অষ্টম শ্রেণি : একাদশ অধ্যায় : চোখের প্রধান অংশ ও কাজ । মানবশরীরের সমস্ত অঙ্গের মধ্যে আলোর উপস্থিতি বা অনুপস্থিতির পার্থক্য করার একমাত্র অঙ্গ চোখ। অনেক প্রাণীর দুই চোখ একই তলে অবস্থিত এবং একটি মাত্র ত্রিমাত্রিক দৃশ্য গঠন করে থাকে, যেমন মানুষের চোখ; আবার অনেক প্রাণীরই দুই চোখ দুইটি ভিন্ন তলে অবস্থিত ও দুইটি পৃথক দৃশ্য তৈরি করে, যেমন হরিণের চোখ।দুটি চোখ থাকার অবশ্য সুবিধা বেশি কারন দুটি চোখ দুটি ভিন্ন প্রতিবিম্বের সৃষ্টি করে এবং এই বিম্বগুলোর উপরিপাতনের ফলে বস্তুকে অনেক ভালভাবে দেখা সম্ভব হয়।মানব চোখের বিভিন্ন অংশ আছে,তারমধ্যে প্রধান অংশগুলোর কাজ ও বর্ননা নিচে দেওয়া হলো:
অক্ষিগোলক (Eye-Ball)-
চোখের কোটরের মধ্যে অবস্থিত গোলাকার অংশটিই অক্ষিগোলক যা চোখের কোটেরের মধ্যে নির্দিষ্ট সীমার চারিদিকে ঘুরতে পারে।এর সামনে ও পিছনের অংশ খানিকটা চ্যাপ্টা।
অক্ষিগোলকের কাজ:
চোখকে সংরক্ষণ করে ও পেশি সংযুক্ত রাখা।অক্ষিগোলকের কনজাংটাইভা চোখকে ধুলাবালি ও জীবাণু থেকে রক্ষা করে থাকে
শ্বেতমণ্ডল (Sclera)-
শ্বেতমন্ডলের মূলত সাদা ও অস্বচ্ছ এবং কোলাজেন তন্তু দ্বারা গঠিত যার ভিতরে আলো প্রবেশ করেনা।
শ্বেতমন্ডলের কাজ
- চোখের সূক্ষ্ম অংশগুলোকে রক্ষা করা
- চোখের আকৃতি ঠিক রাখা
- বাইরের অনিষ্ট হতে চোখকে রক্ষা করা
কর্নিয়া (Cornea)-
শ্বেতমণ্ডলের সামনের অংশটি কর্নিয়া।কর্নিয়া গম্ভুজ আকারের স্বচ্ছ একটি পর্দা যা চোখের সামনের অংশটিকে ঢেকে রাখে। রক্তজালিকা না থাকার কারনে এটি স্বচ্ছ। চোখ প্রতিস্থাপন (eye transplant) বলতে কর্নিয়ার প্রতিস্থাপনকেই বোঝানো হয়।
কর্নিয়ার কাজ:
- এটি আইরিশ এবং পিউপিলকে ঢেকে রাখে
- স্বচ্ছ কর্নিয়া স্বাভাবিক দৃষ্টি বজাই রাখে
কৃষ্ণমণ্ডল (Choroid)
চোখের ভিতরের গায়ে কালো আস্তরণের ঝিল্লিটি কৃষ্ণমণ্ডল নামে পরিচিত।এই অংশে মেলানিন নামক রঞ্জক থাকায় এটি কালো দেখায়।
কৃষ্ণমণ্ডলের কাজ
- রেটিনাতে রক্ত সরবরাহ করা
- রেটিনা হতে আগত অতিরিক্ত আলো শোষণ করা
- অতিরিক্ত আলো শোষনের মাধ্যেম চোখের ভিতর অভ্যন্তরীণ প্রতিফলন রোধ করা
আইরিস (Iris)
কর্নিয়ার ঠিক পিছনে অবস্থিত অস্বচ্ছ পর্দাটি আইরিস । এর বর্ণ নানা রকম হতে পারে যেমন কালো, নীল, হালকা বাদামী । এটা চোখের রঙিন অংশ যা অনেকটা আংটির মতো দেখতে। আলোর তীব্রতার উপর নির্ভর করে আইরিশ সংকোচিত বা প্রসারিত হয় যার ফলে পিউপিলের আকার পরিবর্তিত হয়ে থাকে।
