আমি তুমি সে নাটকের সব পর্ব : দৃশ্য ১ থেকে দৃশ্য ১০
ami tumi se natok full story
প্রথম খণ্ড দৃশ্য ১ থেকে দৃশ্য ১০
দৃশ্য-১।
রাত। ইনডোর। আলো আঁধারি স্টুডিও। শিরিন ও ফটোগ্রাফার।
শিরিন স্বপ্ন দেখছে।
একটা চেয়ারে বসে আছে শিরিন। আশপাশে অন্ধকার। শিরিনের চোখে মুখে কড়া মেকাপ। কেউ একজন তার ছবি তুলছে। ফটোগ্রাফারকে দেখা যাচ্ছে না।
ফটোগ্রাফার: আরেকটু এদিকে। হুম.. এবার মুখটা একটু ডানে। না ওভাবে না, এক মিনিট আমি দেখিয়ে দিচ্ছি।
ফটোগ্রাফার এসে শিরিনের মুখটা ঘুরিয়ে দিল। শিরিন ভয় পেল।
ফ্ল্যাশ পড়ছে ঘন ঘন।
ফটোগ্রাফার: আহা! বললাম তো হচ্ছে না।
এবার এগিয়ে এসে শিরিনের দুই কাঁধে হাত রাখলো ফটোগ্রাফার। শিরিনের মুখে আবার হাত রাখলো। বার বার এদিক ওদিক তার চেহারাটা ঘুরিয়ে দিচ্ছে।
ফটোগ্রাফার: দেখি এদিকে, না না হয়নি, ওদিকে।
শিরিনের পেছন থেকে অনেক গুলো হাত উঠে এলো। হাতগুলো শিরিনের মুখ ঠিক করছে। কোনও হাত কাঁধ ঠিক করছে। কোনোটি তার মুখটাকে দুপাশ থেকে চেপে ধরে রেখেছে।
ফটোগ্রাফার খুব ঘন ঘন শিরিনের মুখ এদিক ওদিক নাড়ায়। শিরিনের কাঁধে হাত চেপে ধরে।
আমি তুমি সে নাটকের সব পর্ব (চিত্রনাট্য)
ami tumi se natok full story
প্রথম খণ্ড দৃশ্য ১ থেকে দৃশ্য ১০
দৃশ্য-২।
দিন। শিরিনের মামার ঘর। ইনডোর। শিরিন, মামী, সাকিব।
চমকে জেগে ওঠে শিরিন। তার মুখে সকালের রোদ। সাধাসিধে পোশাক। মামার বাড়িতে ঘুমাচ্ছিল। ঘুম ভাঙতেই চোখ গেল দেয়ালে ঝোলানো একটা মডেলের ছবির দিকে। ওদিকে তাকিয়ে হতাশার ছাপ পড়ে শিরিনের মুখে।
মামী: শিরিন! শিরিন! সকাল ১০টা বাজে!
শিরিন: উঠছি মামী।
মামী: ঠিকমতো ক্লাস না করলে তো একটা চাকরি করলেও পারো।
শিরিন বিরক্ত হলো। নিজেই গজ গজ করে বলতে লাগলো: চাকরি তো আমার জন্য সাজিয়ে রেখেছে। গেলেই প্লেটে তুলে দেবে!
মামী: সাকিবকে একটু অংকটা দেখিয়ে দিও।
শিরিনের মামাতো ভাই সাকিব। ক্লাস ফাইভে পড়ে। সে কম্পিউটারে খেলছে।
শিরিন: পারবো না আমার কাজ আছে!
মামী: কী কাজ! হ্যাঁ কী কাজ শুনি! ভাতের মাড়টাও তো গালতে শেখোনি। সারাদিন শুধু জামাকাপড় আর কসমেটিকস। টাকার শ্রাদ্ধ।
শিরিন: ওটার আমারই টাকা। বাবা রেখে গেছে।
মামী: তা আমি কি আর বলছি যে আমার টাকা! নিজের টাকারই বা মায়া করো না কেন!
শিরিন: মায়া করছি বলেই খরচ করছি। আর একবার আমার স্বপ্নটা পূরণ হতে দাও। তারপর আর টাকা নিয়ে ভাবনা থাকবে না মামী।
মামী: এই এক কথা তো প্রথম দিন থেকেই শুনছি। এখন পর্যন্ত তো একটা নাটকেও ডাক পেলে না, সিনেমা করবে কোন জীবনে?
শিরিন তৈরি হচ্ছে। সাজগোজ করছে।
শিরিন: (স্বগোক্তি) সিনেমা করবো কে বললো, আমি হবো মডেল। সুপারমডেল।
কমদামি ড্রেসিং টেবিলের আয়নায় নিজেকে ঘুরিয়ে ফিরিয়ে দেখছে। পোজ দেওয়ার চেষ্টা করলো মডেলদের মতো। নিজে আবার হেসে ফেললো। ড্রয়ার থেকে পার্স বের করলো।
মামী: কোথায় যাচ্ছ এত সেজেগুজে? বয়ফ্রেন্ডকে বলো না একটা চাকরি যোগাড় করে দিতে। তোমার মামা তো আর পারছে না। সরকারি ব্যাংকের চাকরিতে আর কত চালাবে।
শিরিন: বয়ফ্রেন্ড কোথায় পেলে! আমি যাচ্ছি ছবি তুলতে।
মামী: তা এত সাজগোজের দরকারটা কী! রূপ তো এমনিতেই বেয়ে বেয়ে পড়ছে!
