রিফাতের হত্যাকাণ্ডে জড়িত সন্ত্রাসীদের সঙ্গে আওয়ামী লীগের দুই নেতার ঘনিষ্ঠতার বিষয়টি এখন বরগুনার মানুষের মুখে মুখে। এই দুই নেতার একজন হলেন স্থানীয় সাংসদের ছেলে। আরেকজন জেলা পরিষদের চেয়ারম্যান।
রিফাতের খুনিদের গ্রেপ্তার ও শাস্তির দাবিতে গতকাল শনিবারও বরগুনাসহ দেশের বিভিন্ন স্থানে মানববন্ধন হয়েছে। এসব মানববন্ধনে বিভিন্ন শ্রেণি–পেশার মানুষ অংশ নেয়।
বরগুনায় ক্ষমতাসীন দলের একাধিক নেতা বলেছেন, হত্যাকাণ্ডে জড়িত প্রধান তিন আসামির দুজন রিফাত ফরাজী ও তাঁর ভাই রিশান ফরাজী বরগুনা জেলা পরিষদ চেয়ারম্যান দেলোয়ার হোসেনের আপন ভায়রার ছেলে। আরেক আসামি সাব্বির জেলা আওয়ামী লীগের বিজ্ঞান ও প্রযুক্তিবিষয়ক সম্পাদক সুনাম দেবনাথের ঘনিষ্ঠজন বলে পরিচিত। সুনাম দেবনাথ বরগুনা সদর আসনের সাংসদ ধীরেন্দ্র দেবনাথ শম্ভুর ছেলে।
জেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক জাহাঙ্গীর কবির বলেন, ‘কে কাকে শেল্টার দেয়, সেটা আপনারা খুঁজে বের করেন। আমরা এই ঘটনার দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি চাই।’
দেলোয়ার হোসেন জেলা আওয়ামী লীগের সাবেক সহসভাপতি। তিনি দলীয় মনোনয়নে জেলা পরিষদের চেয়ারম্যান হয়েছেন। দেলোয়ার হোসেন বলেছেন, রিফাত ফরাজী ও রিশান ফরাজী আত্মীয় হলেও দুই বছর ধরে ওই পরিবারের সঙ্গে তাঁর কোনো সম্পর্ক নেই। আর সুনাম দেবনাথ বলেন, সাব্বিরের সঙ্গে তাঁর কোনো ধরনের সখ্য ছিল না। একটি মহল তাঁর বিরুদ্ধে অপপ্রচার করছে।
অবশ্য সাব্বিরের সঙ্গে সুনাম দেবনাথের সখ্যের বিষয়টি নিয়ে আলোচনা নতুন নয়। গত বছরের ২৮ এপ্রিল জেলা ছাত্রলীগের সভাপতি জুবায়ের আদনান ও সাধারণ সম্পাদক তানভীর হোসাইন বরগুনা প্রেসক্লাবে এক সংবাদ সম্মেলনে লিখিত বক্তৃতায় অভিযোগ করেছিলেন, মাদক ব্যবসায়ী ও সন্ত্রাসী সাব্বির সুনাম দেবনাথের সহযোগী। ২০১৭ সালে ১২ লাখ টাকার হেরোইনসহ সাব্বির পুলিশের হাতে গ্রেপ্তার হয়েছিলেন। ওই মামলায় সুনাম দেবনাথের সহযোগিতায় সাব্বির আদালত থেকে জামিনে মুক্তি পান। ওই সংবাদ সম্মেলনে সুনাম দেবনাথের এক আত্মীয়, আরেক সন্ত্রাসী ও মাদক ব্যবসায়ী অভিজিত তালুকদারের বিরুদ্ধেও অভিযোগ করা হয়েছিল।
যদিও ছাত্রলীগের ওই অভিযোগের বিরুদ্ধে পরদিন ২৯ এপ্রিল পাল্টা সংবাদ সম্মেলন করেছিলেন সুনাম দেবনাথ। তিনি দাবি করেছিলেন, তাঁর বিরুদ্ধে করা সব অভিযোগই বানোয়াট।
জানতে চাইলে জেলা ছাত্রলীগের সভাপতি জুবায়ের আদনান বলেন, ‘এক বছর আগে আমি সংবাদ সম্মেলন করে সাব্বিরের এসব অপকীর্তি তুলে ধরেছিলাম। তখন ব্যবস্থা নিলে এ ঘটনা ঘটত না।’
রিফাত শরীফকে খুনের যে ভিডিওটি সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে এসেছে, তাতে দেখা গেছে, তাঁর স্ত্রী আয়শা সিদ্দিকা ঘাতকদের নিবৃত্ত করার প্রাণপণ চেষ্টা করছেন। কিন্তু ফেসবুকে এই হত্যাকাণ্ডে আয়শা সিদ্দিকাকে দোষারোপ করে নানা পোস্ট করা হচ্ছে। স্থানীয় বেসরকারি সংস্থা জাগো নারীর প্রধান নির্বাহী হোসনে আরা মনে করেন, খুনের ঘটনার পেছনে যাঁরা আছেন, তাঁদের আড়াল করতেই এসব অপপ্রচার করা হচ্ছে।
ফেসবুকে কারা অপপ্রচারে নেমেছে, তাদের চিহ্নিত করা হয়েছে কি না জানতে চাইলে রিফাত হত্যা মামলার তদন্ত কর্মকর্তা বরগুনা সদর থানার পরিদর্শক (তদন্ত) হুমায়ুন কবির বলেন, আসামিদের গ্রেপ্তার এখন তাদের প্রথম অগ্রাধিকার। তবে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমের আলোচনাও তাঁদের নজরে এসেছে। তাঁরা পর্যবেক্ষণ করছেন।
রিফাত শরীফের খুনিদের গ্রেপ্তার ও দ্রুত বিচারের দাবিতে গতকাল বরগুনা প্রেসক্লাবের সামনে মানববন্ধনে সর্বস্তরের মানুষ অংশ নেয়। মানববন্ধনে বক্তব্য দেন নিহত রিফাত শরীফের বাবা আবদুল আলীম দুলাল শরীফ। অন্যান্যের মধ্যে আরও বক্তব্য দেন বরগুনা জেলা আওয়ামী লীগের সাংগঠনিক সম্পাদক রইসুল আলম ও উপজেলা সভাপতি সিদ্দিকুর রহমান, যুবলীগের সভাপতি কামরুল আহসান মহারাজ, জেলা আওয়ামী লীগের তথ্য ও গবেষণা সম্পাদক সুনাম দেবনাথ, জেলা ছাত্রলীগের সভাপতি যুবায়ের আদনান প্রমুখ।