আইরিসের কাজ:
- আলোর পরিমাণ নিয়ন্ত্রিত করা
- স্নায়ুতন্ত্রে উত্তেজনা সৃষ্টি করে মস্তিষ্কে দর্শনের অনুভূতি জাগানো
- লক্ষবস্তুর আকার ও রং সম্পর্কে মস্তিষ্কে সাড়া জাগানো
চোখের মণি বা তারারন্ধ্র (Pupil)
আইরিসের মাঝখানে অবস্থিত যেখান দিয়ে আলো লেন্সে প্রবেশ করে সেটিই মূলত তারারন্ধ্র। এটার আকার আইরিশ দ্বারা নিয়ন্ত্রিত হয়।মাংশপেশির সংকোচন ও প্রসারণের মাধ্যমে তারারন্ধ্রের আকার পরিবর্তন ঘটে থাকে।
তারারন্ধ্রের কাজ
- আলো উজ্জ্বল হলে তারারন্ধ্র ছোট হয়ে চোখকে রক্ষা করে
- আলো মৃদু হলে এটি বড় হয়ে আলো প্রবেশে সহায়তা করে থাকে
স্ফটিক উত্তল লেন্স (Crystalline Convex Lens)-
- জৈব পদার্থে তৈরি হয় এই অংশটি;অনেকটা জেলির মতো।এটি কর্নিয়ার পিছনে অবস্থিত।
- স্ফটিক উত্তল লেন্সের কাজ
- কাছাকাছি বা দূরবর্তী লক্ষ্যগুলিকে সামঞ্জস্য করতে চোখের আকার পরিবর্তনে সাহায্য করে।
অক্ষিপট বা রেটিনা (Retina)-
রেটিনা চক্ষুলেন্সের পেছনে অবস্থিত। এটি হল চোখের আলোক সংবেদী অংশ। এটি আলোকরশ্মিকে তড়িৎ সংকেতে রূপান্তরীত করে দর্শন স্নায়ুর মাধ্যমে মস্তিষ্কে পাঠিয়ে থাকে। রডকোষ (rod) ও কোনকোষ (cone) নামক আলোক সংবেদী দুটি কোষ থাকে এঅংশে । রডকোষ স্বল্প আলোতে দেখতে আর কোনকোষ স্বভাবিক বা উজ্জ্বল আলোতে দেখতে সাহায্য করে থাকে। আমাদের রঙিন বস্তু দেখতে কোনকোষগুলোই ভুমিকা পালন করে।
রেটিনার কাজ
- আলোকরশ্মিকে দর্শন স্নায়ুর মাধ্যমে মস্তিষ্কে পাঠায়
- মস্তিষ্কে দর্শনের অনুভুতি জাগায় এবং বস্তুকে ভালোভাবে দেখতে সাহায্য করে
অ্যাকুয়াস হিউমার (Aqueous Humor)
কর্নিয়া এবং চক্ষুলেন্সের মধ্যবর্তী স্থানে অবস্থিত স্বচ্ছ লবণাক্ত জাতীয় পদার্থটি হলো অ্যাকুয়াস হিউমার।এটি সিলিয়ারি বডি থেকে উৎপন্ন হয়।
অ্যাকুয়াস হিউমারের কাজ
অ্যামিনো অ্যাসিড এবং গ্লুকোজ জাতীয় পুষ্টি সরবরাহ করে কর্নিয়া এবং লেন্সকে সতেজ রাখা।
ভিট্রিয়াস হিউমার (Vitreous humor)
রেটিনা এবং চক্ষুলেন্সের মধ্যবর্তী স্থানে অবস্থিত জেলি জাতীয় পদার্থ যা চোখের বেশিরভাগ অংশ পূর্ণ করে রাখে।এই অংশে ৯৯ ভাগই পানি তবে পানি ছাড়াও এতে লবন, চিনি, ভক্ষককোষ (ফ্যাগোসাইট) ও কোলাজেন তন্তু বিদ্যমান।
ভিট্রিয়াস হিউমারের কাজ
- দৃষ্টিক্ষেত্র (visual field) থেকে অবাঞ্ছিত দ্রব্য সরিয়ে নেওয়া
- অক্ষিপটে আলো বাধাহীনভাবে পৌছতে সাহায্য করা