class="post-template-default single single-post postid-34957 single-format-standard wp-custom-logo group-blog vl-boxed aa-prefix-matin-">
Shadow

অষ্টম শ্রেণির বিজ্ঞান | প্রস্বেদন ও এর গুরুত্ব নিয়ে আলোচনা

প্রস্বেদনআমরা মানুষরা তো প্রতিদিন ঘামি। যেমন, খেলাধুলা করতে গিয়ে, কোনো ভারী কাজ করতে গিয়ে। এই ঘাম  বর্জ্য পদার্থ বের হবার ক্ষেত্রে দারুণ ভূমিকা পালন করে। উদ্ভিদও ঘামে। আর তাকেই বলে প্রস্বেদন।

একটা প্লাস্টিক‌ পলিথিন দিয়ে যদি গাছের কিছু পাতা সুতা দিয়ে বেঁধে দাও। কিছুক্ষণ অপেক্ষা করলে দেখা যাবে, পলিথিনের মধ্যে বিন্দু বিন্দু পানি জমে আছে। এটাকেই আমরা উদ্ভিদের প্রস্বেদন প্রক্রিয়া বলি।

 

তাহলে উদ্ভিদের প্রস্বেদন প্রক্রিয়া নিয়ে কিছু জানা যাক এবার।

প্রস্বেদন (Transpiration) উদ্ভিদের একটি শারীরবৃত্তীয় (physiological) বা বাষ্পমোচন প্রক্রিয়া। অর্থাৎ, যে শারীরবৃত্তীয় প্রক্রিয়ায় উদ্ভিদের বায়বীয় অঙ্গ (সাধারণ পাতা) হতে অতিরিক্ত পানি বাষ্পাকারে বেরিয়ে যায় যায় তাকে প্রস্বেদন বলে।

উদ্ভিদের শারীরবৃত্তীয় ও বিভিন্ন বিপাকীয় কাজের জন্য পানির প্রয়োজনীয়তা অপরিসীম। তাই উদ্ভিদ তার মূলরোমের মাধ্যমে প্রচুর পরিমাণে পানি শোষণ করে। সেই শোষিত পানি কান্ডের মাধ্যমে পাতায় পৌঁছায়।

শোষণ করা পানির সামান্য অংশই তার বিভিন্ন জেবনিক ক্রিয়া-বিক্রিয়ায় খরচ হয় এবং বেশিরভাগ পানিই (শতকরা ৯৯ভাগ অংশ) বাষ্পাকারে বের হয়ে যায়। বায়ুমণ্ডলের উন্মুক্ত উদ্ভিদের যেকোনো অংশ দিয়ে প্রস্বেদন ঘটে থাকে। তবে পাতাই উদ্ভিদের প্রধান প্রস্বেদন অঙ্গ।

 

প্রস্বেদন কত প্রকার | প্রস্বেদন কোথায় ঘটে | প্রস্বেদনের কাজ কী?

প্রস্বেদন বেশিরভাগ ক্ষেত্রে পত্ররন্ধ্রের (বিশেষ কোনো ছিদ্র নয়, গুরুত্বপূর্ণ ক্ষুদ্রাঙ্গ) মাধ্যমে হয়।

প্রস্বেদন কোথায় ঘটিত হচ্ছে তার ভিত্তিতে প্রস্বেদন ৩ প্রকার।

 

১। পত্ররন্ধ্রীয় প্রস্বেদন

পানি বাষ্পাকারে পত্ররন্ধ্রের মাধ্যমে বেরিয়ে বাইরে বাতাসের সাথে মিশে যাওয়াকে পত্ররন্ধ্রীয় প্রস্বেদন বলে। শতকরা ৯০-৯৫%ভাগ এই প্রক্রিয়ায় প্রস্বেদন ঘটে। তাই পাতাই উদ্ভিদের প্রস্বেদনের প্রধান অঙ্গ।

পত্ররন্ধ্র খালি চোখে দেখা যায় না, অনুবীক্ষণ যন্ত্র দিয়ে দেখতে হয়।

4,249 BEST Transpiration IMAGES, STOCK PHOTOS & VECTORS | Adobe Stock

২। লেন্টিকুলার প্রস্বেদন

পানি তখন লেন্টিকুলার পথে বাষ্পাকারে বাইরে বেরিয়ে যায় তখন তাকে লেন্টিকুলার প্রস্বেদন বলে। লেন্টিকুলার পাতার কান্ডে থাকে। উদ্ভিদের বৃদ্ধির ফলে অনেক সময় কান্ডের কর্ক টিস্যুর স্থানে স্থানে ফেটে লেন্টিসেল সৃষ্টি হয়। আর লেন্টিসেল অংশ দিয়ে খুব কম পরিমাণে পানি এই পথে বের হয়। লেন্টিসেল খালি চোখে দেখা যায়।

 

৩। ত্বকীয় বা কিউটিকুলার প্রস্বেদন

উদ্ভিদের দেহকে শুষ্কতার হাত থেকে রক্ষার জন্য বহিঃত্বকের ওপর যে কিউটিন জাতীয় একটি অভেদ্য রাসায়নিক পদার্থের আবরণ থাকে, তাকে কিউটিকল বলে। কিউটিন‌ স্নেহ জাতীয় পদার্থ।

