class="post-template-default single single-post postid-1144 single-format-standard wp-custom-logo group-blog vl-boxed aa-prefix-matin-">
Shadow

হাজার মাসের চেয়ে উত্তম রজনী শবে কদর

শবে কদর

মুফতি আহমদ আবদুল্লাহ: ফার্সি ‘শবে কদর’, আরবি ‘লাইলাতুল কদর’ অর্থ মহিমান্বিত রাত। এ রাতের মর্যাদা হাজার মাসের চাইতে উত্তম। পবিত্র কোরআনে ‘কদর’ নামে স্বতন্ত্র একটি সুরা নাজিল হয়েছে। ৫ আয়াত বিশিষ্ট এ সুরায় লাইলাতুল কদরের মর্যাদা ও বৈশিষ্ট্য বর্ণনা করা হয়েছে। ফলে ইসলামি শরীয়তে এর বিশেষ গুরুত্ব ও তাৎপর্য রয়েছে। আরবি মাসগুলোর মধ্যে রমজান যেমন শ্রেষ্ঠতম মাস, তেমনি রমজানের একটি রাত লাইলাতুল কদর বা মহিমান্বিত রাত। মহান রাব্বুল আলামিন বলেন, ‘আমি এই কোরআন কদরের রাতে নাজিল করেছি। কদরের রাত সম্পর্কে তুমি কী জান? কদরের রাত হাজার মাস থেকে উত্তম মাস। এ রাতে জিবরাইলসহ সকল ফেরেশতারা অবতীর্ণ হয়, প্রত্যেক কাজে তাদের প্রভুর অনুমতিক্রমে। এটা নিরাপত্তা, যা ফজরের উদয় পর্যন্ত অব্যাহত থাকে। (সুরা কদর)।

কোরআনের বর্ণনা দ্বারা পবিত্র এ রাতের মর্যাদা সম্পর্কে জানা যায়। হজরত আবু হুরায়রা (রা.) রাসুল (সা.) থেকে বর্ণনা করেছেন। তিনি বলেন, ‘যে ব্যক্তি ঈমান সহকারে এবং প্রতিদানের আশায় লাইলাতুল কদরে নামাজ পড়বে তার অতীতের সমস্ত গুনাহ মাফ করে দেয়া হবে। (বুখারী: ১৯০১)। হাদিসে ‘ঈমান সহকারে’ কথাটির অর্থ হচ্ছে, এই রাতের মর্যাদা ও বিশেষ আমল শরিয়তসম্মত হওয়ার ওপর বিশ্বাস স্থাপন করা। আর ‘প্রতিদানের আশায়’ কথাটির অর্থ হচ্ছে, নিয়তকে আল্লাহ তাআলার জন্য একনিষ্ঠ করা। সুরা দুখানের ৩ নম্বর আয়াতে এরশাদ হচ্ছে, ‘নিশ্চয় আমি এটা কোরআন অবতীর্ণ করেছি একটি বরকতময় রাতে।’ আর এ রাত হলো শবেকদর। হাদিসে বর্ণিত আছে, রাসুল (সা.) এরশাদ করেন, ‘ফেরেশতারা এ রাতে রহমত, বরকত ও প্রশান্তি নিয়ে অবতরণ করেন।’ আবার কারও কারও মতে, ‘আল্লাহ তায়ালা এ বছর যেসব বিষয় নির্ধারণ ও ফয়সালা করেছেন, ফেরেশতারা তা নিয়ে অবতরণ করেন।’

লাইলাতুল কদর অতি মূল্যবান রাত হওয়ায় মহান রাব্বুল আলামিন এর সুনির্দিষ্ট তারিখ গোপন রেখেছেন। মুমিন বান্দা-বান্দিরা যেন এ রাতকে কষ্ট করে অন্বেষণ করে, যাতে তারা কেবল ঐ নির্দিষ্ট তারিখই ইবাদত করে অন্য রাতে অলসভাবে না কাটায়। তাই রমজানের বেজোড় রাতগুলোকে লাইলাতুল কদর অন্বেষণ করতে বলা হয়েছে। সাহাবায়ে কেরাম রাসুল (সা.)- কে অনুসরণ করে পুরো রমজান বিশেষত শেষ দশকের বেজোড় রাতে বেশি বেশি ইবাদত ও কোরআন তেলাওয়াত করতেন।

কোন রাতটি লাইলাতুল কদর তা নিয়ে আলেমদের মাঝে বিভিন্ন অভিমত রয়েছে। ফাতহুল বারী গ্রন্থে উল্লেখ করা হয়েছে যে এ সংক্রান্ত অভিমত ৪০ টির উপরে পৌঁছেছে। এক্ষেত্রে সবচেয়ে সঠিক মত হল লাইলাতুল কদর রমজান মাসের শেষ দশকের কোন এক বেজোড় রাত। হজরত আয়েশা (রা.) থেকে বর্ণিত হয়েছে যে, রাসুল (সা.) বলেছেন, ‘রমজানের শেষ দশকের বেজোড় রাতগুলোতে লাইলাতুল কদর অনুসন্ধান কর। (বুখারী: ২০১৭) । রমজান মাসে নির্দিষ্ট কোনো রাতকে লাইলাতুল কদর হিসেবে চিহ্নিত করার জন্য সুস্পষ্ট দলীলের প্রয়োজন। তবে অন্যান্য রাতের চেয়ে শেষ দশকের বেজোড় রাতগুলোর কোন একটিতে হওয়ার সম্ভাবনা বেশি। আর এর মধ্যে ২৭তম রাতে হওয়ার সম্ভাবনা সবচেয়ে বেশি। বিভিন্ন হাদিস থেকে এ ইঙ্গিত পাওয়া যায়। এ বিষয়টি আমরা ইতিপূর্বেও উল্লেখ করেছি। তাই একজন মুসলিমের নির্দিষ্ট কোন রাতকে লাইলাতুল কদর হিসেবে চিহ্নিত করা উচিত নয়। কারণ এতে করে এমন বিষয়ে নিশ্চয়তা প্রদান করা হয়, আসলে যে বিষয়ে নিশ্চয়তা প্রদান করা সম্ভবপর নয়। এবং এতে করে ব্যক্তি নিজেকে প্রভুত কল্যাণ থেকে বঞ্চিত করার সম্ভাবনা তৈরি হয়। হতে পারে লাইলাতুল কদর ২১তম রাতে অথবা ২৩তম রাতে অথবা ২৯তম রাতে। তাই কেউ যদি শুধু ২৭তম রাতে নামায আদায় করে এতে করে তিনি অফুরন্ত কল্যাণ থেকে বঞ্চিত হবেন এবং এই মুবারকময় রাতের ফজিলত হারাবেন।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Please disable your adblocker or whitelist this site!