শিরিন বিরক্ত হলো। মামীও কপাল কুঁচকে চলে গেলো।
শিরিন পার্স নিয়ে বের হয়ে গেল।
আমি তুমি সে নাটকের সব পর্ব (চিত্রনাট্য)
ami tumi se natok full story
প্রথম খণ্ড দৃশ্য ১ থেকে দৃশ্য ১০
দৃশ্য-৩
ইনডোর ও আউটডোর। দিন। শিরিন ও ফটোগ্রাফার। স্টুডিও।
রাস্তায় বড় ব্যানার– মডেল হতে চান? তাহলে আজই ছবি তুলুন!
শিরিন ভেতরে ঢুকলো।
ফটোগ্রাফার: আসুন ম্যাডাম। বলুন কী করতে পারি।
শিরিনকে আগাগোড়া একবার দেখলো ফটোগ্রাফার।
শিরিন: আমি আপনাদের প্যাকেজ অফার দেখে এসেছি।
ফটোগ্রাফার: আপনি কি ড্রেস নিয়ে এসেছেন?
শিরিন: না, এতেই চলবে।
ফটোগ্রাফার: একটা ড্রেসে তো ভেরিয়েশন আসবে না। অসুবিধা নেই আমাদের কালেকশনে আছে কিছু। আপনি চাইলে চেঞ্জ করে নিতে পারবেন।
শিরিন: ইয়ে আচ্ছা ঠিকাছে। এখন না। পরে আবার যখন তুলবো তখন।
ফটোগ্রাফার: অ্যাডভান্স করতে হবে প্লিজ। টোটাল ২ হাজার টাকা।
শিরিন টাকা বের করতে গিয়ে দেখবে এক হাজার টাকা নেই। তন্নতন্ন করে খুঁজবে। তার মনে পড়বে গতরাতে তার কিশোর মামাতো ভাই সাকিব তার কাছে ১ হাজার টাকা চেয়েছিল।
সাকিব: শিরিন আপু এক হাজার দাও। আমি পরে দিয়ে দেবো।
শিরিন: কী করবি এত টাকা দিয়ে।
সাকিব: পিকনিকে যাচ্ছে সবাই।
শিরিন: তো মামাকে বল।
সাকিব: বাবা দেবে না।
শিরিন: আমার কাছে নেই। যা এখন বিরক্ত করিস না।
শিরিন বিব্রত। ফটোগ্রাফারের চোখ শিরিনের শরীরের দিকে। শিরিন কী করবে ভেবে পাচ্ছে না।
শিরিন: ইয়ে মানে টাকা তো পুরোটাই নেই.. মানে ছিল.. মানে আমার মামাতো ভাই..।.
ফটোগ্রাফার: কোনও সমস্যা নেই আপু, আপনি আগে ছবি তুলে নিন। পরে ডেলিভারি নেওয়ার সময় না হয় পেমেন্টটা করে দেবেন। আর তাছাড়া আমাদের কিছু বিকল্প ব্যবস্থাও আছে।
ফটোগ্রাফার কিছুটা লোলুপ হাসি দেয়।
শিরিন হাসলেও সেটা দুশ্চিন্তার হাসি।
শিরিন: (মনে মনে) বাকিটা যে কিভাবে যোগাড় করবো।
ফটোগ্রাফার : আসুন আসুন।
ফটোগ্রাফার বিভিন্নভাবে শিরিনকে পোজ দিতে বলবে। শিরিন পোজ দিতে পারবে না। ফটোগ্রাফার তাকে দেখিয়ে দেবে। আর তা করতে গিয়ে সে শিরিনের শরীর ছোঁয়ার চেষ্টা করবে। শিরিন ধীরে ধীরে বিব্রত হতে শুরু করবে। একপর্যায়ে সহ্যের সীমা অতিক্রম করবে শিরিন।
শিরিন: প্লিজ গায়ে হাত দেবেন না।
ফটোগ্রাফার: আরে আজব! আমি তো আপনাকে পোজ দেখাচ্ছি। এসব না দেখালে মডেল হবেন কী করে। আর তা ছাড়া মডেল হতে এসেছেন, একটু আধটু তো..।
শিরিন: কী একটু আধটু কী! কী বলছেন যাতা!
