শরীরের যেকোনো অঙ্গের ক্যানসারই মারাত্মক বা ভীতিকর রোগ। স্তন ক্যানসারও এর ব্যতিক্রম নয়। ক্যানসার হয়ে গেলে তার চিকিৎসা করানোর চেয়ে ক্যানসার প্রতিরোধই শ্রেয়তর। স্তন ক্যানসার প্রতিরোধের জন্য কিছু নিয়ম মেনে চলতে হয়। এভাবে স্তন ক্যানসার প্রতিরোধ সম্ভব অনেকাংশে।
শরীরের ওজনের দিকে খেয়াল রাখুন:
বিশেষ করে ১৮ থেকে ৪০ বছর বয়সের মধ্যে শরীরের ওজন যেন বেশি না বাড়ে, সেদিকে খেয়াল রাখুন। গবেষণায় দেখা গেছে, ১৮ থেকে ৪০ বছর বয়সের মধ্যে যেসব মহিলার শরীরের ওজন ২১ থেকে ৩০ পাউন্ড (৯.৫ থেকে ১৩.৫ কেজি) বৃদ্ধি পায়, তাদের স্তন ক্যানসারের সম্ভাবনা ওই বয়সে শরীরের ওজন ৫ পাউন্ডের চেয়ে কম বাড়া মহিলাদের চেয়ে ৪০ শতাংশ বেশি। বাড়তি ওজন মানে শরীরে বাড়তি তেল-চর্বি। শরীরে তেল-চর্বি বেশি জমলে রক্তে ইস্ট্রোজেন ও ইনসুলিন হরমোনের পরিমাণ বেড়ে যায়। ইস্ট্রোজেন ও ইনসুলিন—দুটোই স্তন ক্যানসারের সঙ্গে সম্পর্কযুক্ত। স্তন ক্যানসার মোটা মহিলাদেরই হয় বেশি। কাকে বলব মোটা? বাহ্যিকভাবে গোলগাল, নাদুসনুদুস শরীর দেখলেই আমরা বলি মোটা। শরীল কেমন মোটা, তা দেখার ভালো উপায় বিএমআই মেপে দেখা। শরীরের ওজন আর উচ্চতার অনুপাতকে বলে বিএমআই। শরীরের ওজন যত কেজি সেই সংখ্যাকে, উচ্চতা যত মিটার তার বর্গ দিয়ে ভাগ করতে হয়। সেই ভাগফলকে বলে বিএমআই। মনে করুন, আপনার ওজন ৫৫ কেজি আর উচ্চতা ১৫৫ সেন্টিমিটার বা ১.৫৫ মিটার। তাহলে আপনার বিএমআই ২২.৮৯ কেজি/মিটার২। সংক্ষেপে ২২.৮৯। বিএমআই ২৫-এর ওপরে হলো বুঝতে হবে শরীরটা মোটা। ৩০-এর উপরে হলে অতিশয় মোটা। বিএমআই মেপে অনেক সময় শরীরের চর্বির সঠিক পরিমাপ হয় না। কোমরের বেড় মেপে শরীরের চর্বির পরিমাণ সম্পর্কে আন্দাজ করা যায়। কোমরের মাপ নিতে হবে মোটামুটি নাভি বরাবর। মাপের ফিতাটাকে ত্বকের সঙ্গে হালকা করে লাগিয়ে মেপে নিন কোমরটাকে। কোমরের মাপ ৮০ সেন্টিমিটারের নিচে হলে ভালো।
ব্যায়াম করুন:
দৈনিক অন্তত ৩০ মিনিট করে সপ্তাহে কমপক্ষে পাঁচ দিন হাঁটুন। হাঁটা অত্যন্ত ভালো ব্যায়াম। এতে শরীরের ওজন ঠিক থাকবে। ঠিক থাকবে রক্তের তেল-চর্বি আর ইস্ট্রোজেন ও ইনসুলিনের মাত্রা। শরীরের চর্বি কমবে। স্তন ক্যানসারের সম্ভাবনা কমবে শতকরা প্রায় ২৫ ভাগ।
শাকসবজি:
শাকসবজি, ফলমূল, শস্যদানা, বিচিজাতীয় খাবার বেশি বেশি খান। এতে আঁশ বেশ। স্তন ক্যানসারের সম্ভাবনা কমাবে। শরীরের বাড়তি ওজন কমাতেও শাকসবজি গুরুত্বপূর্ণ। কারণ এতে ক্যালরি কম। শাকসবজি ক্যানসারের সম্ভাবনা কমায় প্রায় ২২ শতাংশ।
হরমোন ব্যবহারে সতর্ক হোন:
হরমোন রিপ্লেসমেন্ট থেরাপি কিংবা জন্মনিয়ন্ত্রণ বড়ি স্তন ক্যানসারের ঝুঁকি বাড়ায়। এসবের ব্যবহারে চিকিৎসকের পরামর্শ নিন।
স্ক্রিনিং করান নিয়মিত:
প্রাথমিক পর্যায়েই স্তন ক্যানসার ধরা পড়লে এর চিকিৎসা করা যায় সহজভাবে এবং সফলভাবে। প্রাথমিক পর্যায়ে রোগ শনাক্ত করে এর চিকিৎসা করাও এক ধরনের প্রতিরোধ। সেই লক্ষ্যে নিয়মিত ক্যানসার স্ক্রিনিং বা ক্যানসার আছে কি না, তা পরীক্ষা করিয়ে নেওয়াটাও ক্যানসার প্রতিরোধের ভালো উপায়। আমেরিকান ক্যানসার সোসাইটির মতে, ২০ থেকে ৩০ বছর বয়সেই শুরু করতে হবে নিজে নিজে বা ডাক্তার দিয়ে স্তন পরীক্ষা করা। এটাও স্ত্রিনিং। প্রতি তিন বছরে কমপক্ষে একবার করতে হবে এ পরীক্ষা। আর বয়স ৪০-এর বেশি হলে পরীক্ষাটা করতে হবে প্রতিবছর একবার করে। ম্যামোগ্রাফিও স্তন ক্যানসারের স্ক্রিনিং টেস্ট। এক থেকে দুই বছর অন্তর ম্যামোগ্রাফি শুরু করতে হবে ৪০ বছর বয়সে। আর ৫০ বছর বয়সের পর প্রতি দুই বছরে একবার করাতে হবে তা।
মো. শহীদুল্লাহ
বিভাগীয় প্রধান, কমিউনিটি মেডিসিন বিভাগ, কমিউনিটি বেজড মেডিকেল কলেজ, ময়মনসিংহ