class="post-template-default single single-post postid-10724 single-format-standard wp-custom-logo group-blog vl-boxed aa-prefix-matin-">
Shadow

রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের কিছু মজার ঘটনা শুনুন

শরৎচন্দ্র চট্টোপাধ্যায় জুতা চুরির ভয়ে কবিগুরুর সাহিত্য সভায় আসার সময় তাঁর জুতা জোড়া কাগজে মুড়ে কোলে রাখতেন। প্রায়ই এ ঘটনা ঘটত। একদিন জনৈক সাহিত্য সভার সদস্য কবিগুরুকে চুপিচুপি ব্যাপারটি বলে দিলেন।
কবিগুরু তখন জিজ্ঞেস করলেন : শরৎ, তোমার কোলে কি পাদুকা পুরাণ?

শান্তিনিকেতনে খুব মশা ছিল। তাই কবি হাতে-পায়ে তেল ব্যবহার করতেন। কখনো কোনো আগন্তুক উপস্থিত হলে মজা করে বলতেন : ভেব না যে আমি বুড়ো মানুষ, বাত হয়েছে বলে পায়ে তেল মালিশ করছি। এ মশার ভয়ে। শান্তিনিকেতনের মশারা ভারি নম্র। তারা সারণই পদসেবা করে।

কবিগুরু কথা প্রসঙ্গে দিনবাবুকে (তাঁর নাতি দিনেন্দ্রনাথ ঠাকুর) একবার বলেছিলেন : বুঝলি দিনু, সেদিন অমুক লোকটা আমার কাছ থেকে দশ টাকা ধার নিয়ে গদ গদ কণ্ঠে বললÑ‘আপনার কাছে আমি চিরঋণী হয়ে রইলুম।’ দিনবাবু আতকে উঠে বললেন, ‘তুমি দিলে ওকে টাকাটা? ও তো একটা জোচ্চোর!’
তা’ মানি, কিন্তু লোকটার শত দোষ থাকলেও একটা গুণ ওর ছিলÑকবিগুরু শান্তস্বরে বললেন, লোকটা সত্যভাষী। কথা রেখেছিল, চিরঋণী হয়েই রইল!

কবিগুরু একবার বিধু শেখর শাস্ত্রীকে ডেকে বললেন : মশাই, আপনাকে আমি দণ্ড দেব।
গুরুদেবের কথায় শাস্ত্রী মশাই তো একেবারে অপ্রস্তুত হয়ে গেলেন। এমন কী অন্যায় তিনি করেছেন যার জন্য তাঁর দণ্ড প্রাপ্য?
তখন কবিগুরু একখানা লাঠি তাঁকে দিয়ে বললেন : এই নিন দণ্ড, ফেলে গিয়েছিলেন।

মংপুতে মৈত্রেয়ী দেবী কবিগুরুকে কয়েকদিন ধরে নিরামিষ খাওয়াচ্ছিলেন। তো একদিন মৈত্রেয়ী দেবী কিছু খাবার নিয়ে এসে বললেন : এটা একটু খাবেন? রোজ রোজ আপনাকে কী নিরামিষ খাওয়াব ভেবে পাই না।
কবিগুরু বললেন : ও পদার্থটা কী?
মৈত্রেয়ী দেবীর উত্তর : ব্রেইন।
তখন কবিগুরু বললেন : এই দেখ কাণ্ড, এ তো প্রায় অপমানের শামিল। কী করে ধরে নিলে যে, ওই পদার্থটার আমার প্রয়োজন আছে? আজকাল কী আর আমি ভালো লিখতে পারছিনে?

