class="post-template-default single single-post postid-20375 single-format-standard wp-custom-logo group-blog vl-boxed aa-prefix-matin-">
Shadow

দেশের প্রথম সাদা বাঘ চট্টগ্রাম চিড়িয়াখানায়

সাদা বাঘ২০১৬ সালের ডিসেম্বরে দক্ষিণ আফ্রিকা থেকে ৩৩ লাখ টাকা দিয়ে দুটি বেঙ্গল টাইগার কিনে আনা হয় চট্টগ্রাম চিড়িয়াখানায়। বাঘ দুটির নাম রাখা হয় ‘রাজ’ ও ‘পরী’।

সেই দম্পতির ঘরেই গত ১৯ জুলাই জন্ম নেয় নতুন তিনটি সাদা বাঘশাবক। এর মধ্যে অবশ্য একটি বাঘশাবক মারা গেছে। বেঁচে থাকা দুটি বাঘ শাবক সুস্থ আছে এবং ধীরে ধীরে বড় হচ্ছে। সাদ বাঘশাবকটির কান, নাক ও লেজ সবকিছুই সাদা রঙের। ১৯ জুলাই জন্ম নিলেও এই খবর প্রচার হয় দেড়মাস পর। বাঘ দুটি ঝামেলাবিহীনভাবে বেড়ে ওঠার জন্যই এই খবর চেপে রাখে কর্তৃপক্ষ। বিরল প্রজাতির এই সাদা বাঘ দেখতেই চট্টগ্রাম চিড়িয়াখানায় এখন উপচেপড়া ভিড় দেখা যাচ্ছে।

 

কী খাচ্ছে সাদা বাঘ দুটি

জন্মের পর থেকেই সাদা বাঘশাবক দুটি নিয়মিত মা বাঘিনীর দুধ পান করছে। আগামী ছয়মাস পর্যন্ত এই শাবক মায়ের দুধ পান করেই বেঁচে থাকবে। অবশ্য গত সপ্তাহ থেকে মাকে দেয়া গরু ও মুরগির মাংস মিশিয়ে দেয়া খাবার একটু একটু করে খাচ্ছে শাবকগুলো। কয়েকমাস পর থেকে ধীরে ধীরে মাংস খেতে অভ্যস্ত করে তোলা হবে সাদা বাঘশাবক দুটিকে। দুধ পান করাতে হচ্ছে বলে বাঘিনীকে। ইতোমধ্যে বেশি খাবারও দেওয়া হচ্ছে।

 

গাজীপুরে বঙ্গবন্ধু সাফারি পার্কেও সাদা বাঘ

গাজীপুর শ্রীপুরে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব সাফারি পার্কে গত ৮ আগস্ট তিনটি বাঘশাবক জন্ম নেয়।

এর মধ্যে একটি সাদা বাঘশাবক বাকি দুটি ধুসর রঙের। দেশে এটি দ্বিতীয় সাদা বাঘশাবক জন্ম নেওয়ার ঘটনা। এর আগে ২০১৭ সালে এই বাঘিনী বা মা বাঘ তিনটি বাঘশাবক জন্ম দেয়, এর কোনোটিই সাদা ডোরাকাটা বাঘ হয়নি। এই প্রথম একটি সাদা বাঘশাবক জন্ম নিল।

 

৫৩ প্রজাতির ১৮০০ প্রাণী

চট্টগ্রাম চিড়িয়াখানায় মোট ৫৩ প্রজাতির ১৮০০ প্রাণী রয়েছে। এগুলো নিয়মিত দর্শকদের আকৃষ্ট করছে। এসব প্রাণী দেখতে দর্শকের আগে দিতে হতো ৩০ টাকা। কিন্তু গত ফেব্রুয়ারি থেকে প্রবেশমূল্য বাড়িয়ে ৫০ টাকা করা হয়েছে। এর পরও দর্শকদের কমতি নেই চিড়িয়াখানায়। গত ঈদে চিড়িয়াখানায় শুধু একদিনেই দর্শক প্রবেশ করেছে ১৬ হাজার জন।

 

