ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ফিন্যান্স বিভাগের শিক্ষার্থী ফিরোজ কবীর স্বাধীনকে রাজধানীর স্কয়ার হাসপাতালে ভর্তির পর ২২ ঘণ্টারও কম সময়ে বিল এসেছে ১ লাখ ৮৬ হাজার ৪৭৪ টাকা। এত কম সময়ে কী করে এত টাকা বিল হলো, তা নিয়ে বিস্ময় প্রকাশ করেছেন ফিরোজের পরিবারসহ তার সহপাঠীরা। বিল নিয়ে কথা বলতে গেলে কয়েক জায়গায় ঘুরিয়েও কোনও তথ্য দিতে পারেনি স্কয়ার হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ।
ফিরোজের বড় ভাই মো. ফজলুল করীম বিস্ময় প্রকাশ করে বলেন, ‘কেবল কয়েক ঘণ্টার ব্যাপার, ১ দিনও পার হয়নি। এর ভেতরে কী করে এত টাকা খরচ হলো, সেটাই আমরা বুঝতে পারছি না।’ হাসপাতালগুলো রোগীদের অসহায়ত্ব নিয়ে ব্যবসা করছে বলে অভিযোগ করেন তিনি।
শনিবার (২৭ জুলাই) বিকাল পৌনে ৫টার দিকে যখন এই প্রতিবেদকের সঙ্গে ফজলুল করীমের কথা হয়, তিনি ছোট ভাইকে নিয়ে ফিরোজের জানাজার নামাজে অংশ নিতে যাচ্ছিলেন। তিনি বিস্ময় প্রকাশ করে বলেন, ‘আমরা খুবই বিস্মিত এবং দ্বিধান্বিত। কাকে বলবো, কোথায় বলবো, কিছুই বুঝতে পারছি না!’
শুক্রবার (২৬ জুলাই) স্কয়ার হাসপাতালে চিকিৎসাধীন অবস্থায় রাত ১০টার দিকে মারা যান ফিরোজ। এর আগের দিন বৃহস্পতিবার (২৫ জুলাই) রাতে তাকে ঢাকা মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতাল থেকে স্কয়ারে আনা হয়েছিল।
ফজলুল করীম বলেন, তারা দুই ভাই, দুই বোন। তিনি সবার বড়। মাঝে দুই বোনের পরে সবার ছোট ছিল ফিরোজ। ‘ছোট ভাইকে খুব আশা নিয়ে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়তে পাঠিয়েছিলাম। কিন্তু সেই ভাইটা মারা গেলো বড় ভাই-বোনদের রেখে। এ শোক আমাদের কাটবার নয়।’
ফিরোজ কবীর স্বাধীনের হাসপাতালের বিল থেকে দেখা যায়, ওষুধ বাবদ ধরা হয়েছে ৩২ হাজার ৩২১ টাকা ৫১ পয়সা, ল্যাবরেটরি চার্জ ৭৩ হাজার ৮৩৬ টাকা, মেডিক্যাল হসপিটাল সাপ্লাইতে বিল হয়েছে ১০ হাজার ২১৯ টাকা এবং বাকি টাকা অন্যান্য কয়েকটি খাতে ধরা হয়েছে।
ফিরোজের দুলাভাই হুমায়ুন কবীর বলেন, ‘২০ থেকে ২১ ঘণ্টা ছিল সে সেখানে (স্কয়ার হাসপাতাল), এর ভেতরে এত টাকা কী করে হলো, সেটাই আমরা বুঝতে পারছি না। যদিও তারা প্রথমে আমাদের বলেছিল, আইসিইউতে বিল আসতে পারে ৬০ থেকে ৭০ হাজার টাকার মতো। সেই হিসাবে আমরা প্রথমেই ডিপোজিট করেছিলাম ৫৭ হাজার টাকা। কিন্তু এত টাকা বিলের হিসাব আমরা এখন মেলাতে পারছি না।’
ফিরোজের সহপাঠী মো. শরিফুল ইসলাম বলেন, ‘এত টাকা বিল কী করে হলো, সেটা আপনারা সাংবাদিকরা বের করেন। খুব বেশি ওষুধ ওকে দেওয়া হয়নি বলেই পরে দেখেছি। তাদের সব বিল হয়েছে সার্ভিস চার্জের নামে, আর এক্সেসিভলি চার্জ করেছে তারা। ২৪ ঘণ্টারও কম সময়ে কী এমন ওষুধ আর চিকিৎসা তাকে দেওয়া হয়েছে, সেটাও আমরা জানতে চাই।’
বিলের বিষয়ে জানতে চাইলে স্কয়ার হাসপাতালের রিসিপশনে (অভ্যর্থনা ডেস্ক) গিয়ে কথা বলতে চাইলে তারা বলেন, এ বিষয়ে তারা বলতে পারবেন না, তৃতীয় তলায় গিয়ে বিলিং সেকশনে কথা বলতে হবে। সে অনুযায়ী বিলিং সেকশনে গিয়ে কথা বলতে চাইলে তারা প্রথমে বলেন, তারা তো হাসপাতাল থেকে কোনও ডকুমেন্টস দেবেন না।
ডকুমেন্টস লাগবে না, কী করে এত টাকা বিল হলো সেটা জানতে এসেছি বলা হলে এক কর্মকর্তা বলেন, ‘বিলের ব্যাপারটা আমরা দেখি না, এটা রিসিপশনের কাজ।’
সেখান থেকে আবার রিসিপশনে ফেরত পাঠানো হলে তারা এই প্রতিবেদককে আবার নার্স ম্যানেজার শেফালী সাহার কাছে যেতে বলেন। প্রতিবেদকের খাতায় লেখা বিলের টাকার হিসাব দেখে তিনি বলেন, ‘আপনার খাতার লিখিত ডকুমেন্টস তো আমি দেখবো না।’ পরে তাকে স্কয়ার হাসপাতালের বিলের কপি দেখালে তিনি বলেন, ‘আমি এ বিষয়ে আপনাকে কিছু বলতে পারবো না।’
সূত্র: বাংলা ট্রিবিউন