অষ্টম শ্রেণি : বাংলাদেশ ও বিশ্ব পরিচয় : বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধ || গুরুত্বপূর্ণ সাল ও তারিখ এবং তথ্যাবলি
গ্রন্থনা: এম জাহিদুল ইসলাম
১৯৪৭ সালে ঐতিহাসিক লাহোর প্রস্তাব উত্থাপনের মাধ্যমে ভারত ও পাকিস্তান নামক দুটি রাষ্ট্রের সৃষ্টি হয়। ধর্মের দোহাই দিয়ে পূর্ব বাংলাকে পাকিস্তানের একটি অংশ করে রাখা হয়। দুই প্রদেশের মধ্যে ভাষা, সংস্কৃতিসহ কোনো বিষয়ে মিল ছিল না। প্রায় দুইশ বছর বৃটিশ বেনিয়া শক্তির অত্যাচার সহ্যের পরও পূর্ব বাংলার মানুষ স্বাধীনতার স্বাদ ভোগ করতে পারেনি।পাকিস্তানি শাষকগোষ্ঠী পূর্ব বাংলার মানুষের উপর শাষণের নামে চালাতে থাকে শোষণ।সরকারি-বেসরকারি সব ধরণের চাকরি, শিক্ষায় বাঙালিদের অধিকার হরণ করতে থাকে তারা, যার ফলশ্রুতিতে নতুন করে করতে হয় ভাষার জন্য আন্দোলন, শিক্ষার অধিকার আদায়ে আন্দোলন।প্রতিটা আন্দোলনই ধীরে ধীরে স্বাধীনতা সংগ্রামের ভিত গড়তে থাকে। প্রতিটা আন্দোলনেই পূর্ব বাংলার মানুষদের ঢালতে হয় বুকের তাজা রক্ত। তারপর আসে মহান ১৯৭১। ত্রিশ লক্ষ শহিদের রক্তের বিনিময়ে আমরা পাই আমাদের মহান স্বাধীনতা। স্বাধীন রাষ্ট্র হিসাবে বিশ্বের বুকে স্থান করে নেয় বাংলাদেশ নামের একটি রাষ্ট্র। স্বাধীন রাষ্ট্র হিসাবে এই বাংলাদেশের জন্মের ইতিহাস অনেক ঘটনাবহুল, অনেক ত্যাগ তিতিক্ষার।
গুরুত্বপূর্ণ সাল এবং তারিখ
১। ১৯৭০ সালে পাকিস্তানের প্রথম সাধারণ নির্বাচন অনুষ্ঠিত হয়।
২। ১৯৭১ সালের মার্চ মাস থেকে বঙ্গবন্ধুর আদেশে শুরু হয় অসহযোগ আন্দোলন।
৩। ১৯৭১ সালের ২রা মার্চ ঢাকা শহরে এবং ৩রা মার্চ সারাদেশে হরতালের ডাক দেয় আওয়ামি লীগ।
৪। ১৯৭১ সালের ২৫ শে মার্চ মধ্যরাতে পাকবাহিনী বাঙালিদের উপর অপারেশন সার্চলাইট পরিচালনা করে।
৫। পাকিস্তানের প্রেসিডেন্ট ইয়াহিয়া খান বঙ্গবন্ধুর সাথে আলোচনা করতে ঢাকায় আসেন ১৫ই মার্চ।
৬। ১৯৭১ সালের ২৫শে মার্চ মধ্যরাতে অর্থাৎ ২৬শে মার্চের প্রথম প্রহরে বঙ্গবন্ধু স্বাধীনতা ঘোষণা করেন।
৭। ১৯৭১ সালের ১০ এপ্রিল মুজিবনগর সরকার গঠন করা হয়।
৮। মুজিবগর সরকার শপথ গ্রহণ করে ১৯৭১ সালের ১৭ই এপ্রিল।
৯। ১৯৭১ সালের ৯ই এপ্রিল গঠিত হয় ঢাকা নাগরিক শান্তি কমিটি।
১০। ১৯৭১ সালের মে মাসে খুলনায় প্রথম রাজাকার বাহিনী গঠিত হয়।
১১। ডা. মালিক মন্ত্রীসভা গঠিত হয় ১৯৭১ সালের ১৭ই সেপ্টেম্বর।
১২। ডা. মালিক মন্ত্রীসভা ১৪ই ডিসেম্বর পদত্যাগ করে।
১৩। বাংলাদেশের যুদ্ধ চলাকালে ৩রা ডিসেম্বর ভারতের বিমান ঘাটিতে পাকিস্তান বিমান হামলা চালায়।