এবার আসছে ক্যাঙ্গারু

দর্শক চাহিদা বাড়াতে চট্টগ্রাম চিড়িয়াখানায় চলতি বছরের মধ্যেই আসছে ৬ প্রজাতির ৩০০টি পাখি। ইউরোপিয়ান এসব পাখি নিশ্চিতভাবেই দর্শক আকর্ষণ অনেক বাড়াবে। এছাড়া চিড়িয়াখানায় যোগ হচ্ছে উট পাখি, ইমু পাখি, ক্যাঙ্গারু, উট ও দুম্বা। ইতোমধ্যে খাঁচা তৈরি হয়েছে বলে জানান চট্টগ্রাম চিড়িয়াখানার ভারপ্রাপ্ত ডেপুটি কিউরেটর ডা. শাহাদাত হোসেন শুভ। তিনি জানান, চট্টগ্রাম চিড়িয়াখানার নিজস্ব তহবিল থেকেই এক কোটি টাকা ব্যয়ে এসব পাখি ও প্রাণী ২০১৮ সালের মধ্যেই আসবে। এর মধ্যে ক্যাঙ্গারু হল্যান্ড থেকে, উটসহ অন্যান্য পাখি স্থানীয়ভাবে সংগ্রহ করা হবে।

 

সাদা বাঘ দ্রুত বড় হয়

এই জাতের বাঘের শরীরের সাদা লোমের কারণ ফিওমেলানিনের অনুপস্থিতি। অন্যান্য রয়েল বেঙ্গল বাঘের লোম সাধারণত কমলা বা বাদামি রঙের হয়ে থাকে। রয়েল বেঙ্গল বাঘের সাথে তুলনা করলে দেখা যায়, সাদা বাঘ তুলনামূলকভাবে দ্রুত বৃদ্ধি পায় এবং তাদের ওজনও হয় বেশি।

জন্মের সময়ও তারা তুলনামূলকভাবে কিছুটা বড় থাকে। ২-৩ বছর বয়সে সাদা বাঘ প্রাপ্তবয়স্ক হয়ে থাকে। সাদা পুরুষ বাঘ সাধারণত ওজনে ২০০ থেকে ২৬০ কেজি এবং দৈর্ঘ্যে ৩ মিটার পর্যন্ত হয়ে থাকে। জেব্রার মতো সাদা বাঘেরও সাদা-কালো দাগগুলো আঙুলের ছাপের মতো অনন্য হয়ে থাকে। একটি বাঘের নকশার সাথে অন্য কোনো বাঘের মিল খুঁজে পাওয়া যায় না। একটা সাদা বাঘ জন্মের জন্য মা ও বাবা উভয় বাঘকেই সাদা রঙের হতে হবে।

১০০০০ বাঘ জন্মের ক্ষেত্রে কেবল একটি বাঘ প্রাকৃতিকভাবে সাদা রঙের হয়ে থাকে।

বর্তমানে বিশ্বে কয়েক শত সাদা বাঘের অস্তিত্বের খবর জানা গেছে, যার মধ্যে প্রায় একশটি রয়েছে ভারতে। তবে সাদা বাঘের সংখ্যা ধীরে ধীরে বাড়ছে।

ভারতের উড়িষ্যা রাজ্যের নন্দনকানন চিড়িয়াখানায় ৩৪টি সাদা বাঘ রয়েছে। এখানে জন্ম হওয়া বেশ কয়েকটি সাদা বাঘ ভারতের অন্যান্য চিড়িয়াখানা এবং বিভিন্ন দেশে পাঠানো হয়েছে।

সাদা রঙের লোমের কারণে এ ধরনের বাঘ বেশ দৃষ্টিনন্দন। সাদা রঙের সাইবেরিয়ান বাঘের অস্তিত্ব বৈজ্ঞানিকভাবে প্রতিষ্ঠিত নয়। যদিও বিভিন্ন সময় সাইবেরিয়া অঞ্চলে সাদা বাঘ দেখার খবর পাওয়া গেছে।

 

বাঘ যে কারণে সাদা হল

অধ্যাপক মনিরুল খান ► বাঘ গবেষক

ক্যামব্রিজ বিশ্ববিদ্যালয়ে সুন্দরবনের বাঘ নিয়ে গবেষণা করেছেন অধ্যাপক মনিরুল খান। তিনি বর্তমানে জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রাণিবিদ্যা বিভাগের অধ্যাপক। তিনি কালের কণ্ঠকে বলেন, ‘দুটি কারণে যেকোনো প্রাণী সাদা রঙের হতে পারে। একটি হচ্ছে শ্বেতী রোগ, অন্যটি জিনগত কারণ। জন্ম নেওয়া সাদা বাঘের ক্ষেত্রে জিনের বৈশিষ্ট্যের প্রভাব ঘটেছে। তবে জিনটা প্রচ্ছন্নভাবে প্রভাব ফেলেছে, প্রকটভাবে নয়।’ তিনি জানান, প্রচ্ছন্নভাবে প্রভাব পড়ার কারণে বাঘের রঙ সাদা হয়েছে। চোখের রঙ সোনালি না হয়ে নীল হয়েছে।

