বাজেরিগার পাখির কোষ্ঠকাঠিন্যঃ কোষ্ঠকাঠিন্য দেখা যায় প্রায় সব পাখিদের মধ্যে। বাজেরিগার পাখির হজম প্রক্রিয়ায় যখন সমস্যা সৃষ্টি হয় তখনই কোষ্ঠকাঠিন্য হয়ে থাকে।
লক্ষনঃ
পাখির মল ছোট আকৃতির ও শক্ত হবে, অনেক সময় পাখির মলত্যাগ করতে কষ্ট হয়, চোখে ঘুম আসে, মল শক্ত হয় বলে অনেক সময় পায়ু পথে লেগে থাকে বলে পায়ু পথ বন্ধ হয়ে যায় এর ফলে পাখি দুর্বল হয়ে পড়ে।
চিকিৎসাঃ
পাখিকে এই সময় ভিটামিন বি কমপ্লেক্স পানির সাথে মিশিয়ে খেতে দিতে হবে এবং প্রচুর শাক সবজি খেতে দিতে হবে, যতদিন ভালো না হয় ততদিন। পাখির মল যদি পায়ু পথে লেগে থাকে তাহলে হাল্কা গরম কুসুম জল দিয়ে এক টুকরা তুলা দিয়ে পায়ু পথ পরিস্কার করে দিয়ে ভ্যাসলিন বা ওলিভ ওয়েল লাগিয়ে দিতে হবে।
কৃমিনাশক প্রদান: পাখিকে ৩ মাস বয়সে প্রথম কৃমিনাশক ঔষধ প্রদান করতে হবে। এবং প্রতি ৩ মাস পরপর কৃমিনাশক ঔষধ প্রদান করতে হবে। রোগবালাই প্রতিরোধ ও প্রতিকার: বাজেরিগার পাখি বিভিন্ন ধরনের রোগ হয় যেমন: রানিক্ষেত, সালমোনেলসিস, কলেরা, টাইফয়েড, সিটাকোসিস, বিক এন্ড ফিদার রোগ ইত্যাদি। এই সমস্ত রোগ থেকে বাঁচার উপায় হলো খামারের ভাল পরিচর্যা করা। অসুস্থ হলে দ্রুত ভেটেরিনারিয়ানের কাছে নিয়ে যাওয়া। “করবো মোরা বাজেরিগার পালন, ভরবে আমার মন -প্রাণ, উন্নয়নের সোপান, হওরে যোয়ান আগুয়ান, আমরা আনবো আর্থিক উন্নয়ন।”
বাজেরিগার পাখির কেনকারঃ
এটি সাধারন কবুতর, ফ্রিঞ্চ, ক্যানারী, ককাটেল এর হয়ে থাকে, বাজরীগারে হওয়ার সম্ভবনা একটু কম। এই সময় রোগের কারন হচ্ছে মাইক্রোস্কোপিক প্রোটজয়া নামক জীবাণু।
লক্ষনঃ
এই রোগের লক্ষন পাখির শ্বাস প্রক্রিয়ার সাথে সংজুক্ত। এই রোগে আক্রান্ত পাখির বমি হয়, মুখ দিয়ে ফেনা বের হয়, পাখি দূর্বল হয়ে পড়ে, ওজন হ্রাস পায়, বেশির ভাগ সময় চোখ বন্ধ করে রাখে।
চিকিৎসাঃ
Metronidazole, রনিদাজল, এন্টিবায়োটিক খুবি কার্যক্রী ভূমিকা পালন করে।
বাজেরিগার পাখির চোখের প্রদাহঃ
এটি একটি সাধারন সমস্যা। প্রায় স পাখিরি এই সমস্যার স্মমুখীন হয়ে থাকে। সাধারন চোখে ঠান্ডা লাগ্লে বা জীবানু অথবা ব্যাকটেরিয়া দ্বারা আক্রান্ত হলে এই সমস্যার সৃষ্টি হয়।
লক্ষনঃ