ত্বকের কিউটিকল অংশ থেকে বাষ্পকারে পানি বেরিয়ে যাওয়াকে ত্বকীয় বা কিউটিকুলার প্রস্বেদন বলে।যদিও পত্ররন্ধ্রীয় প্রস্বেদনের প্রক্রিয়ায় এর পরিমাণ অনেক কম।

অনেক শুষ্কবস্থায় তখন পত্ররন্ধ্র বন্ধ হয়ে যায় এবং এর ফলে পত্ররন্ধ্রের প্রস্বেদন বন্ধ হয়ে যায়।তখন ও ত্বকীয় প্রস্বেদন তার কাজ চালিয়ে যেতে পারে।

 

প্রস্বেদনের কাজ হলো, উদ্ভিদের তার অতিরিক্ত পানির চাপ থেকে মুক্তি করা।প্রস্বেদনের ফলে কোষরসের ঘনত্ব বৃদ্ধি পায়। উদ্ভিদের দেহকে ঠান্ডা রাখে। আদ্রর্তা বজায় রাখে।

 

 

উদ্ভিদের জন্য প্রস্বেদনের গুরুত্ব

উদ্ভিদের পানির ভারসাম্যতা ও সমতা রক্ষা করতে প্রস্বেদনের গুরুত্ব অনেক।এর বিশেষ কারণ‌গুলো হলো-

 

১। পানি শোষণ

পাতার প্রস্বেদনের ফলে বাহিকা নালিতে যে পানির অভাব হলে তা গাছের মূলরোমের মাধ্যমে পানি শোষণে সহায়তা করে।তাই জীবন রক্ষাকারী পানি শোষণে প্রস্বেদনের ভূমিকা আছে।

 

২। লবণ পরিশোষণ

উদ্ভিদের প্রস্বেদন এর কারণে চারদিক থেকে লবণের কণা উদ্ভিদমূলের কাছে আসে, এতে উদ্ভিদ সহজে লবণ গ্রহণ করতে পারে।

 

৩। সালোকসংশ্লেষণ

সালোকসংশ্লেষণের মাধ্যমে খাদ্য তৈরির জন্য পানির প্রয়োজন। প্রস্বেদন না হলে এ বিপুল পরিমাণ পানি পাওয়া যেতো না। এতে সালোকসংশ্লেষণ বা উদ্ভিদের  খাদ্য প্রক্রিয়া বন্ধ হয়ে যেতো বা কমে যেতো।

 

৪। কোষ বিভাজন

উদ্ভিদের কোষ বিভাজনের জন্য কোষের‌ স্ফীতি অবস্থা প্রয়োজন। উদ্ভিদের প্রস্বেদন পরোক্ষভাবে এ স্ফীতি অবস্থার ও কোন বিভাজনে সহায়তা করে।

 

৫। খাদ্য পরিবহন

প্রস্বেদনের ফলে উদ্ভিদ দেহের বিভিন্ন অংশে খাদ্য পরিবাহিতা হয়।

 

৬। অভিস্রবণ প্রক্রিয়া

প্রস্বেদনের কারণে কোষরসের ঘনত্ব বাড়ে। এতে অভিস্রবণ প্রক্রিয়ার উপযুক্ত পরিবেশ সৃষ্টি হয়।

Transpiration - Wikipedia

৭। শক্তি নির্গমণ

সূর্য হতে প্রতি মিনিটে উদ্ভিদের পাতা‌ প্রচুর শক্তি শোষণ করে। এর মাত্র শতকরা এক ভাগ (তার ও কম) উদ্ভিদ তার  বিক্রিয়ার কাজে খরচ করে আর বাকি শক্তি প্রস্বেদনের মাধ্যমে বের হয়ে যায়।না হলে উদ্ভিদ অধিক তাপে মারা যেতো।

প্রস্বেদন উদ্ভিদের জন্য একটি অনিবার্য প্রক্রিয়া।প্রস্বেদন উদ্ভিদের জন্য যেমন প্রয়োজনীয় তেমনি ক্ষতিকর ও ।এজন্য প্রস্বেদনকে উদ্ভিদের জন্য Necessary Evil বলা হয়।

মাটিতে পানির অভাব হলে সেক্ষেত্রে প্রস্বেদন উদ্ভিদের জন্য কাল হয়ে দাঁড়ায়। কারণ মাটিতে পানির অভাব হলে, উদ্ভিদ যতটুকু পানি শোষণ করলে তার বেশি পানি বের হয়ে গেলে প্রস্বেদনের দ্ধারা । যদি উদ্ভিদ তার পরিমাণ পানি শোষণ না করতে পারে, উদ্ভিদের খাদ্য ও বিভিন্ন কার্যকলাপের বাধা সৃষ্টি হবে। গাছ নেতিয়ে যাবে। এই প্রক্রিয়া কয়েকদিন চলতে থাকলে উদ্ভিদ মারা যাবে।

 

প্রস্বেদন নিয়ে এ আলোচনা লিখেছেন ইসরাত জাহান স্বর্ণা

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Please disable your adblocker or whitelist this site!