ফটোগ্রাফার: যাতা বলছি না আপু! যা সত্যি তা-ই বলছি। যদি ভালো ছবি ওঠাতে চান তো আমাকে দেখিয়ে দিতে দিন। তা না হলে ছবি খারাপ হলে কিন্তু আমাকে দোষ দেবেন না।
শিরিন: আপনি ছবি তুলুন, আমি আমার মতো থাকবো।
ফটোগ্রাফার: আচ্ছা ঠিকাছে বাদ দিন। আপনি যান, ছবি তোলা লাগবে না। টাকাটাও নিয়ে যান।
শিরিন রাগ করে টাকা নিয়ে বের হয়ে যাবে। স্টুডিওর বাইরে গিয়ে ভাবনায় পড়ে যাবে। টাকাটাকে দলা করে পার্সে ঢোকাবে একবার। আবার বের করে ভাঁজ ছাড়াবে। এরপর পেছন ফিরে স্টুডিওর দিকে তাকাবে। ঘুরে আবার ভেতরে ঢুকবে।
দৃশ্য-৪।
আউটডোর। ভার্সিটি ক্যাম্পাস। নাভিদ, তার দুই বন্ধু ও জেরিন।
নাভিদ তার দুই বন্ধুর সঙ্গে আড্ডা দিচ্ছে।
নাভিদ: আয়েশ করে আলসেমীতে ৫টা বছর পর…ভাললাগে না আর।
বন্ধু-১: ৫টা না ৬টা বছর।
বন্ধু-২: একটা কোম্পানি খুলে বস।
নাভিদ: হুম.. সেটাই ভাবছি। নামও ঠিক করে রেখেছি.. নাম হবে টো… টো। টি ও টি ও। টোটো। তবে ম্যানেজার হবো না। ওই পোস্টে তোদের চাকরি দেব।
[জেরিন আসছে। নাভিদকে দেখলো। চোখে একটু রাগ রাগ ভাব]
বন্ধু-১: হুম.. টোটো কোম্পানির সি ই ও কিন্তু এদিকেই আসছেরে।
বন্ধু-২: আরে না রে.. পার্টনার পার্টনার! অংশিদারিত্ব চুক্তি করতে আসছে।
নাভিদ: ধুর.. অইরকম কিছু না।
জেরিন: নাভিদ, তোমার ফোনটা দাও তো।
নাভিদ ফোন বের করে দেবে। জেরিন ওটা হাতে নিয়ে ছুড়ে ফেলে দিলো একপাশে। নাভিদ হতভম্ব। কিছুটা অপরাধীর মতো করে তাকিয়ে আছে।
জেরিন: একশবার ফোন দিলেও যদি না ধরো, তাহলে ওই ফোন রেখেতো লাভ নেই তাই না।
(বন্ধুরা ধীরে ধীরে কেটে পড়বে)
নাভিদ: ইয়ে, ফোন সাইলেন্ট করা ছিল। (বন্ধুদের) অ্যাই তোরা আবার কই যাচ্ছিস!
বন্ধু-১:
জেরিন: তোমাকেই সাইলেন্ট করে দিবো! চলো উঠো এখন। সুপারশপে যেতে হবে।
নাভিদ: ওদিকে আবার কেন?
জেরিন: আন্টির কিছু জিনিস কিনতে হবে।
নাভিদ: ঠিকাছে চলো, তার আগে খেতে হবে। ভীষণ খিদে পেয়েছে।
গাড়িতে নাভিদ জেরিন। নাভিদ ড্রাইভ করছে।
জেরিন: তো.. কিছু ভাবলে?
নাভিদ: হুম… ভাবলাম।
জেরিন: কী ভাবতে বলেছি বলতো!
নাভিদ: এই তো স্কলারশিপ, হয়তো আমেরিকা না হয় ইউকে, এরপর জব ইত্যাদি ইত্যাদি।
জেরিন: তোর মুণ্ডু!
নাভিদ: ভাবাভাবির আর আছেটা কী!
জেরিন: ভাবলেই আছে। অতীত আছে বর্তমান আছে ভবিষ্যত তো ভাবনাতেই থাকে, নাকি!
নাভিদ: মারফতি কথা ছেড়ে আসল কথাটা বলো।
জেরিন: আর তো এক সেমিস্টার। এরপর তো বিয়ে টিয়ের আলাপ শুরু হয়ে যাবে।
নাভিদ: হুম.. পছন্দের কেউ থাকলে বলে ফেলো, দেখি ঘটকালিটা করতে পারি কিনা। আচ্ছা! বাই দ্য ওয়ে! একটা অনলাইন ঘটকালির বিজনেস করলে কেমন হয়।
জেরিন: মন্দ হয় না। তাহলে তোমার জন্য পাত্রী খুঁজতে অ্যাটলিস্ট পয়সা খরচ করতে হবে না।
নাভিদ: একটা কিছু তো করা লাগবে, টাকাও আসলো বিয়েটাও হয়ে গেলো, ভাল না?
জেরিন: হুম হুম। শেষে দেখা যাবে ওই দায়িত্বটাও আমার ঘাড়ে পড়েছে। এমনিতে তো তোমার স্যান্ডো গেঞ্জিটাও আমাকে কিনে দিতে হয়।
নাভিদ: নো প্রবলেম পরে আমার বউয়ের কাপড়চোপড়টাও.. হেহেহে।
জেরিন: ইয়াক! নো ওয়ে!
নাভিদ: দেখিস তোকেই কিনতে হবে!
জেরিন: অ্যাই! তুই তোকারি চলবে না। শুনতে ভালো লাগে না।
নাভিদ: তোকে আপনি করে বলবো তাহলে এসব তুমি তুমি ভালো লাগে না। (জেরিনের দিকে তাকিয়ে) তুই তুই তুই!
জেরিন: সামনে দেখো! গাড়ি!
নাভিদ দ্রুত সাইড করতে গিয়ে রাস্তার বাইরে চলে গেলো। ছোটখাট অ্যাকসিডেন্ট ঘটলো।
আমি তুমি সে নাটকের সব পর্ব (চিত্রনাট্য)
ami tumi se natok full story
প্রথম খণ্ড দৃশ্য ১ থেকে দৃশ্য ১০
দৃশ্য-৫
দিন। ইনডোর। নাভিদের বাসা। নাভিদের মা ও পূর্ণতা।
নাভিদের বাসা। কলিং বেল বাজলো। দরজা খুলে দিলো নাভিদের মা। উনি বেশ সাজগোজ পছন্দ করেন। মজার মানুষ। কথাও বলেন মজা করে। সবাইকে হাসান।
নাভিদের মা: ও তুই! আয়।
ঘরে ঢুকলো নাভিদের খালাতো বোন পূর্ণতা। তার হাতে একটা খাবারের বাকশো।
পূর্ণতা: নাভিদ ভাই কোথায়?
