দুই অনাথ শিশুকে দত্তক নেয়ার পর জানা গেল তারা ভাই-বোন!
দৃশ্যপটটি চিন্তা করুন। এক নারী দুটো বাচ্চাকে দত্তক নিয়েছেন। এদের এক বছরের ব্যবধানে দত্তক নেয়া হয়েছে। পরে জানা গেলো, বাচ্চা দুটো পরস্পরের সাথে সম্পর্কযুক্ত। এই অদ্ভুত ঘটানাটি ঘটেছে আমেরিকার কলোরাডোর কেটির জীবনে।
তিরিশের কোঠায় বিবাহ বিচ্ছেদ নেন কেটি। এরপর জীবনে বড় একটা পরিবর্তন আনতে চাইলেন। বাসা পরিবর্তন থেকে শুরু করে চাকরিটাও বদলে ফেললেন। সেই সময়ই অনাথ শিশুদের দত্তক নেয়ার চিন্তা তার মাথায় আসে। স্থানীয় চার্চে কথা বলেন তিনি। সেখান অনাথ শিশুদের দেখে তার হৃদয় গলে যায়। চার্চ থেকেই কোনো শিশুর দায়িত্ব নেয়ার কাজটিকে জীবনের অন্যতম লক্ষ্য হিসেবে গ্রহণ করার দীক্ষা পান তিনি।
২০১৫ সালের দিকে ফর্ম পূরণ করে তিনি জীবনের স্রোত বদলানোর পথে এগোলেন। বছরখানেক পর কেটি আশ্রম থেকে একটা শিশুকে দত্তক হিসেবে পাওয়ার সুযোগ পেলেন। খুব দ্রুত ৪ দিন বয়সী এক শিশু এলো তার কোলে। এই শিশুর জীবনের শুরুতেই মনভাঙা ঘটনা রয়েছে। তার নাম ‘গ্যারিসন’। প্রায় ১১ মাস পর্যন্ত কেটির কাছে ছিল শিশুটি। এই সময়ের মধ্যে আশ্রমের অন্যরা শিশুটির পিতা-মাতার খোঁজে থাকলেন।
কেটি তার অভিজ্ঞতা শেয়ার করেছেন লাভ হোয়াট মেটার্স-এ। জানালেন, শিশুটি যে হাসপাতালে হয়েছে সেখানে তার সম্পর্কে খুব বেশি তথ্য ছিল না। ওর জন্মের পর কেউ আর খোঁজ নিতে আসেনি। যদি কেউ আসেন তো তাকে আর নিজের কাছে রাখা যাবে না। কিন্তু আমাকে বলা হয়েছে, বাচ্চাটির খোঁজে কেউ আসেনি। তাই নিশ্চিন্তে আমি তাকে আজীবনের জন্যে পেতে পারি। কিন্তু তবুও মনের মধ্যে একটা শঙ্কা কাজ করছিল। শেষ পর্যন্ত গ্যারিসন ১১ মাসের মাথায় কেটিকে তার আইনগত মা হিসেবে পায়।
গ্যারিসনকে নিয়ে বেশি দিন একাকী গেলো না তার। কয়েক দিন পরই খবর এলো, মাত্র ৪ দিন বয়সী আরেকটি কন্যা শিশুকে হাসপাতালে পরিত্যক্ত অবস্থায় পাওয়া গেছে। তার ঘটনা গ্যারিসনের মতোই। তারও জরুরি ভিত্তিতে যত্নআত্তি দরকার। কেটির মধ্যে তখন মাতৃত্ব জেগে উঠেছে। নতুন বাচ্চাটিকেও গ্রহণ করলেন তিনি। কয়েক ঘণ্টা বাদেই তার কোলে এলো মেয়েটি।
তবে এখানে একটা মজার বিষয় রয়েছে। কেটি জানালেন, কন্যা শিশুটির নামের প্রথম অংশের সাথে হাতপাতালে গ্যারিসনের মায়ের দেয়া নামের মিল ছিল। আরেকটু তদন্তে বেরিয়ে এলো, গ্যারিসনের মায়ের দেয়া মেয়েটির জন্মতারিখও মিলে যায়। এটা খুব বেশি কাকতালীয় হয়ে যায় না!
কিন্তু এরা দুজন একই মায়ের সন্তান হম্ভাবনা খুবই কম। চেষ্টা তদবীর করে কেটি মেয়েটির জন্মদাত্রী মায়ের সঙ্গে সাক্ষাতের সুযোগ তৈরি করলেন। কেটি কিন্তু গ্যারিসনের আসল মায়ের সন্ধান পেতে চাইছিলেন। তার ধারণা জন্মালো, এই দুটো বাচ্চা ভাই-বোন। তাদের তদন্তে স্পষ্ট হলো যে, বাচ্চা দুটোর ডাকনাম আসলে একই। সবাইকে অবাক করে দিয়ে তাই প্রমাণিত হলো!
কেটি ভাবলেন, এই দুটো বাচ্চা যদি আলাদা কারো কাছে যেত তাহলে হয়তো ভাই-বোনের এক হওয়া কোনদিনও ঘটতো না।
আনুষ্ঠানিকভাবে ২০১৮ সালে ২৮ ডিসেম্বর কন্যা হান্নাকে নিজের সন্তান হিসেবে পান কেটি। এটা সত্যিই এক অনন্য গল্প। ঠিক যেন কোনো সিনেমার কাহিনি। ঘটনাক্রমে যদি এই দুজনকে একসঙ্গে না পেতেন কেটি, তবে পরিবারের পাজলটা হয়তো মিলত না। এ বছর তৃতীয় শিশুকে দত্তক হিসেবে পেতে চান কেটি। এটাও পেতে চান গ্যারিসন এবং হান্নার জন্মদাত্রীর কাছ থেকে। আর এর মাধ্যমে কেটির সুখী পরিবারে আসবে পূর্ণতা।
সূত্র: দিপোচ টাইমস
https://www.youtube.com/watch?v=AoO_iZhlnGs&fbclid=IwAR2G1budMX0v0f1Mh1YWh4y7sBH-I2u1lrJFJYkgJc2yTGFjp7TnAx2reEI