ডায়াবেটিক রোগীদের সতর্কতা
রোজা রাখলে ডায়াবেটিক রোগীরা রক্তে সুগারের স্বল্পতা (হাইপোগ্লাইসেমিয়া), রক্তে সুগারের আধিক্য (হাইপারগ্লাইসেমিয়া), কিটোএসিডোসিস, পানিশূন্যতা বা ডিহাইড্রেশন ইত্যাদি জটিলতার সম্মুখীন হতে পারেন। এ জন্য তাঁদের বেশ সতর্ক থাকতে হয়।
হাইপোগ্লাইসেমিয়া হলে
রোজায় ডায়াবেটিক রোগীদের যে সমস্যাটি সবচেয়ে বেশি হয় এবং সবচেয়ে বিপজ্জনক, সেটি হলো হাইপোগ্লাইসেমিয়া। ডায়াবেটিক রোগীদের রক্তে সুগারের মাত্রা কমে গিয়ে তিন মিলিমোল বা লিটার অথবা তার কম হলে হাইপোগ্লাইসেমিয়া হয়েছে বলে ধরে নেওয়া হয়। এ সময় রোগীর মাথা ঘোরা, দুর্বল লাগা, বমি বমি ভাব, মাথা ব্যথা, চিকন ঘাম দেওয়া, শরীর কাঁপুনি, ঘুম ঘুম ভাব, এমনকি অজ্ঞান হয়ে যেতে পারে। দিনের যেকোনো সময় এ রকম লক্ষণ দেখা দিলে সঙ্গে সঙ্গে রক্ত পরীক্ষা করতে হবে। রোজা অবস্থায় ডায়াবেটিক রোগীর সুগারের মাত্রা ৩.৯ মিলিমোল বা তার কম থাকলে রোজা ভেঙে ফেলতে হবে। তাত্ক্ষণিকভাবে চার থেকে ছয় চামচ গ্লুকোজ বা চিনি এক গ্লাস পানিতে মিশিয়ে খাওয়াতে হবে। চিনি বা গ্লুকোজ না থাকলে মিষ্টি, চকোলেট বা অন্য যেকোনো খাবার খাওয়াতে হবে। অজ্ঞান হয়ে গেলে দ্রুত হাসপাতালে নিতে হবে এবং ২৫ শতাংশ ডেক্সট্রোজ স্যালাইন যথাশিগগির শিরায় দিতে হবে।
গ্লুকোজের মাত্রা বেড়ে গেলে
ডায়াবেটিক রোগীদের গ্লুকোজের মাত্রা বেড়ে গেলে অনেক ধরনের জটিলতা তৈরি হয়। ইনসুলিনের ঘাটতির কারণে কম সময়ে এসিটোন বেড়ে গিয়ে মাথা ঘোরা, শক্তি কমে যাওয়া, কখনো কখনো ঝিমুনি, বমি, দুর্বলতা ইত্যাদি জটিল আকার ধারণ করতে পারে। সেই সঙ্গে গ্লুকোজের কার্যক্রম অনিয়মতান্ত্রিক হয়ে অধিক প্রস্রাব, পিপাসা ও পানিশূন্যতার লক্ষণ প্রকাশ পায়। এ সময় রক্তচাপ নিম্নমুখী হওয়া, চামড়া শুকিয়ে যাওয়া, রক্তে গ্লুকোজের মাত্রা বেড়ে যাওয়া, প্রস্রাবে গ্লুকোজের মাত্রা বেশি হওয়া ও এসিটোন প্রকাশ পাওয়া প্রভৃতি উপসর্গ দেখা দেয়। তখন দ্রুত চিকিৎসা না করালে কিটোএসিডোসিসের উপস্থিতি হয়ে রোগী বিপজ্জনক পর্যায়ে পৌঁছতে পারে। কিটোএসিডোসিস ছাড়াও যদি রক্তে সুগার ১৬.৭ মিলিমলে পৌঁছে, তবে চামড়ার নিচে ইনসুলিন দিয়ে সুগারের মাত্রা নিয়ন্ত্রণ করতে হবে। এতে অবশ্য রোজার কোনো ক্ষতি হবে না। পরবর্তী সময়ে ডায়াবেটিসের ওষুধ সমন্বয় করতে হবে।
রক্তে চর্বি বেড়ে গেলে
রমজান মাসে নিয়ন্ত্রিত খাবারের ফলে ডায়াবেটিক রোগীদের রক্তে চর্বির ঘাটতি হয়। কোলেস্টেরল বা ট্রাইগ্লিসারাইড কমে যায়। আবার অনিয়ন্ত্রিত খাবারের ফলে রক্তে চর্বিও বেড়ে যেতে পারে। এ জন্য ক্যালরি ঠিক রেখে খাবারের পরিমাণ ঠিক করতে হবে। চর্বিজাতীয় খাবার, বিশেষ করে প্রাণিজ চর্বি যেমন—ঘি, মাখন, মাংস ও তৈলাক্ত খাবার থেকে দূরে থাকতে হবে।
চর্বি বৃদ্ধি থেকে রক্ষা পেতে খাদ্যে ক্ষতিকারক অতিরিক্ত চর্বি গ্রহণে সীমাবদ্ধ থাকতে হবে। মোট খাদ্যের মধ্যে চর্বির পরিমাণ যেন ৩০ শতাংশের বেশি না হয়। এ জন্য শাকসবজি, টক ফলমূল বেশি করে খেতে হবে।
লেখক : ডায়াবেটিস ও মেডিসিন বিশেষজ্ঞ
ল্যাবএইড, উত্তরা।
https://www.youtube.com/watch?v=Geg0SPadJxM&feature=youtu.be&fbclid=IwAR2HglGA9JSXIEbcvEWF0-NSYX9OzQEZymVGMbPrRjOZLDTmhxxrotcebkA