নাভিদের মা: ও কি আর বাসায় থাকে। সারাদিন তো বউমার সঙ্গে.. ইয়ে মানে জেরিনের সঙ্গেই।
পূর্ণতা: খালা! তোমার মাথা খারাপ? ওই মেয়ের সঙ্গে নাভিদ ভাইকে জীবনেও মানাবে না। আর আমার ওকে দেখেই কেমন কেমন লাগে। আর শোনো ওর জন্য কেক বানিয়ে এনেছি। আমার নিজের হাতে।
মা: নারে মেয়েটা বেশ ভালো। মিশতে পারে। আমার সব কাজ তো ওই করে দেয়। আর কেক এনেছিস ভালো কথা, দে- খাই। কার জন্য কে বানিয়েছে এত সবের কী দরকার।
পূর্ণতা: আমার পরীক্ষাটা শেষ হোক, তোমার কী কী কাজ আছে বলো, করে দিবো।
মা: হেহে। তাহলে আগে এক কাপ চা খাওয়া দেখি।
পূর্ণতা চা বানাতে উঠবে। রান্নাঘরে যাওয়ার পথে নাভিদের ঘরের সামনে দাঁড়াবে। তার ঘরে ঢুকে পড়বে। টেবিলে রাখা নাভিদের ছবিটা হাতে নেবে। তার বইপত্র ঘাঁটাঘাঁটি করবে।
নাভিদের মা: কই, চা বসিয়েছিস?
পূর্ণতা: যাচ্ছি খালা।
পূর্ণতা নাভিদের ঘর থেকে বেরিয়ে যাবে, একটু পর আবার দৌড়ে এসে ঢুকবে। টেবিলের ওপর থেকে ফ্রেমে বাঁধাই করা নাভিদের ছবিটা হাতে নিয়ে চুমু খাবে। দ্রুত রেখে আবার চলে যাবে।
নাভিদের মা ফোন ধরবে। তার মুখ বিমর্ষ হয়ে যাবে। তড়িঘড়ি করে বেরিয়ে গেলেন।
পূর্ণতা চায়ের কাপ নিয়ে এসে দেখলো কেউ নেই।
দৃশ্য-৬।
ইনডোর। হাসপাতাল। নাভিদ, জেরিন, নাভিদের মা, বন্ধু, পূর্ণতা, ডাক্তার, জেরিনের বাবা ও তার ছোট বোন ও জেরিনের বড় ফুপু। এই এক দৃশ্যে মোটামুটি সব চরিত্রকে একসঙ্গে দেখা যাবে।
নাভিদ হাসপাতালের বেডে শোয়া। তার পাশে জেরিন বসে আছে। তার মাথায় ছোট করে ব্যান্ডেজ। ও আহত হয়নি। নাভিদের হাত ভেঙেছে।
নাভিদের বন্ধুরাও আছে। নাভিদের পাশে বসে তার মা চোখ মুছছে।
জেরিন ডাক্তারকে আসতে দেখে উঠে এগিয়ে গেলো।
ডাক্তার: আজকেই রিলিজ দিয়ে দেবো। তেমন কোনও সমস্যা হয়নি। ফ্র্যাকচার সারতে দশ পনের দিন লাগবে। এরপর আবার এক্সরে করতে নিয়ে আসবেন।
জেরিনের বাবা, বড় ফুপু আর ছোট বোন ঢুকলো।
বাবা: মা তুই ঠিক আছিস।
জেরিন: হ্যাঁ বাবা কিছু হয়নি। টেনশন করবে না একদম।
বাবা: নাভিদ?
জেরিন: হাতে ফ্র্যাকচার হয়েছে। রেস্ট নিলে সেরে যাবে। (নাভিদের মাকে) আর ওকে এখন বাসায় যেতে পারি।
জেরিনের বড় ফুপু: ইশ, তোর কিছু হয়নিতো? তুই আমাকে বল। সত্যি করে বল।
জেরিন: আমার কিছু হয়নি ফুপু। যা হওয়ার এই ছেলেটার হয়েছে।
(জেরিনের ফুপু নাভিদকে খুব একটা পছন্দ করেন না।)
ফুপু: ও। হুম। তা তো দেখতে পাচ্ছি। কিন্তু তোকে নিয়ে আমার খুব টেনশনরে মা। তোর মা মারা যাওয়ার..।
জেরিন: ওহ ফুপু। আবার সেই…। তোমাকে না বলেছি এভাবে বলবে না। আমার মন খারাপ হয়ে যায়।
নাভিদ: ফুপু আপনার ছেলের না আসার কথা, উনি কি এসেছেন?
ফুপু: না, ছেলেটাকে কত করে বলছি আসতে। (জেরিনের দিকে তাকিয়ে) আসলেই এবার ধরে বিয়ে দিয়ে দেব।
জেরিন: ও আরশাদ ভাইয়ার কথা বলছো? দেখো গিয়ে মেম বিয়ে করে নিয়ে আসে কিনা।
ফুপু: ও কাজ করলে তো একদম মেরেই ফেলবো। আমার বাপু ওসব বিদেশি মেম টেম ভালো লাগে না।
নাভিদ: আমি একটু উঠবো। মা একটু ধরো তো?
