class="post-template-default single single-post postid-1052 single-format-standard wp-custom-logo group-blog vl-boxed aa-prefix-matin-">
Shadow

চাকরির পেছনে না ঘুরে ব্যবসায়ের আইডিয়া গুণে উদ্যোক্তা তারা

ব্যবসায়ের আইডিয়াঈদে তো শুধু শাড়ি, জামা, চুড়ি কিনলেই হয় না। জুতা, টুপি, জায়নামাজ, সুগন্ধি, শিশুদের সালামি রাখার ব্যাগ লাগে। আবার ঈদের মজাদার খাবারের সঙ্গে একটু আচার না হলে কী চলে! আর এসবের মাঝেই বেরিয়ে আসতে পারে দারুণ কোনো ব্যবসায়ের আইডিয়া ।

এমন ধরনের নানা পণ্য নিয়ে রাজধানীতে বসেছিল ঈদ উদ্যোক্তা হাট। এক দল শিক্ষিত তরুণ যাঁরা চাকরির পেছনে ঘুরে জীবনের অনেকটা সময় কাটিয়ে দিয়েও সেই সোনার হরিণের দেখা পাননি, তাঁরা নিজেই অনলাইনে ব্যবসা শুরু করেন। এমন ৩৫ জন উদ্যোক্তা তাঁদের পণ্য নিয়ে বসেছিলেন এ হাটে। এঁদের মধ্যে ৩০ জনই নারী।

মিরপুরের ১০ নম্বর গোলচত্বরের কাছে বিলাস ভবন কমিউনিটি সেন্টারে বসেছিল তিন দিনব্যাপী এ হাট। হাটের উদ্যোক্তা হলো বাংলাদেশ ওপেন সোর্স নেটওয়ার্কের সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম ফেসবুকভিত্তিক ‘চাকরি খুঁজব না, চাকরি দেব’ গ্রুপ। হাটে অংশ নেওয়া উদ্যোক্তাদের অনেকেই বলছিলেন, চাকরির পেছনে ঘুরে লাভ নেই, এ বিষয়টি বুঝতেই জীবন থেকে অনেক সময় চলে গেছে। নতুন উদ্যোক্তারা যাতে এ ভুল না করেন।

গত শনিবার হাটের শেষ দিনে গিয়ে দেখা গেল, সাড়ে সাত ইঞ্চি থেকে সাড়ে নয় ইঞ্চি মাপের রুটি তৈরির জন্য কাঠের ম্যাজিক রুটি মেকার নিয়ে জাহিদুল ইসলাম, আবার টাঙ্গাইলের তাঁতিদের কাছ থেকে টাটকা শাড়ি এনে পসরা সাজিয়ে উদ্যোক্তা ইশরাত জাহান তাতিয়া হাজির হয়েছিলেন তাঁর তাঁতি আর তাঁত নিয়ে। কেউবা বসেছিলেন ফরমালিন মুক্ত ফল নিয়ে, আবার কেউ বসেছিলেন ফল, সবজি থেকে ফরমালিন দূর করার জন্য বিভিন্ন সামগ্রী নিয়ে।

‘চাকরি খুঁজব না, চাকরি দেব গ্রুপের মডারেটর এবং হাটের আহ্বায়ক আমিনুল ইসলাম জানালেন, এ গ্রুপের সদস্য ৮০ হাজারের বেশি। গ্রুপের মূল উদ্দেশ্য নতুন উদ্যোক্তাদের বিভিন্ন তথ্য দিয়ে সহায়তা করা। এই উদ্যোক্তাদের বেশির ভাগেরই ব্যবসা ফেসবুকে বা অনলাইনভিত্তিক। বেশির ভাগেরই কোনো শোরুম নেই।

গ্রুপটি এবারই প্রথম ঈদকে কেন্দ্র করে হাট করার উদ্যোগ নেয়। হাটে উদ্যোক্তারা বেচাকেনার চেয়েও বেশি প্রাধান্য দিয়েছেন ক্রেতাদের সঙ্গে যোগাযোগের বিষয়টিকে। এখান থেকেই অনেক উদ্যোক্তা বিভিন্ন অর্ডার নিয়ে বাড়ি ফিরেছেন।

উদ্যোক্তা আল মারুফ রাসেলের ক্রাফট্রির বয়স মাত্র দুই মাস। স্ত্রী ও এক বন্ধু এ ব্যবসার অংশীদার। মারুফ জানালেন, বাচ্চাদের ঈদের আনন্দকে আর একটু বাড়িয়ে দিতে পাটের তৈরি সালামি পার্স উদ্যোক্তা মেলায় ভালোই বিক্রি হয়েছে। ব্যাগে বাক-শ্রবণপ্রতিবন্ধী শিশুদের আঁকা ছবি ভিন্ন মাত্রা দিয়েছে। পাটের মেলায় এসে শাড়ির ব্যাগ বানিয়ে দেওয়ার অর্ডার পাওয়া গেছে।