চোখের স্বাভাবিক চুলকানি বেড়ে যায়, চোখে পানি চলে আসে, চোখ বন্ধ করে রাখে, অলসতা বৃদ্ধি পায়, চোখের উপরো ও নিচের পাতা ফুলে যায়, খাওয়া দাওয়ার প্রতি অনীহা, দুর্বলতা বৃদ্ধি পায় এবং ওজন হ্রাস পায়।
চিকিৎসাঃ
এই সময় পাখিকে Doxycyline-10% এ (চোখের ঠান্ডা দূর করার জন্য) এবং Riboflavin (B2) (চোখের চুলকানি ও জ্বালা যন্ত্রনা কমানোর জন্য) এবং দিতে হবে। এছাড়া পাখিকে রেনামাইসিন আই ওয়েনমেন্ট (যেকোন মানুষের ঔষধের দোকানে পাওয়া যায়) প্রথম তিনদিনে চারবার পরের দুই দিন ২ বার এবং পরের ২ দিন দিনে একবার করে আক্রান্ত চোখে লাগিয়ে দিতে হবে। অথবা সিপ্রোসিন আই ড্রপ (যেকোন মানুষের ঔষধের দোকানে পাওয়া যায়) ব্যবহার করা যায়। প্রথম ৩ দিন ৪ বার, পরের ২ দিন ২ বার, পরের ২ দিন ১ বার করে দিতে হবে।
বাজেরিগার পাখির ঠান্ডা লাগাঃ
পাখিদের ঠান্ডা লাগা একটি সাধারন রোগ সব পাখিরি ঠান্ডা লাগতেই পারে।
ঠান্ডা লাগার কারনঃ
হঠাৎ তাপমাত্রার পরিবর্তন হলে, হঠাৎ বৃষ্টি হলে, বাতাসের আদ্রতার প্রমান বেরে গেলে, মোল্টিং বা পালক বদলানোর সময় বা পাখিকে সারা বাতাসের স্পর্শে রাখলে।
লক্ষনঃ
পাখির ঠান্ডা লাগলে পাখি ক্রমাগত নাক দিয়ে আওয়াজ করতে থাকে ও মাথা নাড়াতে থাকে এবং খুব জোরে মাথা নাড়ানোর সাথে সাথে নাক দিয়ে জলের মত সর্দি বেরতে থাকে। যেহেতু এই সময় পাখির নাক বন্ধ হয়ে যায় সেজন্য মুখ দিয়ে শ্বাস নেয়। চোখের উপর ও নিচের পাতা হুলে যেতে পারে, চোখের ভিতর পানি চলে আসে, চোখের পাতা প্রায় বন্ধ হয়ে আসে। খাবার প্রতি পাখির আগ্রহ কমে যায়।
চিকিৎসাঃ
যে পাখির ঠান্ডা লেগেছে তাকে বাল্বের আলো দিয়ে আলাদা করে রাখতে হবে, জতক্ষন তার ঠান্দা লাগার উপসর্গগুলো দূর না হয় (তাপমাত্রা ২৫ ডিগ্রি সেলসিয়াসের জাতে কম না হয়)। পাখিকে হাল্কা কুসুম গরম পানিতে মাল্টিভিটামিন এবং মধু দেয়া যেতে পারে। এছাড়া কিছু এন্টিবায়টিক ঠান্ডার জন্য দেয়া যেতে পারে যেমন- Enrofloxacin, Doxycycline 10%, Ciprofloxacin এই এন্টিবায়টিক গুলোর যে কোন একটি হাল্কা কুসুম গরম পানির সাথে (প্রতি ১ লিটারে ১ গ্রাম) মিশিয়ে ব্যবহার করা যেতে পারে।
বাজেরিগারের রক্ত আমাশয়ঃ
রক্ত আমাশয় প্রটোজোয়া আইমেরিয়া নামক জীবানু দ্বারা সৃষ্ট। এই রোগের লক্ষন দেখতে অনেক টা ঠান্ডা লাগার মত দেখতে মনে হয়।
লক্ষনঃ