নাভিদের মা: জেরিনকে বল না… জেরিন মা, একটু ধরো তো। আমি তো মোটাসোটা মানুষ। ফেলে টেলে দিতে পারি।
জেরিন এসে নাভিদকে ধরবে। ধীরে ধীরে ওঠাচ্ছে।
কাট টু
পূর্ণতা রিকশা থেকে নেমে দৌড়ে হাসপাতালের গেট দিয়ে ঢুকলো।
কাট টু
জেরিন নাভিদকে ধরে ধরে তুলছে। দরজার কাছে দাঁড়িয়ে সেটা দেখে থমকে গেল পূর্ণতা। ঢুকবে কি ঢুকবে না তা নিয়ে ইতস্তত করছে। শেষে ঢুকেই গেল। একছুটে এগিয়ে গেল নাভিদের কাছে। জেরিনের মতো সেও নাভিদকে ধরে নামানোর চেষ্টা শুরু করলো। একপাশে জেরিন অন্যপাশে পূর্ণতা। সবাই পূর্ণতার দিকে বাঁকা চোখে তাকাতে শুরু করলো। জেরিন তাকিয়ে আছে পূর্ণতার হাতে দিকে, যে হাত দিয়ে সে নাভিদকে ধরে রেখেছে। নাভিদও অবচেতন মনে পূর্ণতাকে ধরে ফেললো। সেটা দেখে রাগ চড়ে গেল জেরিনের। সে নাভিদকে ছেড়ে দিল।
দৃশ্য-৭
ইনডোর। দিন। শিরিনের রুম। শিরিন ও কল্পনায় ফটোগ্রাফার।
শিরিন একদৃষ্টে ফ্যানের দিকে তাকিয়ে আছে। শূন্য দৃষ্টি, এলোমেলো চুল, পরনে সাধারণ সেলোয়ার। ঠোঁটের কোণে লিপস্টিক কিছুটা লেপ্টে আছে। ফোন বাজলো। ডিসপ্লেতে লেখা মা। ফোন এক পাশে রেখে দিলো। চোখ বন্ধ করলো।
শিরিনের কল্পনা: ফটোগ্রাফার হাসতে হাসতে তার দিকে এগিয়ে আসছে। তার ঠিক মুখের ওপর ক্যামেরার লেন্স রেখে ছবি তুলছে।
শিরিন ধপ করে চোখ খোলে। তার ঠোঁট কাঁপে।
কল্পনা: (ফিশ আই লেন্স ব্যবহার করে শিরিনের পারসপেকটিভ থেকে দেখানো যেতে পারে) ফটোগ্রাফার তার দিকে হাত বাড়াচ্ছে। তার মুখ সরিয়ে দিচ্ছে। ছবি তুলছে। শিরিন বাধা দিচ্ছে না আগের মতো।
ফটোগ্রাফার শিরিনকে বিভিন্নভাবে ছোঁয়ার চেষ্টা করে। এড়িয়ে যাওয়ার চেষ্টা করে শিরিন। শেষে ফটোগ্রাফার তাকে জড়িয়ে ধরে। শিরিন বাধা দিতে গিয়েও কেমন যেন আনমনা হয়ে যায়।
শিরিন বিছানা থেকে উঠে আয়নায় নিজেকে দেখে। বিমর্ষ হয়। আচমকা শিরিন আবার আত্মবিশ্বাসী হয়ে ওঠে। ওয়ারড্রোব থেকে প্যাকেট করা একটা নতুন কাপড় বের করে। পোশাক পাল্টে আয়নার সামনে দাঁড়ায়। এবার পরনে তার পশ্চিমা ধাঁচের পোশাক। আয়নার সামনে সে পোজ দেওয়ার চেষ্টা করে কিন্তু চেহারার বিষণ্ন ভাব কাটে না। আড়াল থেকে সব দেখতে থাকে মামী।
আমি তুমি সে নাটকের সব পর্ব (চিত্রনাট্য)
ami tumi se natok full story
প্রথম খণ্ড দৃশ্য ১ থেকে দৃশ্য ১০
দৃশ্য-৮।
নাভিদের রুম। নাভিদ, জেরিন ও পূর্ণতা। দিন।
নাভিদ বিছানায় শুয়ে আছে। তার হাত বুকের কাছে বাঁধা। তাকে চামচে করে স্যুপ খাওয়াচ্ছে জেরিন।
নাভিদ: আর না। পেট ভরে গেছে।
জেরিন: পুরোটা শেষ করতে হবে।
নাভিদ: আমাকে দিয়ে প্র্যাকটিস করছো নাকি।
জেরিন: কিসের প্র্যাকটিস!
নাভিদ: না মানে কদিন পর বিয়ে করবি, স্বামীকে খাওয়াতে হবে, এরপর বাচ্চাকে খাওয়াতে হবে। এখন আমাকে দিয়ে।
জেরিন: তাহলে না খেলে যে ধরে পেটাবো, সেই প্র্যাকটিসটাও করে ফেলবো নাকি?
নাভিদ: উফ কবে যে ফাইনালটা শেষ হবে।
জেরিন: বিয়ে করার এত তাড়া কিসের শুনি? পাত্রী কি পালিয়ে যাচ্ছে?
নাভিদ: আরে ধুর বিয়ে কে করে! আমি বলছি আমাদের বিজনেসের কথা। কিছু ভাবলে?
জেরিন: হুম। তা তো হবেই। সময় হোক তারপর ভাববো।
নাভিদ: একটা নাম তো ঠিক করতে হয়।
(পূর্ণতা ঢুকলো। তার হাতে নুডলসের বাকসো)
নাভিদ: কীরে তোর হাতে আবার কী?
