নবম দশম জীববিজ্ঞান দ্বিতীয় অধ্যায় : জীবকোষ ও টিস্যু
পাঠ সম্পর্কিত গুরুত্বপূর্ণ বিষয়াদি
কোষ : বৈষম্য ভেদ্য পর্দা দ্বারা আবৃত এবং জীবজ ক্রিয়াকলাপের একক যা অন্য সজীব মাধ্যম ব্যতিরেকেই নিজের প্রতিরূপ তৈরি করতে সক্ষম তাকে কোষ বলে। নিউক্লিয়াসের সংগঠনের ভিত্তিতে কোষ দুই ধরনের যথা : আদি কোষ ও প্রকৃত কোষ।
আদি কোষ : এ ধরনের কোষে সংগঠিত কোনো নিউক্লিয়াস থাকে না। নিউক্লিয়বস্তু সাইটোপ্লাজমে ছড়ানো থাকে। এসব কোষে মাইটোকন্ড্রিয়া, প্লাস্টিড, এন্ডোপ্লাজমিক রেটিকুলাম ইত্যাদি অঙ্গাণু থাকে না তবে রাইবোসোম উপস্থিত থাকে। নীলাভ সবুজ শৈবাল, ব্যাকটেরিয়া এ ধরনের কোষ।
প্রকৃত কোষ : এসব কোষের নিউক্লিয়াস সুগঠিত অর্থাৎ নিউক্লিয়ার ঝিল্লি দ্বারা নিউক্লিয়বস্তু পরিবেষ্টিত ও সুসংগঠিত। শৈবাল থেকে শুরু করে সপুষ্পক উদ্ভিদ এবং অ্যামিবা থেকে সর্বোন্নত প্রাণিদেহেও এ ধরনের কোষ থাকে।
দেহকোষ : বহুকোষী জীবের দেহ গঠনে এসব কোষ অংশ গ্রহণ করে। মাইটোটিক ও অ্যামাইটোটিক বিভাজনের মাধ্যমে কোষ বিভাজিত হয়। বিভিন্ন তন্ত্র ও অঙ্গ-প্রত্যঙ্গ গঠনে দেহকোষ অংশ নেয়।
জনন কোষ : যৌন জনন ও জনুক্রম দেখা যায় এমন জীবে জনন কোষ উৎপন্ন হয়। মিয়োসিস পদ্ধতিতে জনন মাতৃকোষের বিভাজন ঘটে এবং জনন কোষ উৎপন্ন হয়। জনন কোষে ক্রোমোসোম সংখ্যা মাতৃজনন কোষের ক্রোমোসোম সংখ্যার অর্ধেক থাকে।
মাইটোকন্ড্রিয়া : এটি দ্বিস্তর বিশিষ্ট ঝিল্লি দিয়ে ঘেরা। ভেতরের স্তরটি ভাঁজ হয়ে থাকে। এদের ক্রিস্টি বলে। ক্রিস্টির গায়ে বৃন্তযুক্ত গোলাকার বস্তু থাকে, একে অক্সিসোম বলে। অক্সিসোমে উৎসেচকগুলো সাজানো থাকে। মাইটোকন্ড্রিয়নের ভেতরে থাকে ম্যাট্রিক্স। জীবের শ্বসনকার্যে সাহায্য করা মাইটোকন্ড্রিয়ার প্রধান কাজ। এ জন্য মাইটোকন্ড্রিয়াকে শক্তির ঘর বলা হয়।
গলজি বস্তু : গলজি বস্তু প্রধানত প্রাণিকোষে পাওয়া যায়। হরমোন নিঃসরণেও এর ভূমিকা লক্ষ করা যায়। কখনো কখনো এরা প্রোটিন সঞ্চয় করে রাখে।
প্রোটোপ্লাজম : কোষের ভেতরে যে অর্ধস্বচ্ছ, থকথকে জেলির ন্যায় বস্তু থাকে তাকে প্রোটোপ্লাজম বলে।
প্লাস্টিড : প্লাস্টিড উদ্ভিদ কোষের গুরুত্বপূর্ণ অঙ্গাণু। এর প্রধান কাজ খাদ্য প্রস্তুত করা, খাদ্য সঞ্চয় করা ও উদ্ভিদ দেহকে বর্ণময় ও আকর্ষণীয় করে পরাগায়ণে সাহায্য করা।
সেন্ট্রিওল : প্রাণিকোষের নিউক্লিয়াসের কাছে যে দুটি ফাঁপা নলাকার বা দণ্ডাকার অঙ্গাণু দেখা যায়, তাদেরকে সেন্ট্রিওল বলে।
ক্লোরোপ্লাস্ট : সবুজ রঙের প্লাস্টিডকে ক্লোরোপ্লাস্ট বলে। পাতা, কচি কাণ্ড ও অন্যান্য সবুজ অংশে এদের পাওয়া যায়। প্লাস্টিডে ক্লোরোফিল থাকে তাই এদের সবুজ দেখায়।