কবিগুরু এক সভায় হঠাৎ গম্ভীরভাবে বলে উঠলেন : এই ঘরে একটা বাদর আছে।
সভায় সবাই দারুণ অস্বস্তিভরে যখন একে অন্যের দিকে তাকাচ্ছেন, তখন গুরুদেব মৃদু হেসে বললেন : ডানদিকে যেমন একটি দোর আছে, বাঁ দিকেরও সে রকম আরেকটি দোর আছে।

সুধাকান্ত রায় চৌধুরীর সঙ্গে রবীন্দ্রনাথ একবার বেড়াচ্ছিলেন। হঠাৎ গুরুদেবের অস্ফুট কাতরোক্তি শুনে সুধাকান্ত বাবু তাঁর দিকে তাকাতেই রবীন্দ্রনাথ নিজেকে সামলে নিয়ে শান্ত সুরে বললেন : ‘পা-কে চরণ, কমল বা পাদপদ্ম কেন বলে জানো?’
প্রশ্ন শুনে সুধাকান্ত বাবুর চোখে বিস্ময় দেখে রবীন্দ্রনাথ পায়ের মোজা খুলতে খুলতে বললেন : ‘তাই যদি না হয়, তাহলে শরীরের এত জায়গা থাকতে মোজা ভেদ করে মৌমাছিটা পায়ের একেবারে তলায় হুলটা বিঁধাল কেন?’

একবার কালিদাস নাগ সস্ত্রীক বেড়াতে এলেন। রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর প্রশ্ন করলেন : শিশু নাগদের কোথায় রেখে এলে?

সাহিত্যিক বলাইচাঁদ মুখোপাধ্যায়ের (বনফুল) ছোট ভাই প্রবেশিকা পরীা পাস করে বিশ্বভারতীতে পড়ার জন্য একদিন শান্তিনিকেতনে এলেন। শান্তিনিকেতনে এসে জানলেন, কবিগুরু কানে কম শোনেন (!)। কথা বলার সময় যেন একটু জোরে বলেন।
কবিগুরুর সঙ্গে সাাতের সময় বড় ভাইয়ের (বনফুল) দেওয়া পরিচয়পত্র দেখালেন। কবিগুরু জিজ্ঞেস করলেন : কী হে, তুমি কি বলাইয়ের ভাই কানাই নাকি?
উত্তরে বলাইয়ের ভাই চেঁচিয়ে জবাব দিলেন : না, আমি অরবিন্দ।
কবি হেসে বললেন : না, কানাই নয়, এ যে দেখছি একেবারে সানাই।

একবার রবীন্দ্রনাথের সঙ্গে চীন ভ্রমণে গিয়েছিলেন শাস্ত্রী মশাই (িিতমোহন সেন শাস্ত্রী)। তখন আমের মৌসুম। কবিগুরু আম ভালোবাসেন জেনে চীন কর্তৃপ আম আনালেন বাংলাদেশ থেকে। তখন তো আর দ্রুত যাতায়াতব্যবস্থা ছিল না। আম যেন না পচে তাই রাসায়নিক মেশানো হয়েছিল। কিন্তু আম যখন চীনে পৌঁছাল তখন সেগুলো শুকিয়ে চুপসে গিয়ে রূপান্তরিত হয়েছিল এক অদ্ভুত বস্তুতে। চীনের লোক তো কবিকে তাঁর প্রিয় খাদ্য দিতে পেরে ভারি খুশি। তাঁদের জন্য এত কষ্ট করে আনা আম দুজনেই মুখবুজে গলাধঃকরণ করলেন।
কবিকে শাস্ত্রী মশাই জিজ্ঞেস করলেন : কেমন আম খেলেন গুরুদেব?
মৃদু হেসে জবাব দিলেন কবি : আম খেতে খেতে মনে হচ্ছিল, এক রবীন্দ্রনাথ আরেক রবীন্দ্রনাথের দাড়িতে তেঁতুল-গুড় মেখে চুষছে।

কবিগুরু আর গান্ধীজি নাশতা খাচ্ছিলেন।
গান্ধী লুচি পছন্দ করতেন না। তাই তাঁকে অন্য খাবার দেওয়া হলো। কবিগুরু খাচ্ছেন গরম গরম লুচি। তা দেখে গান্ধীজি বললেন : গুরুদেব, তুমি জানো না, তুমি বিষ খাচ্ছ।
উত্তরে রবীন্দ্রনাথ বললেন : বিষই হবে। তবে এর কাজ খুব ধীরে। কারণ আমি ষাট বছর ধরে এই বিষ খাচ্ছি।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Please disable your adblocker or whitelist this site!