পূর্ণতা: নুডলস বানিয়েছি তোমার জন্য। কী সব খাচ্ছো না খাচ্ছো।
জেরিন: আগে এটা শেষ করো পরে নুডলস খেতে পারবে।
পূর্ণতা: কিন্তু নুডলস তো ঠাণ্ডা হয়ে যাবে। আর ঠাণ্ডা হলে ভালো লাগবে না।
নাভিদ: আরে রাখ তো তোরা। আমার পেটটাকে বেলুন পেয়েছিস নাকি। আমি আর কিচ্ছু খাবো না। কিচ্ছু না। আমি একটু উঠবো।
পূর্ণতা: এত কষ্ট করে বানিয়ে আনলাম।
নাভিদ: রেখে দে পরে খাবো।
জেরিন: কোথায় যাবে আবার।
পূর্ণতা: এক চামচ খেয়ে তো দেখো।
নাভিদ: উফফ.. তুই কথা বুঝিস না কেন!
জেরিন: থাক না.. খেতে যখন চাচ্ছে না।
পূর্ণতা: হালুয়া তো ঠিকই গিলতে পেরেছে!
পূর্ণতা রাগ দেখিয়ে পাশের টেবিলে নুডলসের প্লেট রেখে চলে যাবে। তার দিকে বিরক্ত চোখে তাকালো জেরিন। নাভিদ হাসলো। পূর্ণতা এসে আবার নুডলসের বাটিটা নিয়ে ঝড়ের গতিতে বেরিয়ে গেল। জেরিন সেটা দেখে তাচ্ছিল্য করলো।
পূর্ণতা নুডলসের বাটিটা নিয়ে কিচেনে গেল। ময়লার ঝুড়িতে নুডলসগুলো ফেলে দিলো। রাতে ফুঁসছে সে। পেছনে নাভিদের মা এসে দাঁড়ালো। তিনি বিষয়টা ধরতে পারলেন না। তাকে দেখে পূর্ণতা ইতস্তত করছে।
নাভিদের মা: কীরে এখানে এমন ফোঁস ফোঁস করছিস কেন। আমি তো ভাবলাম আবার গ্যাসের চুলা লিক করলো কিনা।
পূর্ণতা: (রাগ সামলাতে পারছে না) তোমার ছেলের মাথা তো খেয়েছে! ওই হতচ্ছাড়িকে ঢুকতে দাও কেন বাসায়! আমি নিশ্চিত ওই মেয়ের জন্য নাভিদ ভাইয়ার একসিডেন্ট হয়েছে। গাড়ি চালানোর সময় নিশ্চয়ই উনি জোর করে সুজির হালুয়া খাওয়াচ্ছিলেন।
নাভিদের মা চিন্তিত হওয়ার ভাণ করলেন।
নাভিদের মা: হতে পারে! ঠিকাছে এখন থেকে গাড়ি চালানোর সময় হালুয়া খাওয়াতে মানা করবো, তারচেয়ে বরং ডিমের পুডিং খাওয়াতে পারে। মুখে দেবে আর পুত করে গিলে ফেলবে। পুত পুত পুত।
পূর্ণতা: খালা! আমি গেলাম! আর জীবনেও আসবো না।
রাগ করে আবার চলে যাবে পূর্ণতা।
নাভিদের মা: (মনে মনে) আসবো না বললেই কী না বললেই কী। কাল তো আবার হাজির হবি। তবে কাল আবার এই নুডলস আনিস না। অন্য কিছু আনিস।
দৃশ্য-৯। শিরিন, শিরিনের মামা ও মামী।
ইনডোর। শিরিনের রুম। দিন। শিরিন ফোনে কথা বলবে। অপরপ্রান্তে মডেলিং এজেন্সির রিসিপশনিস্ট।
শিরিন তার ছবিগুলো দেখছে। ছবি দেখতে দেখতে হুট করে কল্পনায় ভেসে আসে ফটোগ্রাফারের লোলুপ দৃষ্টি। চমকে ওঠে শিরিন। ইন্টারনেট ব্রাউজ করতে থাকে। একটি ফেসবুক পেইজ পায়। তাতে মডেল হান্টের বিজ্ঞাপন। শিরিন তাদের নম্বর টুকে নেয়। কল করে।
অপর: হ্যালো, নিউলুক মডেলিং এজেন্সি থেকে বলছি।
শিরিন: জ্বি, হ্যালো, আমার নাম শিরিন। আপনাদের সঙ্গে আমার কথা হয়েছে। আমি ফটোশ্যুট করেছি। আপনাদের ঠিকানাটা বলুন, আমি কুরিয়ার করে দেই।
অপর: না, ম্যাডাম। এভাবে তো হবে না। আপনাকে নিয়ে আসতে হবে। সরাসরি অডিশন দিতে হবে।
শিরিন: জ্বি। আচ্ছা। কবে আসবো।
অপর: আপনি চাইলে আজকেই আসতে পারেন।
শিরিন: সঙ্গে কী আনতে হবে।
অপর: আমাদের ওয়েবসাইটে ইনস্ট্রাকশন দেওয়া আছে। সেখানে একটা লিস্ট পাবেন। আর এমনিতে চাইলে আপনার নিজের পছন্দের জামাগুলো নিয়ে আসবেন। তবে খুব কড়া মেকাপ দেওয়া যাবে না।
শিরিন: জ্বি আচ্ছা। আপনাদের কোনও রেজিস্ট্রেশন ফি বা এমন কিছু।
অপর: না না। (হাসি) এমন কিছু নেই। আপনি আসলেই হবে।
শিরিন: অডিশনটা কীসের হবে জানতে পারি? মানে মডেলিংয়ে আবার অডিশন..।
অপর: দেখুন, মডেলিং কিন্তু অত সহজ নয়। শুরুতে এমন মনে হতেই পারে। মাঝে মাঝে দেখা যায়, অভিনয়ের চেয়েও অনেক কঠিন কাজ এটা। অনেক বেশি ডেডিকেশন আর আগ্রহ দরকার হয়। সবাই তো আর মডেল হয় না।
শিরিন: তা ঠিক।
অপর: আপনার মনে আত্মবিশ্বাসের ঘাটতি থাকলে আপনি আবারও চিন্তা করে দেখতে পারেন।
শিরিন খানিকটা চিন্তিত ভাবে ফোনটা রাখলো। এরপর ওয়ারড্রোব খুলে কাপড় গোছাতে লাগলো।
শিরিনের মামী ও মামা কথা বলছে।
মামী: ওর ব্যাপার স্যাপারগুলো খেয়াল করেছো?
