শিক্ষক হবেন ফারিহা
শিক্ষক হবেন ফারিহা এমনটিই স্বপ্ন তার
ভালো ছাত্রী, ঢাকার নামকরা আইডিয়াল স্কুল অ্যান্ড কলেজে পড়েছেন। এসএসসি ও এইচএসসিতে গোল্ডেন জিপিএ।
বিজ্ঞানের আরো অনেক ভালো ছাত্রের মতো তাঁরও ইচ্ছা ছিল, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের আইবিএতে ভর্তি হবেন। তবে পারিবারিক কিছু সমস্যার কারণে বিশ্ববিদ্যালয়ের ভর্তি প্রস্তুতিতে ছন্দ পতন ঘটল। ফলে মনের মতো বিশ্ববিদ্যালয়ে সুযোগ হলো না সে বছর। পরের বছরের জন্য অপেক্ষা না করে মা-বাবা ফারিহা মামুনকে ইস্ট ওয়েস্ট ইউনিভার্সিটিতে ভর্তি করে দিলেন। বিষয়টি মেয়ের পছন্দের—ফার্মাসি। বনশ্রীর মেয়েটি পাশের ক্যাম্পাসে প্রথমবার গিয়েই তো অবাক—এত সুন্দর! ভালো লাগল, ভালো ছাত্রী হিসেবে শুরু থেকেই শত ভাগ ‘ওয়েইভার’ পেলেন। শিক্ষকরাও প্রথম থেকেই মেধাবী ছাত্রীটিকে ভালো ফলের জন্য উত্সাহ দিয়েছেন। প্রথম সেমিস্টারেই বলেছেন, এই সেমিস্টারে যে ভালো করবে, সে বাকিগুলোতেও ভালো করবে। প্রথম সেমিস্টারে তিনি জিপিএ ‘চার’ পেলেন। মেয়েকে নিয়ে আশাবাদী হলেন মা-বাবাও। মা-বাবার বিয়ে বার্ষিকীতে ক্যাম্পাসের বান্ধবীদের নিয়ে প্রথম সেমিস্টারের পর পহেলা বৈশাখে হেঁটে হেঁটে রামপুরা থেকে ধানমণ্ডি লেকে গিয়ে বেড়ালেন। আগে কোনো দিনও বেড়াতে না যাওয়া মেয়েটি বন্ধুদের ভালোবেসে ফেললেন। সব মিলিয়ে জীবন ছন্দে এসে গেল, দ্বিতীয় সেমিস্টারেও ‘চার’। আগেই ক্লাসের পড়া লাইব্রেরিতে বসে শেষ করে ফেলাই এই ভালো ফলের রহস্য। তৃতীয় সেমিস্টারে একটি কোর্সে সামান্য খারাপ করায় ৩.৯৬ পেয়ে নোটিশ বোর্ডের সামনেই কাঁদলেন। অন্যরা ছুটে এসে সান্ত্বনা দিলেন, ‘বোকা মেয়ে, আরো অনেক সেমিস্টার তো পড়ে আছে। ’ প্রশ্নের চাওয়া থেকে উত্তর বেশি লেখায় এই ফল। তবে এরপর থেকে সব কটিতে চারে চার ধরে রেখেছেন। শেষ সেমিস্টারে ফল ধরে রাখার পাশাপাশি মাঝেমধ্যে সন্ধ্যা অবধি বন্ধুদের পড়া বোঝাতেন। তাঁরাও তাঁকে সেভাবে সময় দিয়ে সহযোগিতা করতেন। তিনি তখন ফার্মা ক্লাবের সভাপতি। ফারিহা ‘ফার্মা কার্নিভাল ২০১৫’ আয়োজন করে আয়োজকের বিশেষ পুরস্কার পেয়েছেন। নর্থ সাউথ ইউনিভার্সিটি থেকে তিনি ফার্মাসিউটিক্যাল টেকনোলজি অ্যান্ড বায়োফার্মাসিউটিকসে এমপিএইচআরএম করছেন।
পুরনো পড়া ঝালাই, কুইজ লেখা ভালোভাবে করায় পরীক্ষার সময় নতুন করে পড়তে হয়নি তাঁকে। শুধু রিভিশন দিয়ে যেতেন। তিনি ‘চ্যান্সেলর অ্যাওয়ার্ড’ পেয়েছেন তো বটেই, ইস্ট ওয়েস্ট ইউনিভার্সিটির ১৬তম সমাবর্তনের শিক্ষার্থীদের পক্ষে মনোনীত হয়ে বক্তব্যও দিয়েছেন। নিজের অর্জিত জ্ঞান দেশকে ফিরিয়ে দিতে পিএইচডি শেষে শিক্ষকতা করবেন। তবে সেটি বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ে। তিনি ক্যান্সার প্রতিরোধ বিষয়েও গবেষণা করবেন।
সূত্র : কালের কণ্ঠ