১৪। ৬ই ডিসেম্বর ভারত বাংলাদেশকে প্রথম স্বীকৃতি দেয়।
১৫। ১০ই ডিসেম্বর হোটেল ইন্টারকন্টিনেন্টালকে নিরপেক্ষ এলাকা ঘোষণা করে ঢাকাস্থ কূটনৈতিকদেরকে নিরাপদ স্থানে সরিয়ে নেওয়া হয়।
১৬।১২ই ডিসেম্বর ঢাকায় পাকবাহিনীর বিভিন্ন সামরিক স্থানের উপর হামলা চালায় যৌথবাহিনী।
১৭। ১৯৭১ সালের ২১শে নভেম্বর যৌথবাহিনী গঠন করা হয়।
১৮। বঙ্গবন্ধুর পক্ষে ২৭শে মার্চ স্বাধীনতার ঘোষণা করেন বাঙালি সামরিক অফিসার জিয়াউর রহমান।
১৯।দেশের বুদ্ধজিবীদের গণহারে হত্যা করা হয় ১৪ই ডিসেম্বর।
২০। ১৯৭১ সালের ১৬ই ডিসেম্বর পাকবাহিনী যৌথবাহিনীর নিকট আত্মসমর্পণ করে।
বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধ নিয়ে গুরুত্বপূর্ণ তথ্যাবলি: বাংলাদেশ ও বিশ্ব পরিচয়
১। ১৯৭১ সালে আওয়ামী লীগের সভাপতি ছিলেন শেখ মুজিবুর রহমান।
২। মানচিত্র খচিত দেশের প্রথম পতাকা উত্তোলন করেন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় কেন্দ্রীয় ছাত্র সংসদ (ডাকসু)
৩। শেখ মুজিবুর রহমান ঐতিহাসিক ৭ই মার্চের ভাষণ দেন রেসকোর্স ময়দানে।
৪। ৭ই মার্চের ভাষণে প্রায় দশ লক্ষ লোক উপস্থিত ছিল।
৫। বঙ্গবন্ধুর ৭ই মার্চের ভাষণকে বাঙালি জাতির মুক্তির সনদ বলা হয়।
৬। ইউনেস্কো বঙ্গবন্ধুর ৭ই মার্চের ভাষণকে ওয়ার্ল্ড ডকুমেন্টারি হেরিটেজ হিসাবে ঘোষণা করেছে।
৭। বঙ্গবন্ধুর ৩২ নম্বর ধানমন্ডির বাড়ি ছিল সরকারের প্রধান কার্যালয়।
৮।তৎকালীন আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ছিলেন তাজউদ্দীন আহমদ।
৯। পশ্চিম পাকিস্তান থেকে প্রথম অস্ত্র ও রসদ বোঝাই করে এমভি সোয়াত জাহাজ চট্টগ্রাম বন্দরে পৌছায়।
১০। অপারেশন সার্চলাইট অনুযায়ী ঢাকা শহরে গণহত্যার মূল দায়িত্ব দেওয়া হয় পাক বাহিনীর মেজর জেনারেল রাও ফরমান আলীকে।
১১। পাকবাহিনী প্রথম দখল করে রাজারবাগ পুলিশ লাইন এবং পিলখানার ইপিআর হেডকোয়ার্টার্স।
১২। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের জহুরুল হক হলের যুদ্ধ চলাকালীন নাম ছিল ইকবাল হল।
১৩। ২৫শে মার্চ গণহত্যায় পাকবাহিনী ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ১০ জন শিক্ষককে হত্যা করে।
১৪। ২৫শে মার্চ রাতে শুধুমাত্র ঢাকা শহরেই ৭ থেকে ৮ হাজার বাঙালিকে হত্যা করা হয়।
১৫। বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধ চলাকালে চট্টগ্রামের কালুরঘাট সম্প্রচার কেন্দ্রকে স্বাধীন বাংলা বিপ্লবী বেতার কেন্দ্রে রুপান্তর করা হয়।