স্বাক্ষরের উদ্যোক্তা নওরীন জাহান চারুকলা থেকে এম এ পাস করে দেশীয় ফ্যাশন হাউস দেশালের ডিজাইনার হিসেবে কাজ করেছেন। কিন্তু সব সময় চাইতেন নিজের কিছু হোক। নওরীন জাহান বলেন, ‘চাকরি ছেড়ে দিলে আমার বলে আর কিছু থাকল না। কিন্তু এখন যে কাজটা করছি, তা আমার নিজস্ব। নেপাল থেকে পাথর, পুঁতিসহ বিভিন্ন জিনিস এনে নিজেই গয়না বানাচ্ছি। তবে এ কাজে পরিবারের কাছ থেকে সহযোগিতা পাওয়া জরুরি, যা আমি পেয়েছি।’

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের কেমিস্ট্রি বিভাগের শেষ বর্ষের শিক্ষার্থী খন্দকার হাসিফ আহমেদ ক্রেতাদের কাছে তাঁর পারফিউমেন্সের পারফিউম ওয়েলের বর্ণনা করছিলেন। অ্যালকোহল ফ্রি এসব সুগন্ধির কোনোটার ঘ্রাণ হলো গোলাপের বাসি পাপড়ির মতো, কোনোটার আফ্রিকার হাতির ঘামের ঘ্রাণ, কোনোটার বৃষ্টির পর মেহেদি ফুলে যে ঘ্রাণ অথবা হলুদ বাটার ঘ্রাণ, ভেষজ আগর গাছের ঘ্রাণ।

ফিনারী মানে সূক্ষ্ম কারুকার্য। ফিনারীর উদ্যোক্তা ড চিং চিং চাকরির পেছনে অনেক ঘোরাঘুরি করেন। পরে ক্ষুদ্র জাতিসত্তার বিভিন্ন গয়না এবং রিকশা পেইন্টকে উপজীব্য করে চালু করেন ফিনারী। টিনের টি পট, কাচের গ্লাস থেকে শুরু করে শাড়িতেও জায়গা করে নিয়েছে রিকশা পেইন্ট। খাবারের পর মানুষ যে বোতল ফেলে দেয় তাতেই রিকশা পেইন্ট করে নতুন পণ্য বানানো হয়েছে। ড চিং চিং বলেন, ‘চাকরির পেছনে অনেক ঘুরেছি। পরে এ ব্যবসা শুরু করি। মাত্র দুই বছরে ভালো সাড়া পাচ্ছি।’ তাঁকে এ কাজে সার্বিক ভাবে সহায়তা করছিলেন তাঁর স্বামী রাজু হামিদ।

বৈচিত্র্যের রোকেয়া পারভীন ২০১২ সালে থাইরয়েড ক্যানসারে আক্রান্ত হন। বিছানায় থাকতে হয়েছে দীর্ঘদিন। চিকিৎসার পাশাপাশি শুয়ে শুয়ে চিন্তা করতেন কিছু একটা করার। ছোটবেলায় বিভিন্ন ফেলে দেওয়া জিনিস দিয়ে হাতের বিভিন্ন জিনিস তৈরি করতেন। কিছুটা সুস্থ হয়ে পাটসহ বিভিন্ন পণ্য তৈরিসহ ব্যবসার বিভিন্ন দিক শেখার জন্য প্রশিক্ষণ নেন। বর্তমানে পাটের ফেলে দেওয়া আঁশ, প্লাস্টিকের ফেলে দেওয়া পাইন, গামছা কাপড় দিয়ে তৈরি করছেন গয়না। পাটের তৈরি ওয়াইন ব্যাগ দেশের বাইরে রপ্তানি করছেন। এ ব্যবসার পাশাপাশি নিজস্ব বিউটি পারলার এবং বুটিক নিয়ে কাজ করছেন।

অ্যানেক্স লেদারের মোস্তফা দিপু চামড়া দিয়ে তৈরি করছেন জায়নামাজ, টুপি, ট্রলি ব্যাগসহ নানা পণ্য। এসব পণ্য মালয়েশিয়াসহ বিভিন্ন দেশে রপ্তানি করছেন।

খুলনার চুইঝাল দিয়ে গরুর মাংসের আচারসহ বিভিন্ন আচার বানান রেজওয়ানা রশীদ। চুইঝাল ডটকমে এ আচার অর্ডার করলে দেশের যেকোনো প্রান্তে পৌঁছে দেওয়ার ব্যবস্থা রয়েছে।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Please disable your adblocker or whitelist this site!