রাইবোসোম : প্রাণী ও উদ্ভিদ উভয় প্রকার কোষেই এদের পাওয়া যায়। কোথায় আমিষ সংশ্লেষ হবে তার স্থান নির্ধারণ করা এর কাজ। প্রোটিনের পলিপেপটাইড চেইন সংযোজন এই রাইবোজোমে হয়ে থাকে।
লাইসোসোম : লাইসোসোম জীব কোষকে জীবাণুর হাত থেকে রক্ষা করে এবং এর উৎসেচক আগত জীবাণুগুলোকে হজম করে ফেলে।
নিউক্লিয়াস : কোষের সব জৈবনিক ক্রিয়া বিক্রিয়া নিয়ন্ত্রণ করে নিউক্লিয়াস। এর আকৃতি গোলাকার, ডিম্বাকার, নলাকার ইত্যাদি। সিভকোষ ও লোহিত রক্ত কণিকায় নিউক্লিয়াস থাকে না।
টিস্যু : একই গঠনবিশিষ্ট একগুচ্ছ কোষ একত্রিত হয়ে যদি একই কাজ করে এবং তাদের উৎপত্তিও যদি অভিন্ন হয় তখন তাদের টিস্যু বা কলা বলে। টিস্যু দুই ধরনের যথা : ভাজক টিস্যু ও স্থায়ী টিস্যু। ভাজক টিস্যু বিভাজনে সক্ষম কিন্তু স্থায়ী টিস্যু বিভাজিত হতে পারে না। স্থায়ী টিস্যু তিন প্রকার, যথা : সরল টিস্যু, জটিল টিস্যু ও নিঃস্রাবী টিস্যু (ক্ষরণকারী)।
সরল টিস্যু : যে স্থায়ী টিস্যুর প্রতিটি কোষ আকার, আকৃতি ও গঠনের দিক থেকে অভিন্ন তাকে সরল টিস্যু বলে। কোষের প্রকৃতির ওপর ভিত্তি করে সরল টিস্যুকে তিন ভাগে ভাগ করা হয়েছে। যথা : ১. প্যারেনকাইমা, ২. কোলেনকাইমা ও ৩. স্কে¬রেনকাইমা।
জটিল টিস্যু : বিভিন্ন প্রকারের কোষ সমন্বয়ে যে স্থায়ী টিস্যু গঠিত হয় তাকে জটিল টিস্যু বলে। এরা উদ্ভিদে পরিবহনের কাজ করে, তাই এদের পরিবহন টিস্যুও বলা হয়। এ টিস্যু দুই ধরনের, যথা : জাইলেম ও ফ্লোয়েম। জাইলেম ও ফ্লোয়েম একত্রে উদ্ভিদের পরিবহন টিস্যুগুচ্ছ (াধংপঁষধৎ নঁহফষব) গঠন করে।
প্রাণী টিস্যুর প্রকাভেদ : প্রাণিটিস্যু তার গঠনকারী কোষের সংখ্যা, বৈশিষ্ট্য এবং তাদের নিঃসৃত পদার্থের বৈশিষ্ট্যের ভিত্তিতে প্রধানত চার ধরনের হয়। যথা : ১. আবরণী টিস্যু, ২. যোজক টিস্যু, ৩. পেশি টিস্যু, ৪. স্নায়ু টিস্যু।
টিস্যুতত্ত্ব : টিস্যু নিয়ে আলোচনাকে টিস্যুতত্ত্ব বা ঐরংঃড়ষড়মু বলে।
অঙ্গ ও তন্ত্র : এক বা একাধিক টিস্যুর সমন্বয়ে গঠিত এবং নির্দিষ্ট কার্য সম্পাদনে সক্ষম প্রাণিদেহের অংশবিশেষকে অঙ্গ (ঙৎমধহ) বলে। আবার পরিপাক, শ্বসন, রেচন, প্রজনন ইত্যাদি শারীরবৃত্তীয় কাজ সম্পন্ন করার জন্য প্রাণিদেহে কতগুলো অঙ্গের সমন্বয়ে বিভিন্ন তন্ত্র গঠিত হয়।
অণুবীক্ষণ যন্ত্র : যে যন্ত্রের সাহায্যে ক্ষুদ্র বস্তু বড় করে দেখা যায় তাকে অণুবীক্ষণ যন্ত্র বলে। এ যন্ত্র দুই ধরনের। যথা : সরল অণুবীক্ষণ যন্ত্র ও জটিল অণুবীক্ষণ যন্ত্র।