১৬। মুজিবনগর সরকারকে শপথ বাক্য পাঠ করান অধ্যাপক ইউসুফ আলী।
১৭। মুজিবনগর সরকারের রাষ্ট্রপতি ছিলেন শেখ মুজিবুর রহমান।
১৮। মুজিবনগর সরকারের উপ-রাষ্ট্রপতি ছিলেন সৈয়দ নজরুল ইসলাম।
১৯। তাজউদ্দীন আহমদকে করা হয় মুজিবনগর সরকারের প্রধানমন্ত্রী।
২০। মুজিবনগর সরকারের অর্থমন্ত্রী ছিলেন এম. মনসুর রহমান।
২১। মুজিবনগর সরকারের স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী ছিলেন এ এইচ এম কামারুজ্জামান।
২২। মুজিবনগর সরকারের আইনমন্ত্রী ছিলেন খন্দকার মোশতাক আহমেদ।
২৩। মুক্তিবাহিনীর প্রধান সেনাপতি ছিলেন কর্নেল এম এ জি ওসমানী।
২৪। বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধ চলাকালীন সমস্ত বাংলাদেশকে ১১টি সেক্টরে ভাগ করা হয়।
২৫। মুক্তিযুদ্ধের সময় সমস্ত রণাঙ্গনকে তিনটি ব্রিগেড ফোর্স ভাগ করা হয়।
২৬। ছাত্রলীগের বাছাইকৃত কর্মীদের নিয়ে একাত্তর সালে গঠন করা হয় মুজিববাহিনী।
২৭। বাঙালি নৌ কমান্ডরা অপারেশন জ্যাকপট নামে একটি অভিযান পরিচালনা করে একদিনে চট্টগ্রাম বন্দরে ১০ টি এবং মংলা বন্দরে ৫০ টি জাহাজ ধ্বংস করে।
২৮। জামায়াত নেতা মওলানা এ কে এম ইউসুফ খুলনায় সর্বপ্রথম রাজাকার বাহিনী গঠন করে।
২৯। যুদ্ধ চলাকালে মুজিবনগর সরকার ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য বিচারপতি আবু সাঈদ চৌধুরীকে বিশেষ দূত হিসাবে নিয়োগ করে।
৩০। কলকাতাতে সর্বপ্রথম বাংলাদেশ মিশন স্থাপিত হয়।
৩১। মুক্তিযুদ্ধ চলাকালে চীন ও যুক্তরাষ্ট্র ছিল পাকিস্তানের পক্ষে।
৩২। মুক্তিযুদ্ধ চলাকালে ভারত ও সোভিয়েত ইউনিয়ন ছিল বাংলাদেশের পক্ষে।
৩৩। যুদ্ধ চলাকালে বাংলাদেশের স্বাধীনতার জন্য চার হাজার ভারতীয় অফিসার ও জোয়ান প্রাণ বিসর্জন দেয়।
৩৪। যুক্তরাষ্টের শিল্পী জর্জ হ্যারিসন “বাংলাদেশ কনসার্ট” আয়োজন করে এর থেকে প্রাপ্ত অর্থ মুজিবনগর সরকারের কাছে তুলে দেয়।
৩৫। ভারতীয় বাহিনী প্রথম যশোরে সামরিক ঘাঁটি স্থাপন করে।
৩৬। বাংলাদেশকে স্বাধীন দেশ হিসাবে স্বীকৃতি দানকারী প্রথম দেশ ভারত।
৩৭। বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধ চলাকালে যৌথবাহিনীর সর্বাধিনায়ক ছিলেন জেনারেল স্যাম মানেকশ।
৩৮। যৌথবাহিনীর কমান্ডার ছিলেন লে. জেনারেল জগজিৎ সিং অরোরা।
৩৯। আত্মসমর্পণ অনুষ্ঠানে মুজিবনগর সরকারের প্রতিনিধি ছিলেন গ্রুপ ক্যাপ্টেন এ কে খন্দকার।
৪০। আত্মসমর্পণের মাধ্যমে বন্দি করা হয় ৯৩ হাজার পাকিস্তানি সৈন্যকে।