সারা বিশ্বে ক্যান্সার আক্রান্ত হয়ে লক্ষ লক্ষ মানুষের মৃত্যু হচ্ছে প্রতি বছর। চিকিত্সার বিপুল খরচের কারণে এখনও পর্যন্ত ক্যান্সার মধ্যবিত্তের কাছে একটি আতঙ্কের নাম! প্রতিনিয়ত বাড়ছে ক্যান্সার আক্রান্ত রোগীর সংখ্যা। তাই সতর্ক থাকা ও নিয়মিত ডাক্তারের পরামর্শ নেয়াটা খুবই জরুরী।
ক্যান্সারে আক্রান্তকে মৃত্যুর হাত থেকে বাঁচানো সম্ভব। কিন্তু তার জন্য রোগটি প্রাথমিক পর্যায়ে শনাক্ত করা তত্যন্ত জরুরী। তবে বেশির ভাগ ক্ষেত্রেই প্রাথমিক পর্যায়ে শনাক্ত করাটা মুশকিল হয়। এমন বেশ কিছু ক্যান্সার রয়েছে যেগুলি প্রাথমিক পর্যায় শনাক্ত করা প্রায় অসম্ভব! আসুন জেনে নেওয়া যাক তেমনই ৭টি রকম ক্যান্সারের কথা যেগুলি প্রাথমিক পর্যায় শনাক্ত করা প্রায় অসম্ভব…
১) মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের পরিসংখ্যান অনুযায়ী, সারা দেশে ক্যান্সার আক্রান্তদের মধ্যে মাত্র ২ শতাংশ প্যানক্রিয়াটিক ক্যান্সারে আক্রান্ত হন। কিন্তু ব্রেস্ট ক্যান্সারের তুলনায় এতেই বেশি মানুষের মৃত্যু হয়। প্যানক্রিয়াস বা অগ্ন্যাশয়ের ক্যান্সার শনাক্ত করা বেশ কঠিন। কারণ, অগ্ন্যাশয়ের ক্যান্সারের ক্ষেত্রেও সাধারণ জন্ডিসের মতোই উপসর্গ দেখা দিতে পারে। প্রাথমিক ভাবে তেমন ব্যথা হয় না, আর এর তেমন কোনও উপসর্গও বাইরে প্রকাশ পায় না।
২) কিডনির ক্যান্সারের উপসর্গগুলি হল, পিঠের নীচের দিকে যন্ত্রণা, সারাক্ষণ ক্লান্তি ভাব, হঠাত ওজন অস্বাভাবিক কমে যাওয়া এবং মূত্রের সঙ্গে রক্তপাত। তবে চিন্তার বিষয় হল, কিডনি ক্যান্সারের জন্য তেমন কোনও পরীক্ষাও নেই।
৩) বেশির ভাগ ক্ষেত্রেই লাং বা ফুসফুসের ক্যান্সার ছড়িয়ে পড়ার পড়েই ধরা পড়ে। ফুসফুসের ক্যান্সারও প্রাথমিক পর্যায়ে ধরা পড়ে না কারণ, এর তেমন কোনও বিশেষ উপসর্গ থাকে না। শুধু তাই নয়, চেস্ট এক্সরেতেও ফুসফুসের ক্যান্সার ধরা পড়ে না। পিইটি বা সিটি স্ক্যানে তা ধরা পড়তে পারে। শেষ দিকে ধরা পড়লে ফুসফুস ক্যান্সারে বাঁচার সম্ভাবনা খুব কম।
৪) একেবারে শেষের দিকে এর উপসর্গ বোঝা যায় বলে লিভার যকৃতের ক্যান্সারও শনাক্ত করা খুবই কঠিন। কারণ, লিভারের বেশিরভাগ অংশই পাঁজরের নীচে ঢাকা থাকে। যাদের মদ্যপানের অভ্যাস রয়েছে বা লিভার সিরোসিস রয়েছে, তাদের লিভার ক্যান্সারের ঝুঁকি বেশি।
৫) মহিলারা যত রকমের ক্যান্সারে আক্রান্ত হন তার মধ্যে মাত্র ৩ শতাংশ হল জরায়ুর বা ওভারিয়ান ক্যান্সার। কিন্তু মাত্র ২০ শতাংশ প্রাথমিক পর্যায়ে শনাক্ত করা যায়। মূলত, প্রাথমিক পর্যায়ে তেমন কোনও উপসর্গ না থাকায় তা শনাক্ত করা খুব কঠিন। সাধারণত, তৃতীয় বা চতুর্থ পর্যায়ের (স্টেজ) পর জরায়ুর ক্যান্সার ধরা পড়ে।
৬) মস্তিষ্ক এবং সুষুম্নাকাণ্ডের টিউমার শনাক্ত করা যায় তখনই যখন তার উপসর্গগুলি প্রকাশ পায়। কিন্তু বেশিরভাগ ক্ষেত্রেই এ সব উপসর্গগুলি এতটাই সাধারণ যে, সেগুলিকে তেমন একটা গুরুত্ব দেন না আক্রান্তরা। যেমন, হাত কাঁপা, কথা জড়িয়ে যাওয়া, ব্যক্তিত্বে সূক্ষ্ম পরিবর্তন ইত্যাদি। ব্রেন ক্যান্সারের আরেকটি উপসর্গ হল মাথাব্যথা। সাধারণত এমআরআই বা মস্তিষ্কের সিটি স্ক্যান ছাড়া ব্রেন ক্যান্সার ধরা পড়ে না।
৭) শরীরের বিভিন্ন টিস্যু যেমন পেশী, চর্বি, ত্বকের গভীরের কোষ, হাড় বা তরুনাস্থিতে হয় সার্কোমা ক্যান্সার। প্রাথমিক পর্যায়ে এই ক্যান্সারের তেমন কোনও উপসর্গ প্রকাশ পায় না। সাধারণত, শিশুদের মধ্যেই বেশি দেখা যায়। এই ক্যান্সার সাধারণত দ্বিতীয় বা তৃতীয় পর্যায়ের (স্টেজ) পর বায়োপসির মাধ্যমে শনাক্ত করা যায়। কিন্তু অন্য কোনও পরীক্ষার মাধ্যমে সার্কোমা শনাক্ত করা যায় না।