মামা: হুমমম।
মামী: ইদানীং খুব সাজগোজ করছে। কিন্তু কোনও ছেলের সঙ্গে তো ফোনে কথা বলতে শুনি না।
মামা: (অন্যমনস্ক, পত্রিকা পড়ছেন) তাহলে?
মামী: তাহলে কী, সেটাই তো বুঝতে পারছি না।
মামা: অ্যাঁ.. কী হয়েছে ওর।
মামী: ধুৎ। আমি বলি কী…
মামা: তা তো বুঝলাম। ও সাজগোজ করে। ওর বাবা ওর জন্য টাকা রেখে গেছে ব্যাংকে। আপাও স্কুলে পড়ায়। ওর তো টাকা আছে। ও দিয়ে ও সাজগোজ করবে না কী করবে সেটা ও জানে।
মামী: অ্যাঁ.. খুব আমার টাকার মালিক। ও দিয়ে কী কচুটা হয়। থাকা খাওয়া সব হিসেব করলে তো.. হুহ।
মামা: আমি কী? আমি ওর মামা না? আমার কি কোনও দায় নেই।
মামী: হয়েছে হয়েছে। আবার সেই কাসুন্দি। আমার হাতে পাত্র এসেছে ভালো। অস্ট্রেলিয়া থাকে, ডাক্তার।
মামা: এখন আর এসব প্রস্তাব আসার যুগ নেই। ও-ই ঠিক করে এনে দিক, কাকে বিয়ে করবে না করবে।
মামী: কিন্তু আমার..। না থাক।
মামা: (পত্রিকা পড়া ছেড়ে) বল, কী বলবে ঝেড়ে কাশো।
মামী: না মানে.. ওর আচার আচরণ। সারাক্ষণ আয়নার সামনে রং ঢং করে। সাকিবও বড় হচ্ছে। ওর সামনে এসব ছোটখাট জামা কাপড়…।
মামা: আহা! বাদ দাও তো। আন্দাজে যত্তসব চিন্তা।
মামী: দেখো.. ছেলে আমার সংসারও আমার। চিন্তা আমি করতেই পারি।
হুট করে শিরিন ঢুকে পড়বে। তার পরনে স্লিভলেস কামিজ, ওড়না আর জিন্সের প্যান্ট। হাতে কাপড়ের ব্যাগ।
শিরিন: মামা! দেখো তো!
মামা: কীরে! কী।
শিরিন: না.. আমার এই পোশাকে কোনও খারাপ কিছু আছে কিনা দেখতে বললাম।
মামা: দেখ.. বড়দের সব কথা শুনেই এভাবে রাগ দেখানো ঠিক না।
মামী চোখ গরম করে মামার দিকে তাকাবে।
শিরিন: আমাকে নিয়ে যদি এত টেনশন করার কিছু নেই। তোমাদের ভালো না লাগলে বলে দাও, আমি চলে যাই।
মামী: তা কোথায় যাবে শুনি।
শিরিন: সেটা আমার ভাবনা।
মামা: শিরিন! যা তুই কোথায় যাচ্ছিলি সেখানে যা। উল্টো পাল্টা কথা বললে মারবো থাপ্পড়। আর তোর ব্যাগে এত কী?
মামী: হুহ! আহ্লাদ।
শিরিন: আমি আগেও বলেছি এখনও বলছি। আমি মডেল হবো। আমি সুপারমডেল হবো। এটাই আমার স্বপ্ন। এর মানে এই নয় যে আমি উচ্ছন্নে গেছি বা যাব। আর কাপড়ের কথা বললে তো? কাপড়ের কোনও দোষ নেই মামী। দোষ হচ্ছে মানুষের চোখের।
মামী: ওরে আমার লেকচাররে!
