাজও তাদের ভিন্ন ভিন্ন মতা মত দিয়েছেন এবং দেন। বিষয়টি হল যাকাতুল ফিতরা । রামাদানে আমরা যে ফিতরা দিয়ে থাকি তা কি খাদ্য শস্য দিয়ে দিতে হবে নাকি টাকা দিয়ে দিলেও চলবে?
প্রিয় পাঠক চলুন আজ আমরা এই বিষয়টা কোরআন ও হাদিস দিয়ে বুঝার চেষ্টা করব। প্রথমেই বলে নেই- আলেমদের আমরা শ্রদ্ধা করি কিন্তু অন্ধ অনুসরণ করি না। তাই যদি আমার বা আমাদের পছন্দের আলেম বা ইসলামি ব্যক্তিত্ব যেই হন না কেন, তাঁর মতামত অবশ্যই কুরআন ও সহীহ্ হাদিসে সাথে মিলিয়ে নিব। কুরআন ও সহীহ্ হাদিস ছাড়া যদি কোন আলেম বা ইসলামি ব্যক্তিত্ব কোন মতামত দেন তবে তাঁর ওই মতামত আমাদের কাছে শুন্য বলে বিবেচিত হবে।
যাকাতুল ফিতরা কী দিয়ে দিব? রাসুল (সাঃ) আমাদের এ ব্যাপারে কী নির্দেশ দিয়েছেন তা খুজতে গিয়ে দেখা গেল, এ ব্যাপারে বেশ কিছু সহীহ হাদিস রয়েছে বুখারি, মুসলিম, আবু দাউদ, তিরমিজি ইত্যাদি হাদিসের গ্রন্থে।
“ইবনু উমার (রাযিঃ) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, রাসুল (সাঃ) প্রত্যেক স্বাধীন বা ক্রীতদাস ব্যক্তি সে প্রাপ্ত বয়স্ক হক বা অপ্রাপ্ত বয়স্ক সকলের উপর এক সা’ খেজুর যা সাদাকায়ি ফিতর নির্ধারণ করেছেন”। (সহীহ্ মুসলিম (হাদিস একাডেমী) :২১৬৯)
“আবু সাঈদ আল খুদরী (রাযিঃ) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, রাসুল (সাঃ) এর জীবদ্দশায় আমরা ছোট, বড়, স্বাধীন, ক্রীতদাস প্রত্যেকের পক্ষ থেকে এক সা’ খেজুর বা এক সা’ শুষ্ক আঙ্গুর ফিতরা হিসেবে বের করতাম। আমরা এভাবেই ফিতরা আদায় করে আসছিলাম। শেষ পর্যন্ত যখন মু’আবিয়াহ (রাযিঃ) হাজ্জ বা উমরার উদ্দেশ্যে আমাদের মাঝে গমন করলেন, তিনি লোকদের উদ্দেশ্যে ওয়ায করলেন এবং বললেন, আমি জানি যে সিরিয়ার দু’মদ্দ লাল গম এক সা’ খেজুরের সমান। সুতরাং লোকেরা তাঁর এ অভিমত গ্রহন করল।
আবু সাঈদ বলেন, কিন্তু আমি যতদিন জীবিত থাকব ততদিন পূর্বের ন্যায় যে পরিমানে ও যে নিয়মে দিচ্ছিলাম সে ভাবেই দিতে থাকব। (সহীহ মুসলিম – হাঃ একাডেমী- ২১৭৪)
ইবনু উমর (রাঃ) হতে বর্ণিত যে, রাসুল (সাঃ) লোকদেরকে ঈদের সালাতের উদ্দেশ্যে বের হওয়ার পূর্বে ফিতরা আদায়ের নির্দেশ দিয়েছেন। (সহীহ বুখারি – তাওহিদ প্রকাশনী – ১৫০৯)
এই সকল হাদিসে ফিতরা কখন দিতে হবে তাও বর্ণিত আছে আলহামদুলিল্লাহ্।
অনেকে এই যুক্তি দেন যে খাদ্য না দিয়ে টাকা দিলে ভালো হবে বা ফিতরা প্রাপ্ত ব্যাক্তি বেশি উপকৃত হবে। আসলে কি তাই, রাসুল (সাঃ) কী তাঁর উম্মাতের কীসে ভালো হবে তা বুঝতেন না (নাউজুবিল্লাহ)।
আবার এও অনেকে আবার বলেন যে, রাসুল (সাঃ) এর যুগে মুদ্রার তেমন প্রচলন ছিল না তাই তখন খাদ্য সামগ্রী দিয়ে ফিতরা আদায় করতেন।
আমরা হাদিস ও ইতিহাস পর্যালোচনা করে জানতে পারি যে রাসুল (সাঃ) এর যুগে মুদ্রা ছিল। তখন দিনার ছিল দিরহাম ছিল এবং তা দিয়ে তারা টাকার মত ব্যাবসায়ে ব্যবহার করতেন, বিনিময় করতেন।
সূরা হাশরের ৭ নং আয়াতে আল্লাহ্ বলেছেন, “রাসুল (সাঃ) তোমাদেরকে যা দেয় তা তোমরা গ্রহন কর এবং যা হতে তোমাদের নিষেধ করেন তা হতে বিরত থাক”।
এই আয়াত দিয়ে আল্লাহ্ আমাদের কী বুঝাতে চান তা কী আমরা বুঝতে পারছি?
সূরা জীন এর ২৩ নং আয়াতে আল্লাহ্ বলেছেন, “আর যে আল্লাহ্ ও তাঁর রাসুল (সাঃ) কে অমান্য করবে তার জন্য রয়েছে জাহান্নামের আগুন। যাতে তারা চিরস্থায়ী হবে”।
প্রিয় পাঠক আশা করি বিষয়টি বুঝতে পেরেছেন। তাই আমাদের প্রিয় রাসুল (সাঃ) নিজে যে ভাবে যাকাতুল ফিতরা আদায় করেছেন এবং আমাদের যে ভাবে আদায় করার নির্দেশ দিয়েছেন আমরা সে ভাবে আদায় করার চেষ্টা করব, ইনশাআল্লাহ্।