মনিরুল খান বলেন, ‘পৃথিবীতে এই ধরনের সাদা বাঘ জন্ম নেওয়া একটি ব্যতিক্রমী ঘটনা। ১০ হাজারের মধ্যে একটি এই ধরনের হতে পারে।’

অনেকে মনে করছেন, মানুষের শরীরে যেমন মেলানিনের অভাবে শ্বেতী রোগ হয়, তেমনি বাঘেরও হতে পারে। তবে এ ধরনের রোগ হলে বাঘের গায়ে ডোরাকাটা দাগ থাকার কথা নয়। সাদা রং ও ডোরাকাটা দাগ থাকলে বুঝতে হবে এটি জিনগত কারণে হয়েছে।

চট্টগ্রাম চিড়িয়াখানায় থাকা রাজ ও পরী পরিবারে আগামীতেও সাদা বাঘ জন্ম নেওয়ার সম্ভাবনা কতটা-জানতে চাইলে অধ্যাপক মনিরুল খান বলেন, ‘আগামী বাচ্চা সাদা হবে এমনটা বলা যাবে না। তাদের দুজনের জিন পরীক্ষা করলেই বিষয়টি ধারণা করা যাবে।’

 

সাদা বাঘ দেখতে উপচেপড়া ভিড়

ডা. শাহাদাত হোসেন ► ভারপ্রাপ্ত ডেপুটি কিউরেটর, চট্টগ্রাম চিড়িয়াখানা

চট্টগ্রাম চিড়িয়াখানা এখন আগের চেয়ে অনেক উন্নত ব্যবস্থাপনায় চলছে। গত দুই বছর ধরে এই চিড়িয়াখানায় প্রাণীর সংখ্যা যেমন বেড়েছে, তেমনি অবকাঠামো এবং পরিচ্ছন্নতায়ও উন্নতি ঘটেছে। এমনটা দাবি করে চট্টগ্রাম চিড়িয়াখানার ভারপ্রাপ্ত ডেপুটি কিউরেটর ডা. শাহাদাত হোসেন শুভ কালের কণ্ঠকে বলেন, ‘সাধারণ দিনে গড়ে দেড় থেকে দুই হাজার দর্শক চিড়িয়াখানায় আসেন। প্রচণ্ড গরম ও বৃষ্টির মধ্যেই এই পরিমাণ দর্শক আসেন। তবে শুক্রবার দর্শক সংখ্যা বেড়ে সাড়ে ছয় থেকে সাত হাজারে উন্নীত হয়।’

তিনি আরো বলেন, ‘সাদা বাঘ আমরা এখনো দর্শকদের জন্য উম্মুক্ত করিনি। একমাস পর সবার জন্য দেখার সুযোগ দেওয়া হবে। এরপরও গত শুক্রবার দর্শক বেড়ে ১২ হাজারে উন্নীত হয়েছে। অর্থাৎ প্রায় দ্বিগুণ বেড়েছে দর্শক। এদের বেশির ভাগই সাদা বাঘ দেখতে এসেছেন।’

ডা. শাহাদাত জানান, দর্শক আকর্ষণ বাড়ায় চট্টগ্রাম চিড়িয়াখানায় রাজস্ব আয় অনেক বেড়েছে। এখন প্রতিমাসে রাজস্ব আয় হয় ২৫ থেকে ৩০ লাখ টাকা। এক বছর আগেও রাজস্ব আয় হতো ১৭ লাখ টাকা। টিকেট বিক্রির অর্থই মূলত এই রাজস্ব আয়।

চট্টগ্রাম চিড়িয়াখানায় দর্শকদের চাহিদা পূরণ করতে সম্প্রসারণ কাজ করার প্রক্রিয়াধীন আছে বলেও তিনি জানান।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Please disable your adblocker or whitelist this site!