অনন্য সব অভিজ্ঞতার মিশেলে ভরপুর, মনোমুগ্ধকর সব খাবার ও অগণিত দর্শনীয় স্থান; এই হলো নিউজিল্যান্ড ভ্রমণ । এখানকার ছুটি কাটানোটা হাতছাড়া করা যাবে না কিছুতেই।
দুটি মূল দ্বীপের ১৬০০ কিলোমিটার জায়গাজুড়ে আছে মোট ২৯টি অঞ্চল। নিউজিল্যান্ডকে বলা যায় একটি ভৌগলিক বিস্ময়। যেখানে আছে রোমাঞ্চকর অনেক কিছু। আছে নতুন করে আবিষ্কার করার মতো খাবার, সংস্কৃতি ও শিল্প।
অ্যাড্রিনালিন রাশ
আপনি যদি রোমাঞ্চপ্রেমী হয়ে থাকেন তবে নিউজিল্যান্ডে এত কিছু করার আছে যে আপনি ঠিক বুঝে উঠতে পারবেন না কোনটা ছেড়ে কোনটা নেবেন। জর্ব ও ওগো খেলার জন্য যেতে পারেন রতরুয়াতে। জর্ব হলো একটা অতিকায় প্লাস্টিকের বল, যার ভেতর চড়ে আপনি পাহাড় বেয়ে গড়িয়ে নামতে পারবেন। ওগো হলো একটি কুশনওয়ালা গোলক, যেটা আবার আরেকটা বড় গোলক দিয়ে ঘেরা। এটার ভেতর গড়িয়ে নামাটা আরেকটু বেশি স্বাচ্ছন্দ্যদায়ক। চাইলে হেলি-স্কিংয়েও যেতে পারেন, যেখানে পাহাড়ের ওপর দিয়ে উড়ে গিয়ে পরে স্কি করতে করতে নেমে আসতে পারবেন। নেমে পড়তে পারেন কান্ট্রি রোডের পেছনের কোনো এক অফ-রোড ড্রাইভে, কিংবা নর্থল্যান্ডের কোনো বালিয়াড়িতে। ক্যান্টারবারি, ওয়ানাকা, অকল্যান্ড, করোমানডেল এবং নেলসনের পাহাড়গুলোতে গেলে ক্যানোয়িং থেকে শুরু করে বিভিন্ন জলপ্রপাত থেকে লাফ দেওয়া, পাহাড় চড়া, জাম্প, পাথর থেকে গড়িয়ে নামাসহ আরো অনেক দুঃসাহসী খেলা খেলতে পারবেন। ওয়াইহেকে দ্বীপের ওপর দিয়ে পোতাশ্রয়ের চিত্তাকর্ষক দৃশ্যপট দেখতে দেখতে চড়তে পারেন জিপ লাইনে। স্কাইডাইভিং করে গোটা দেশের সৌন্দর্যটা ভরে নিতে পারেন দুচোখে। স্কাই ডাইভ করার সেরা কিছু জায়গা হলো ওয়ানাকা, অকল্যান্ড, বে অফ প্লেন্টি, কুইনসটাউন ও লেক তাউপো। আরো বেশি অ্যাডভেঞ্চারের জন্য কুইনসটাউনে আছে কাওয়ারাউ বাংগি সাইট। নিউজিল্যান্ডের সবচেয়ে উঁচু সাইট নেভিস বাংগিও পাবেন এখানে। এখানকার মতো এমন অ্যাড্রিনালিন রাশ আর কোথাও পাবেন না। কুইনসটাউনের লেক তাউপমের টংগারিরো নদী বা ওয়াইল্ড ওয়েস্ট কোস্ট-এ করতে পারেন র্যাফটিং (গ্রেড ১ থেকে ৫ পর্যন্ত)। অথবা গুহার সন্ধানে যেতে পারেন ওয়াইতোমো গুহারাশিতে। সেখানে বেশ কিছু সিংক হোল দেখার অভিজ্ঞতাও জুটবে।
রক স্টার
এটা এমন একটা জায়গা যা নিউজিল্যান্ড ভ্রমণ কে বানিয়েছে এক অনন্য অভিজ্ঞতা। এমন অন্যরকম পাথুরে বিন্যাস গোটা দেশজুড়েই ছড়িয়ে আছে। গুচেস বিচের কাইকুরা এলাকায় গেলে দেখতে পাবেন ডায়নোসরের ডিম আকৃতির বিশাল গোলাকার পাথর, ২০১৬ সালের ভূমিকম্পে যেটা উন্মোচিত হয়েছিল। এগুলো হলো মূলত বিভিন্ন খনিজ উপাদানের তৈরি অতিকায় পাথরের টুকরো যা বিভিন্ন পাললিক পাথর দিয়ে গড়ে উঠেছে। এই সৈকতটা আবার সীল, ডলফিন, তিমি ও উপকূলীয় নানান পাখি দেখার জন্য বেশ ভালো