তরল মল যাওয়া, পাখি পশম ফুলিয়ে বসে থাকে, ওজন হ্রাস পায়, চুপচাপ বসে থাকা এবং কিছুক্ষন পরপর স্রীর ঝাকুনি দেয়, আঠালো দুর্গন্ধযুক্ত পাতলা পায়খানা, মলের সাথে রক্ত যায় এবং হঠাৎ মৃত্যু হোয়া, বেশিক্ষন খাচার নিচে এক কোনে বিশ্রাম নেয়া। এই সব লক্ষন রক্ত আমাশয়ের।
চিকিৎসাঃ
Trimethoprim, Cotrimvet sus pension, ESB 30%, Sulphadimidine এর যে কোন একটি এন্টিবায়টিক হালকা কুসুম গরম পানির সাথে (প্রতি ১ লিটারে ১ গ্রাম) মিশিয়ে দিতে হবে।
বাজেরিগার পাখির সাধারন ডায়রিয়াঃ
অনেক সময় বাজরীগার ডায়রিয়ার রোগে আক্রান্ত হয়। এই রোগের মূল কারন হচ্ছে পাখির অন্তনালীর রোগ জীবানু।
ডায়রিয়া কারনঃ
ডায়রিয়া সাধারন্ত পানির মধ্যমে, খাবারের মাধ্যমে, পাখির হজম প্রক্রিয়া ব্যাহত হলে এছাড়া কিছু পরজীবি কিছু জীবানু ও ব্যাক্টেরিয়া দ্বারা আক্রান্ত হলে এ রোগ ছড়াতে পারে।
লক্ষনঃ
এ রোগের কারনে আক্রান্ত পাখি অন্য পাখিদের তুলনায় একটু চুপচাপ থাকে এবং কিছুটা পশম ফুলিয়ে বসে থাকে। তবে এই অবস্থায় আরো অবনতি হলে পাখি তার শরীর ফুলিয়ে প্রায় গোল হয়ে যায় এবং প্রচুর পরিমানে পানি খায়, পায়খানার রঙ ধুসর খয়রি বা গাঁড় খয়রি, বাদামি এবং অবস্থার অবনতির সময় সবুজ বা হ্লুদ রঙ ধারন করে। পায়খানা থেকে খারাপ গন্ধ বের হয়। মলদ্বারের চারপাশের পালক ভেজা থাকে এবং ঐ জায়গায় গরম ও লাল হয়ে থাকে। অতিরিক্ত ডায়রিয়া হোয়ার হলে পাখির কিডনিতে সমস্যা হতে পারে।
চিকিৎসাঃ
ডায়রিয়ায় আক্রান্ত পাখিকে তৎক্ষণাৎ আলাদা করে দিয়ে সবুজ ও নরম খাদ্য বন্ধ করে দিতে হবে। খাচার ভিতর ৪০-৬০ ওয়ার্ট এর ১টি বাল্ব জালিয়ে দিতে হবে। পাখিকে লাল চা হালকা ঠান্ডা করে দিতে হবে। পাখি যদি সবুজ রঙের পায় খানা করে তখন ৫০ এম.এল চাএর সাথে ২ এম.এল আপেল সিডার ভিনেগার মিশিয়ে দিতে হবে এবং সাথে সাথে শুকনো খাবার দিতে হবে যেমন- চোনা, কাওন ইত্যাদি। এভাবে চালিয়ে জেতে হবে জত দিন ভাল না হয়। এছাড়া কিছু এন্টিবায়টিক ডায়রিয়ার জন্য খুবি কার্যকরী যেমন- Terramycin, ESB 30%, Teracycline, Oxytetracycline 20% উপ্রোক্ত এন্টিবায়টিক গুলোর যে কোন একটি ঠান্ডা ফুটানো পানির সাথে নির্দিষ্ট পরিমানে (প্রতি ১ লিটারে ১ গ্রাম) মিশিয়ে তার সাথে কিছু পরিমান স্যালাইন বা গ্লুকোজ মিশিয়ে ব্যবহার ফল আর বেশী ভাল হয়।