মামা: ঠিকাছে তোরা ঝগড়া করো। আমিই চললাম।
মামী: যাও যাও। সবাই চলে যাও। আমি একা একা থাকি। দোষ তো আমার চোখের। তোমার ভাগনিই তো বলে দিল।
শিরিন বেরিয়ে গেল। রাস্তা দিয়ে হাঁটছে। আশপাশের সবাই তার দিকে বাঁকা চোখে তাকাচ্ছে। সে সেটা টের পাচ্ছে, কিন্তু পাত্তা দিচ্ছে না।
আমি তুমি সে নাটকের সব পর্ব (চিত্রনাট্য)
ami tumi se natok full story
প্রথম খণ্ড দৃশ্য ১ থেকে দৃশ্য ১০
দৃশ্য-১০।
দিন। ইনডোর। নাভিদ জেরিন, নাভিদের মা, পূর্ণতা।
নাভিদ বারান্দায় কফির মগ হাতে। জেরিন আসলো।
জেরিন: মেয়েটা তোমাকে খুব লাইক করে। ফেসবুকের লাইক না, সত্যিকারের লাইক।
নাভিদ: আরে মাথা খারাপ ওর।
জেরিন: তা তো দেখতেই পাচ্ছি।
জেরিন: এক কাজ করো। মেয়েটাকে বিয়ে করে ফেলো। আজীবন নুডলস খেতে পারবে (হেসে ফেললো)
নাভিদ: ও কিন্তু ভালো কেকও বানাতে পারে।
জেরিন: উলে ব্বাবা। আঘাত পেয়েছো নাকি! নাহ.. এমন মেয়েই তোমার দরকার। একেবারে পুতুপুতু। দেখলে না কেমন পানি টলটল করছিল চোখে। আহারে।
নাভিদ: তুমিই দেখি ওরে নিয়ে বেশি বেশি ভেবে ফেলছো। ঘটনা কী।
জেরিন: আমি! হুহ। জেরিনকে এখনও চিনলে না তোমরা।
নাভিদ: অত চিনে কাজ নেই।
জেরিন: (একটু মজা করে বলবে) একটা বিষয় আমার খুব অবাক লাগে। তোমার মতো একটা ছেলে, হ্যান্ড.. সাম ছেলে। তোমার কপালে এখনও গার্লফ্রেন্ড জুটলো না কেন?
নাভিদ: তোমার মতো একটা গাড়ল ফ্রেন্ড যার আছে, তার আর গার্লফ্রেন্ড না থাকলেও চলে। গাড়ল মানে বোঝো তো? গাড়ল গাড়ল.. মানে ভেড়া।
জেরিন: খালা! খালা!
নাভিদ: স্যরি! স্যরি! আমি গেলাম।
নাভিদের মা: কীরে কী হয়েছে।
জেরিন: তোমার ছেলে আমাকে ভেড়া বলেছে।
নাভিদের মা: শোন নাভিদ। বেশি বাড়াবাড়ি ভালো না। আমি কিন্তু অনলাইনে লাঠির অর্ডার দেবো। এরপর ওটা দিয়ে পিটিয়ে বাকি হাতটাও ভাঙবো।
জেরিন: দেরি না করে দিয়ে দাও। বেশি দেরি করলে পরে আবার নুডলস খেয়ে খেয়ে পান্ডার মতো মোটা হয়ে যাবে।
নাভিদের মা: নাহ নুডলস কন্যা চলে গেছে।
কলিং বেল। মা ছুটে গেলেন। পূর্ণতা ব্যাগ হাতে দাঁড়িয়ে। পূর্ণতার মুখে হাসি। তার হাতে বড় ব্যাগ।
পূর্ণতা: খালা আমার ছোট ফুপুর বিয়ে।
মা: তো কি দাওয়াত দিতে এসেছিস?
পূর্ণতা: নাহ! আমি থাকতে এসেছি। আম্মু আর আব্বু বিয়েতে গেছে। আমার তো পরীক্ষা। তাই যেতে পারিনি। আর একা একা থাকতে হবে, তাই চলে এলাম।
নাভিদের মা: হুম হুম বুঝেছি। আয় ভেতরে আয়। নাভিদ আর জেরিন আছে। নুডলস ভেজে দে। আর আমাকে একটু বেশি করে দিবি। তা কদিন জ্বালাতে এসেছিস শুনি?
পূর্ণতা: যতদিন ইচ্ছে হয়। মাকে বলেছি অন্তত দিন দশেক যেন থাকে। এর মাঝে আমার পরীক্ষা শেষ হয়ে যাবে। এরপর নাভিদ ভাইয়ের সঙ্গে ঘুরতে যাব। আর তোমার বাসায় থাকতে গেলে আবার অনুমতি নিতে হবে নাকি। তুমি আমার মা-ই।
নাভিদের মা: আমি তোর মা হলে তো ঝামেলায় পড়ে যাবিরে। নাভিদ তো তখন তোর মায়ের পেটের ভাই হয়ে যাবে।
পূর্ণতা: ওকে ওকে! তুমি আমার খালাম্মা!
নাভিদের: কেন ওকে ভাই বলতে এত আপত্তি কেন।
পূর্ণতা: অ্যা.. এসব ভাই টাইগিরি হবে না আমার সঙ্গে।
পূর্ণতা বারান্দায় আসতেই জেরিনের মুখোমুখি। জেরিন চোখ কুঁচকে তাকাবে।
নাভিদ: কীরে আবার এলি যে।
পূর্ণতা: আমি থাকবো! বাসায় কেউ নেই। আম্মু আব্বু বেড়াতে গেছে। আমি একা! তাই থাকতে চলে এসেছি।
জেরিন নাভিদের দিকে তাকাবে। তারপর চোখ সরিয়ে নেবে। নাভিদের মায়ের দিকে তাকিয়ে বিদায় নিতে গিয়ে একটা কিছু বলতে গিয়েও পারবে না। মন খানিকটা খারাপ করে চলে যাবে।