জায়গা। আবেল তাসমেন ন্যাশনাল পার্কে গেলে দেখতে পাবেন স্পিøট অ্যাপল রক নামের একটি বিশেষ পাথর যা মূলত বরফের স্তর বসে বসে তৈরি হয়ে কাটা আপেলের রূপ পেয়েছে। ৩ কোটি বছর আগে তৈরি হওয়া আরেকটি মজার পাথুরে বিন্যাস হলো পুনকাইকিস এলাকার লেয়ারড প্যানকেইক রকস। এখানকার চুনাপাথরগুলো বিভিন্ন সময়ের ভূকম্পনজনিত কারণে এমন বিন্যাস পেয়েছে। এখানে হাঁটতে হাঁটতে প্যানকেক খাওয়াটা সত্যিই এক ভিন্ন অভিজ্ঞতা পাইয়ে দেবে। এখান থেকে আড়াই কিলোমিটারের মতো হাঁটলেই করোমানডেল পেনিনসুলায়র ক্যাথিড্রাল কোভ-এ পাবেন আরেকটি প্রাকৃতিক পাথুরে বিন্যাসের দেখা। এখানকার ত্রিকোণাকার গুহামুখগুলোতে ইনস্টাগ্রামে দেওয়ার মতো অনেক ছবি তোলার সুযোগ পাবেন। এমনকি ¯œরকেলিংয়ের জন্যেও এখানে একটি স্পট খুঁজে বের করে ফেলতে পারবেন। একইভাবে নর্থ ওটাগোর একটি ব্যক্তিমালিকানাধীন খামারে গেলে পাবেন এলিফেন্ট রকস-এর দেখা। হাতির মতো দেখতে পাথরগুলো চুনাপাথরের তৈরি, যার কোনো কোনোটি ১০ মিটার পর্যন্ত চওড়া।
নিউজিল্যান্ড ভ্রমণ : স্টার স্ট্রাক
যারা আকাশের তারার দিকে ঠায় তাকিয়ে থাকতে পছন্দ করেন, তাদের হতাশ করবে না নিউজিল্যান্ড ভ্রমণ । নিহারিকা, নক্ষত্রপুঞ্জ ও গ্যালাক্সিগুলো রাতের আকাশে পরিষ্কার দেখা যায়। আন্তর্জাতিক ডার্ক স্কাই অ্যাসোসিয়েশন এখানকার তিনটি দ্বীপের একটিকে ডার্ক স্কাই রিজার্ভ স্ট্যাটাস দিয়েছে। দ্বীপটি হলো হাউরাকি গালফের কাছে থাকা গ্রেট ব্যারিয়ার আইল্যান্ড। নতুন বেড়াতে যারা আসছেন তাদের কিন্তু টংগারিরো নাইট ক্রসিং, সেন্ট্রাল নর্থ আইল্যান্ড, আওরাকি ম্যাকেনজি ইন্টারন্যাশনাল ডার্ক স্কাই রিজার্ভ, ক্যান্টারবারি অ্যান্ড রাকিউরা; এসব দেখা বাদ দেওয়া উচিৎ হবে না একদমই।
খাবারের আহ্বানে
১৪০০০ কিলোমিটার জুড়ে থাকা উপকূলীয় এলাকাযুক্ত নিউজিল্যান্ডের সি-ফুড না খেয়ে তো আর থাকা যাবে না। এর মধ্যে মাওরি হাংগি নামের ঐতিহ্যবাহী খাবারটা খেতে ভুলবেন না। সময় নিয়ে রান্না করা খাবারটিতে মাংস ও সবজি দুটোই থাকে। বিশেষ মুহূর্তগুলোতেই কেবল এটা রান্না করা হয়। ক্রেফিশ, লবস্টার, ভেড়ার রোস্ট, পাউয়া, বড় সামুদ্রিক শামুক ও কিনা নামের একটি বড় সামু্িরদক শজারুসহ এখানকার স্থানীয় আরো কিছু খাবার চেখে দেখবেন অবশ্যই। কিউই বার্গারে গতানুগতিক মাংসের পুর ছাড়াও পাবেন ডিম ভাজা ও বিটরুট। এ নাশতাটাও মিস করা ঠিক হবে না। আর ডেজার্টের প্রসঙ্গ যদি এসেই পড়ে তবে ক্যারামেল দেওয়া হানিকম্ব আইসক্রিম থেকে শুরু করে কমলার স্বাদে চিনি মাখানো চকোলেট বল জাফফা এবং হুইপড ক্রিম, ফল ও ডিমের স্বাদা অংশ দিয়ে বানানো পাভলোভা তো আছেই। এগুলোর স্বাদ এক কথায় দারুণ। প্রাচুর্যে ভরপুর অভিজ্ঞতার জন্য ছুটি কাটাতে নিউজিল্যান্ড আপনাকে যেতেই হবে। তো আর অপেক্ষা কীসের?